চত্বারিংশ পরিচ্ছেদ : ১৫১ শশাঙ্কের ভাব ও মাত্তি দেখিয়া সবণ’লতার লজ্জা পলায়ন করিল। রোষে কম্পিতকলেবরা হইয়া জিজ্ঞাসিলেন, “আমার বিবাহ কে দেবে ? কোথায় হবে ?" শশাঙ্ক পৰবিং হাসিয়া কহিল, "তোমার বাপ বেচে থাকলে তিনিই দিতেন, তাঁর অবত্তমানে আমিই দেবো, যেখানে বিবাহ হবে, তা তুমি জান, সে দিন রাত্রে সব শনেছ।" সবণের শরীর রাগে ও ভয়ে কল্পিত হইতে লাগিল । তিনি কপটনিদ্রিত ছিলেন, এ কথা শশাঙ্ক কি প্রকারে জানিতে পারিল ? কোনও বিদ্যাবলে কি মনের ভাব গণনা করিয়া স্থির করিতে পারে ? মবণ কহিলেন, “তুমি পরম হিতকারী গরষ্ঠাকরই বটে!". শশাঙ্ক উত্তর করিল, “পরের হিত না করি, নিজের হিত ত করি।" একটা পরে আবার কহিল, “পরেরই বা হিত কিসে না করলাম । যে বিবাহের সম্মবন্ধ করেছি, তাতে তোমার বাপেরও মত ছিল।" সবণ সরোষে কহিলেন, "কখনও না ।" শশাঙ্ক আবার বিকট হাস্য হাসিয়া কহিল, "আচ্ছা, তাঁর না ছিল, আমার আছে ।” সবণ কহিলেন, "তোমার মত থাকল, আর না-থাকলে, তাতে কা’র বয়ে গেল ? যার বে, তার মত নাই ।” শশাঙ্ক । তারও আছে ৷ পাত্রের মত সৰবাগ্নে হয়েছে । সবণ | পাত্রের মত হ’ল, আর না হ’ল, তাতে আমার কি ? আমার মত নাই । "ঐ ত তোমাদের দোষ !" শশাঙ্ক আরম্ভ করিলেন, “কি দু-পাতা পড়ো আর শোন ; সেই পড়ার জোরেই একবারে এত আত্মবিস্মত হও যে, লজ্জা সরম থাকে না, হিতাহিত জ্ঞান থাকে না । তোমার ভালর তরে বলছি, গোলমাল ক’রো না । শাভ কমে গোলমাল করা ভাল নয় ।" শশাংক এই বলিয়া তথা হইতে যাইবার উদ্যোগ করিতে লাগিল । সবণ কহিলেন, “তুমি কোথায় যাও ? কাল অবধি আমাকে চাবি বন্ধ ক’রে রেখেছ, আমাকে ছেড়ে দিয়ে যাও । আমি এখনই কলিকাতায় যাব |" শশাঙ্ক । আজ না । বিবাহের পর কলিকাতায় যেও । সবণ গহের দরজার নিকট অগ্রসর হইয়া কহিলেন, “আমি এইখানে খন হ’ল ব’লে চে'চাই, রাস্তার লোক শনে দয়ার ভেঙ্গে বাটীর মধ্যে আসবে।" সবণ” এই বলিয়া যেমন বাহির হইবেন, শশাঙ্ক তাহার হস্ত ধরিয়া ঘরের দিকে টানিতে লাগিল। সবণ দু-এক বার বাহিরের দিকে টানিলেন, কিন্তু তাঁহার সাধ্য কি যে, শশাঙ্কের সহিত জোরে পারেন ? গরদেব তাঁহাকে গহমধ্যে রাখিয়া বাহিরে দাঁড়াইয়া দরজায় চাবি বন্ধ করিল। সবণ উচ্চৈঃস্বরে রোদন করিতে লাগিল । শশাংক কহিল, “এখন তোমার যত খুশী কাঁদ।" এই বলিয়া আবার একবার বিকট হাস্য হাসিয়া তথা হইতে চলিয়া গেল ।