পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বর্ণলতা : ১৬ সরলা ভামিকা শনিয়া আরও ভাঁতা হইলেন । ঠাকরণদিদির উপমা শেষ না হইতে হইতেই কহিলেন, “সে সব তুলনায় আর কাজ কি ? তোমাকে যা বলতে বলেছেন, তাই বল, তোমার কথার বাঁদনি শুনে আমার প্রাণ চমকে যাচ্ছে ।" ঠা । কতকটা চমকোবার কথাই বটে । তা যেখানে বলতে হবে, একেবারে ব’লে ফেলাই ভাল। প্রমদা বললেন কি, একত্র থাকলে ক্ৰমাগত বিবাদ বিসবাদ হয়। অতএব এ ঝগড়া বিবাদে কাজ কি ? আজ অবধি তুমিও পথিক হয়ে খাও, আর তিনিও পথিক হউন। আমার কি ভাই, আমি বলে খালাস । কথা শুনিয়া সরলার মাথায় যেন বজাঘাত হইল । যে ভয়ে তিনি কখন মুখ তুলিয়া প্রমদার নিকট কথা কহেন নাই, যে ভয়ে তিনি এত সহ্য করিয়া আসিয়াছেন, হঠাৎ সেই বিপদ উপস্থিত । বিধভাষণও বাটী নাই । এ ঝগড়ার বিন্দবিসগও তিনি জানেন না ; হয় ত তিনি সমুদয় দোষ সরলারই মনে করিবেন । কিয়ৎক্ষণ অধোবদনে থাকিয়া সরলা সজল নয়নে কাতর সবরে জিজ্ঞাসা করিলেন, “ঠাকুরও কি এই কথা বললেন ?" ঠাকরণদিদি একটি কৃত্রিম দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করিয়া কহিলেন, “শিব কি কখন শক্তি ছাড়া থাকেন !" ঠাকরণদিদির এই পৌরাণিক শাস্ত্রসম্বলিত উত্তর শনিয়া এত দুঃখেও সরলার মুখে হাস আসিল । কিন্তু অবিলবেই সে হাসি সম্বরণ করিয়া সকরণ সবরে জিজ্ঞাসা করিলেন, "ঠাকরণদিদি, এখন উপায় কি ?" ঠা । উপায়ের কথা আমি কি বলব, সে তুমিই জান । শশীভুষণ আমাকে বললেন, “ঠাকরণদিদি, আজ তুমি চারিটি ভাত ন দিলে আমায় অনাহারে থাকতে হয়, ওর ব্যাম, ও ত কোন কম করতে পারবে না, কাল লাগাত অন্য কোন একটা সুবিধা করবে।” তাই আমি আজ চারটি রোধে দিয়া যাব । আমার কি ভাই, আমাকে তুমি ডাকলেও আসতে হবে, আর তিনি ডাকলেও আসতে হবে । - ঠাকরণদিদি এই কথা বলিয়া রন্ধনশালায় গমন করিলেন, সরলাও আপনার ঘরে গেলেন । কিয়ৎক্ষণ পরে শশিভাষণ বাহির হইয়া যাইবার সময় ঠাকরণদিদিকে সম্বোধন করিয়া কহিলেন, “ঠাকর, দিদি, ওদের রান্না আজকার মতন ঐ গোয়ালের পাশে হোক, তার পর কাল একথা, ঘর ঠিক ক’রে দেওয়া যাবে।" বিধুভুষণ পর্বদিবস আহারান্তে পাড়ায় গিয়া শুনিলেন, মুখ জ্যেদের বাড়ী যাত্রা হইবেক, আর তাঁহাকে পায় কে ? শনিবা মাত্রই তিনি মখোজ্যেদের বাড়ী গিয়া উপস্থিত হইলেন এবং যাত্রা সম্বন্ধীর বন্দোবস্ত করিলেন । কখন ফরাস তদারক করিতেছেন, কখন সকলে আসিয়া কোথায় বসিবে, তাহার উদযোগ করিতেছেন । কখন এর কানে কানে কথা কহিতেছেন, কখন আর একজনের সহিত পরামর্শ করিতেছেন—অথাৎ যেন তিনিই বাড়ীর কত্তা । ক্ৰমে যত সন্ধ্যা সমাগত