পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/১৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বর্ণলতা : ১৪৬ ষে ঘরে ছিলেন, পুনরায় সেই ঘরে আসিলেন। শশাঙ্কের সত্ৰী বৰ্ণলতাকে দেখিয়া ডরাইয়া উঠিলেন । তাঁহার মাত্তি এতই পরিবর্তন হইয়াছে। সবণলতা অবশেদিয়ের মতন হইয়া ঘরের মেজেয় বসিলেন। শশাঙ্কের সত্ৰী দুঃখিত হইয়া জিজ্ঞাসিলেন, “কি মা, কি হয়েছে ?” $ সবণ" আর মনের ভাব গোপন করিয়া রাখতে পারিলেন না । রোদন করিতে করিতে কহিলেন, “আমি সকলি শুনেছি। আমার তোমরা মেরে ফ্যালো। বিষ খাওয়ায়ে দাও ।” সবণের কথা শুনিয়া শশাঙ্কের সন্ত্রী অন্তঃকরণ দ্রব হইয়া গেল । ফলতঃ তিনি তাঁহার স্বামীর ন্যায় নিদায় ছিলেন না । শয্যা হইতে উঠিয়া সবণের নিকট উপবেশনপবেক সবণকে সাত্বনা করিয়া কহিলেন, “তুমি কে’দ না মা, আমি তোমার উদ্ধারের উপায় ক’রে দেব ।” শশাঙ্কের মন্ত্রীর কথা শুনিয়া প্ৰবণ অমনি তাঁহার পা ধরিয়া শুইয়া পড়িলেন। তিনি সবণকে সাদরে ভুমি হইতে তুলিয়া চক্ষ মছাইয়া দিলেন । কহিলেন, “মা, তুমি ত লেখাপড়া জান ?" সবণ কহিলেন, “একট একটা জানি ।” “পত্র লিখতে পারবে ত?" “পারবো ; কিন্তু কাকে লিখবো ? দাদার বিছানা হ’তে উঠিবার জো নাই । তাঁহাকে লেখাও যে, না-লেখাও সেই ।” আর কোন লোক নাই ? যাকে লিখলে তোমাকে নিয়ে যেতে পারে।” এই কথা শুনিয়া সবণের মখ ঈষৎ আরক্তিম হইল। মাটির দিকে দটি করিয়া কহিলেন, "আর কাকেই বা লিখবো ।” “এই যে শুনেছি, তোমাদের বাসায় আর একটি কে থাকে ? কি না তার নামটা ? গোপাল । হাঁ হাঁ, গোপালকে লেখ না কেন ?” স্বণের মখে আরও লাল হইল । তিনি কহিলেন, "না, দাদাকেই লিখি, তা হ’লে তিনি দেখতে পাবেন।” “তোমার দাদাকে লেখায় লাভ কি ? তিনি ত শয্যাগত ।” সবণলতা মাটির দিকে মুখ করিয়া কহিলেন, "দাদাকে লিখলে গোপাল দাদা দেখতে পাবেন ।” শশাঙ্কের সত্ৰী কালি কলম কাগজ আনিয়া দিলেন । সবণলতা চিঠি লিখিলেন । পরদিবস প্রাতে যখন শশাঙ্কের দাসী বাজার করিতে যায়, চিঠিখনি গোপনে লইয়া গিয়া ডাকঘরে দিয়া আসিল ।