পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বর্ণলতা : ৪০ হেম কহিল, “তাতে দোষ কি ? এখন সকল মেয়েই লেখাপড়া করে । কলিকাতায় কত সকল হয়েছে, সেখানে কেবল মেয়েরাষ্ট পড়ে ।” বিপ্রদাস কহিলেন, “আচ্ছা বাপ, তোমার যা ইচ্ছে তাই কর । কিন্ত তমি ক'দিনই বা বাড়ী থাকবে । তুমি কলিকাতায় গেলে তখন কে শেখাবে ?" হেম । সবণ* তখন আপনিই শিখতে পারবে । এই তিন চার দিনের মধ্যেই ক খ লিখতে শিখেছে । আমি কলিকাতায় যাবার আগে ওর ফলা বানান শেষ হবে । বিপ্র । বটে ? আমার লক্ষী যে মা-সরস্বতী হয়েছেন । ( ক্লোড়থিত সবণের প্রতি ) বণ মা, তুমি আমার মা-লক্ষী হবে, না মা-সরস্বতী হবে ? সবণ । আমি দ-ই হব বাবা । - - বিপ্রদাস সস্নেহ নয়নে সবণলতার প্রতি ক্ষণেক একদণ্টে চাহিয়া রহিলেন । চক্ষ হইতে দুই এক বিন্দ প্রেম-অশ্রপাত হইল। পরে শির চবেন করিয়া সবণ’লতাকে ভীমে নামাইয়া দিয়া কহিলেন, “আচছা যাও, তোমার দাদার কাছে গিয়া লেখাপড়া শিখ।” । 锦 হেম সবণের হাত ধরিয়া লইয়া, যে গহে তাহাকে শিখাইতেছিলেন, সেই গহে প্রবেশ করিলেন । বিপ্রদাস বহির্গবারে আসিলেন । পজা সমাগত হইল । মহোৎসবে তিন দিবস অতিবাহিত হইয়া গেল । যতই কেন আমোদ হউক না, যতই কেন গোলযোগ হউক না, বিপ্রদাস এক মহত্তের জন্যেও হেম ও বণ’লতার নাম বিস্মত হন না । পুজার পর সকল খোলা হইলেই হেম পনবার কলিকাতায় গেলেন । সবণ যথার্থই অতি অলপ দিনের মধ্যে ফলা বানান শেষ করিল । হেম কহিয়া গেলেন, “সবণ, আমি কলিকাতায় গিয়াই তোমার জন্য একখানা বই পাঠাইয়া দিব । আর যদি তুমি আমাকে চিঠি লিখতে পার, তবে চৈত্র মাসে যখন বাড়ী আসবো, তোমার জন্যে দিবি একটি খোঁপার ফল আনবো ।” সবণ সহাস্য বদনে কহিলেন, “এই কথা ত দাদা ! যেন মনে থাকে ” হেম । তা থাকবে । দ্বাদশ পরিচ্ছেদ প্রমদা গৃহকার্যোর সদুপায় উদ্ভাবন করিয়াছেন : শশিভূষণের সে জন্য ভাবনা নাই বিধুভুষণকে পথক করিয়া দিয়া প্রমদা তিন চারি দিবস বিনা কলহে অতিবাহিত করিলেন । কিন্তু যেমন অংগারের মলিনত্ব শত শত বার ধৌত করিলেও যায় না, তেমনি স্বভাব কখন পরিবত্তন হয় না। প্রমদা ঠাকরণদিদির সহিত কলহ করিতে আরম্ভ করিলেন । ঠাকরণদিদির প্রতি নানাবিধ দোষারোপ করিতে লাগিলেন।