পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বাদশ পরিচ্ছেদ : ৪৩ করিলেন, “বিপিন কোথায় গেল ? কামিনীই বা কোথায় ?” প্রমদা উত্তর করিলেন, “বিপিন তার মামার বাড়ী গিয়াছে । কামিনী ঐ শয়ে আছে।” - শ। শয়ে আছে ? রাত্রে কিছু খাবে না ? প্র । কি খাবে ? কে রাঁধবে ? শ। আর কেউ না রাঁধে, আমিই রাঁধরে । সব গোছান গাছান আছে ত ? প্র । গোছান গাছান আর কি ? ও-বেলার সবই আছে, চারটি ভাত হ’লেই হয় । প্রমদা কিঞ্চিৎ পরে “উঃ, আজ আমার অসুখটা কিছু বেড়েছে" এই বলিয়া শয়ন করিলেন । শশিভযেণ রান্নাঘরে গিয়া তন্ত্রত্য দারগগিরি কায্যে নিযুক্ত হইলেন । দস্তরমত প্রমদার ভাত-থালাটি ঘরে তাসল । বারবার ডাকাডাকির পর প্রমদা মুখ বাঁকা করিয়া গিয়া আহার করিতে বসিলেন । শশিভীষণ মনে করিতে লাগিলেন, ইহাতেও যদি মন না পাই, তবে আর কিসে পাব ? এই ভাবিয়া তিনি মৌনাবলম্বন করিয়া রহিলেন । প্রমদার আহার হইল । অসুখ বাড়িয়াছে বলিয়া যে এক দানা কম খাইলেন, তাহা নয় । রোজই যে পরিমাণে থাইতেন, অদ্যও তাই খাইলেন । আহারের পর আচমন করিলেন । কিন্ত এতাবৎ একটিও কথা কহিলেন না । কিয়ৎক্ষণ পরে শশিভাষণ জিজ্ঞাসা করিলেন, “বিপিনকে ত ব’লে দিলেই হ’ত, সে একেবারে তোমার মাকে ডেকে আনতো ।” এই কথা কহিয়া প্রত্যত্তর প্রতীক্ষা করি: রহিলেন । কিন্তু প্রমদা চিত্রিত পত্তলীর ন্যায় অবাক হইয়া থাকিলেন, ফলতঃ বলিবারও কোন কথা ছিল না । মাকে আনিবার জন্যই বিপিনকে পাঠান হইয়াছিল । শশিভাষণ ক্ষণকাল অপেক্ষা করিয়া দুই একটা হাই ছাড়িতে লাগিলেন। ক্রমে ক্ৰমে নাসিকাশব্দ করিয়া নিদ্রিত হইলেন । প্রমদাও শয়ন করিলেন । নিদ্রায় রজনী অতিবাহিত হইল । প্রমদা বলিয়াছিলেন, "আমি কষ্ট পাইতেছি শনিলে মা অবশ্যই আসবেন ।" কাষ' তঃ প্রমদার মাতা সে পয্যন্তও শুনিতে অপেক্ষা করিতেন না । যে প্রকারে হউক, একটা খবর পাইলেই যেখানে থাকুন, অমনি পাখীর ন্যায় উড়িয়া আসিতেন । বিপিনের নিকট যখন শুনিলেন, প্রমদা ডাকিয়া পাঠাইয়াছেন, তিনি তখনই আসিতেন, কিন্তু তাঁহার পত্র তৎকালে বাটী না থাকায় সে দিবস আসা রহিত করিলেন । কিন্তু মনে মনে ভাবিতে লাগিলেন, "কত ক্ষণে রাত পোহাবে" এবং পত্রের অনুপস্থিত থাকার জন্য সে দিবস যাওয়া না হওয়ায় মনে মনে তাহাকে যৎপরোনামত তিরস্কার করিতে লাগিলেন । এমন সময় গদাধর আসিয়া বাটী উপস্থিত হইলেন । প্রমদার ভ্রাতার নাম গদাধর । গদাধর কৃষ্ণবর্ণ, দীঘকিার, অন্নাভাবে কুশকলেবর । মন্তকটি ক্ষুদ্র, নাসিকা