পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/১৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বর্ণলতা : ১৪৪ না। মৎস্য ধরিতে বসিলে লোকে ছোটগালিকে পুনরায় জলে ছাড়িয়া দেয়। শশাংক অতিশয় নিষ্ঠুর হইলেও সরল-হৃদয়া বণ’লতার কথায় তাঁহার অন্তঃকরণ দমিয়া গেল। একবার আত্মগ্লানিও উপস্থিত হইল । সবণের চক্ষের জল যেন উত্তপ্ত দ্রবীভত লৌহবিন্দর ন্যায় শশাঙ্কের হৃদয়কে পীড়িত করিতে লাগিল । কিন্তু মরুভমিতে সিঞ্চিত বারি কত ক্ষণ থাকে ? সবণলতা তথা হইতে চলিয়া গেলেই আবার যে শশাঙ্ক, সেই শশাংকই হইলেন । রজতের মোহিনী শক্তির দ্বারা আকৃষ্ট হইয়া তিনি হরিদাসের বাটী গমন করিলেন। দেখিলেন, হরিদাস বসিয়া লেখাপড়া করিতেছেন । শশাঙ্কশেখর কহিলেন, “কি মহাশয়, বিদ্যাভ্যাসে মনোনিবেশ করেছেন না কি ?” হরিদাস কহিলেন, “আসনে ; আমি জমাখরচটা লিখে রাখছিলাম।” শশাংক কহিলেন, “শুভস্য শীঘ্ৰং । এদিকে আর সময় নাই । আর এক সপ্তাহ দেরি করলে সব অভিসন্ধিই মিথ্যা হবে ।” হরিদাস কহিলেন, “আমার কোন দেরি নাই । কিন্ত তোমার ধনভােগ পণ দেখে আমি অগ্রসর হতে পারছি না। উইলের অন্ধেক টাকা আমার দেবার শক্তি নাই ।” শশাংক দেখিলেন, দেরি করিলে কিছুই পাওয়া যাইবে না। অতএব যা হাতে আইসে, সেই ভাল। এই ভাবিয়া কহিলেন, “তবে তুমি কি দিতে ইচ্ছা কর ?” হরিদাস । আমি ছয় হাজার দিতে চাই । শশাংক তাহাতেই সম্মত হইলেন ; কহিলেন, "তবে পাত্রের গায়ে হলদ দাও, পরশব দিবস শুভ কম সম্পন্ন করা যাইবেক ।” যেমন বিহংগম ব্যাধবিন্যস্ত জালের মধ্যে নিঃশঙ্কচিত্তে নত্য করিয়া বেড়ায়, সবণলতা তেমনি প্রফলচিত্তে শশাকের বাটীতে বাস করেন। হেম প্রত্যহ আরোগ্য হইতেছেন ; তাঁহার সেবাশ্যশ্রষার কোন ত্রটি হইতেছে না, সবণের আর ভাবনা কি ? প্রাতঃকালে গাত্ৰোখান করিয়া গরকেন্যা ও প্রতিবাসী সমবয়স্ক বালিকাদিগের সহিত আমোদ-প্রমোদ করিতে আরম্ভ করেন। নানাহারের পর পান ভোজন করিয়া রাত্রে প্রফলচিত্তে নিদ্রা যান। তিনি যে “আনায় মাঝারে” নিপতিত হইয়াছেন, তাহা স্বপ্নেও জানিতেন না । সন্ধ্যা হইল। শশাংক গংগাতীরে নিত্যসায়ংক্রিয়া সমাধা করিতে গেলেন । শশাঙ্কের একটি ছোট ছেলে অত্যন্ত রোদন করিতেছে। বর্ণলতা কাছে না বাসলে সে বিছানায় শইবে না। শশাকের শী বিস্তর চেষ্টা করিয়া তাহাকে শয়ন করাইতে না পারিয়া সবণকে ডাকিলেন । সবণ দৌড়িয়া গিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, মা, আমাকে ডাকলে কেন ?" শশাঙ্কের সন্ত্রী গরপত্নী ; সবণ তাঁহাকে মাতৃসম্বোধন করেন । শশাকের সত্ৰী কহিলেন, "মা, এস দেখি একবার ; এ ছেলেটার কাছে ব'সো, একে ত আমি বিছানায় শোয়াতে পারি না ।” বললতা নিকটে গেলে ছেলেটি আর দ্বিতীয় কথা না কহিয়া শয়ন করিল।