পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/১৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বর্ণলতা : ১৫৮ জমিজমা আছে, বাটী থাকলো, তোমাদের স্বচ্ছদে চলবে। আর এই টাকা দিলে আমিও নিম্প্রকৃতি পাব।" প্রমদা অবনত-বদন হইয়া রহিলেন। তদশনে শশিভূষণ কহিলেন, “শীঘ্র দাও—লোক এসে বসে আছে । দেরি হ'লে পর দেওয়া না-দেওয়া সমান হবে।" প্রমদা তথাপি কথা কহিলেন না। তখন শশিভূষণ একটু রাগত হইয়া কহিলেন, “দেবে কি না বলো ?” শশিভূষণকে রাগত দেখিয়া প্রমদার কথা কহিবার অবকাশ হইল । কহিলেন, “আমন জোর কর যদি, তবে দেবো না ।" শশিভূষণ পুনরায় কাতর স্বরে কহিলেন, “আমার অপরাধ হয়েছে, এখন দাও।” প্রমদা কাঁদিতে কাঁদিতে কহিলেন, "তোমাদের মতন কঠিন লোক আর নাই । কস্তক দিন তোমার ভায়া জালাতন করলেন, এখন তিনি গেলেন, তুমি লাগলে, আমার কপালে আর সুখ হ’ল না । বাবা কেনই বা আমাকে এমন জায়গায় বিয়ে দিলেন ?" প্রমদা আর কথা কহিতে পারিলেন না । অনতি-উচ্চৈঃস্বরে রোদন করিতে লাগিলেন । শশিভাষণের শিরে বজ্ৰাঘাত হইল। চাপ করিয়া শনিতে লাগিলেন। একটু পরে প্রমদা চক্ষ মাছিয়া কহিলেন, “তুমি ত চললে, রাঁড়ের কি ক’রে গেলে ?” শশিভূষণ কহিলেন, "আমাকে তুমিই ভাসালে । তুমি টাকা দিলে আর আমার বিপদ থাকে না।" প্রমদা ফেসি ফোঁস করিয়া নিশ্বাস ছাড়িতে লাগিলেন । নীচে থেকে রামসন্দের বাব ডাকিতেছেন, "শশী বাব আসন, বেলা হ’ল ।" শশী উচ্চৈঃস্বরে “এই যাই" বলিয়া প্রমদার পদযুগল ধরিয়া রোদন করিতে করিতে কহিলেন, "প্রমদা, আমাকে রক্ষা কর । তুমি না রক্ষা করলে আমি আর রক্ষা পাই নে। প্রমদা, তোমার পায়ে পড়ি, রক্ষা কর।” প্রমদাকে যেন কে কতই প্রহার করিতেছে, এইরুপ করিয়া রোদন করিয়া উঠিলেন,-“বাবা আমার বনেও জানতেন না, আমার এমন দরোদেটি হবে। আমার জীবনটা দুঃখে দুঃখেই গেল। আমাকে কেন এখানে বিয়ে দিলেন ?” প্রমদার কান্না শনিয়া প্রমদার জননী দৌড়িয়া আসিলেন এবং প্রমদার শেষ কথাটা শুনিতে পাইয়া তাহারই উপর দ্বিতীয় মল্লিনাথের ন্যায় টীকা করিতে আরম্ভ করিলেন । কাঁদিতে কাঁদিতে কহিলেন, “আমি তখনই তোমার বাপকে বলেছিলাম, এ কাজে সাখ হবে না। তোমার বাপ আমার কথা মা শনে বাছা তোমাকে এখানে বিয়ে দিলেন। আমাকে গালি দিওঁ না বাছা। ও রে গদাধরচন্দ্র, তুই এখন কোথায় ?" প্রমদা ও প্রমদার মা, ঝড় আর আগন একত্র হইয়া শশিভূষণের সবনাশ করিতে বসিলেন । রামসন্দর বাব বৈঠকখানা হইতে কহিলেন, "শশী বাব সত্বর আসন, নইলে