পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বর্ণলতা : ৫৬ নীল । বেহ্মজ্ঞানী হ’লে জাত যায় না, তাই আমার ইচ্ছা করে বেহ্মজ্ঞানী হই । কিশত যদি পাদরি সাহেবেরা মেম দেয়, তা হ’লে এীন্টানই হই । বাংগালি বে করার চাইতে মেম বে করা ভাল । কেমন দাদাঠাকুর, ভাল নয় ? বিধ । সে যার যেমন ইচ্ছা । তুমি যে মেম বে করবে, তাকে খেতে দেবে কি, আর পরাবেই বা কি ? নীল । সেই ত ভাবনা। আমি তাই ভাবছিলাম । যাই, বিদেশে ত যাচ্ছি, কিছ না কিছ অদেণ্টে জটে যাবেই । বিধ। তার আর সন্দেহ কি ? উভয়ে পনরায় বক্ষমল হইতে গাতোখান করিয়া রাস্তায় চলিতে লাগিলেন। নীলকমল তথাপি পৰব’দিবসের ন্যায় কথা কহে না । ক্ষণকাল চপ করিয়া থাকিয়া পরে কহিল, "দাদাঠাকুর, যার যা কপালে থাকে, কেউ খণ্ডন করতে পারে না । আমি তার এক গল্প জানি । আমারও যদি কপালে লেখা থাকে মেমের সঙ্গে বে হবে, তা হবেই হবে ।" বিধুভুষণ জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি গল্প বলো দেখি ?" নীলকমল নিম্নলিখিত গলপটি বণনা করিল। এক গ্রামে এক ব্রাহ্মণ বাস করিত । তাহার স্ত্রী ও পত্র ছিল । এক দিবস রাত্রে ব্রাহ্মণ সপরিবারে শয়ন করিয়া আছে, এমন সময়ে ঘরের আড়কাটা হইতে একগাছি রঞ্জ ঝুলিতেছে দেখিতে পাইল । ব্রাহ্মণ পাশ ফিরিয়া নিদ্রা যাইবার চেষ্টা করিল। কিন্ত নিদ্রা হইল না, পরে হঠাৎ সেই রজগাছ তাহার দটিপথে পতিত হইল। এবার পর্বোপেক্ষা একট লম্বা বোধ হইল । ব্রাহ্মণ ভাবিল, ইদরে দড়িগাছা ফেলিয়া দিতেছে । ক্ষণকাল মধ্যে দড়িগাছ একটি সাপের ন্যাস হইল। ব্রাহ্মণ সাঁকে ডাকিবে, কিন্ত ইতিপর্বেই সাপ নামিয়া তাহার তাঁকে ও পরকে দংশন করিল। ব্রাহ্মণ দেখিয়া ভীত ও বিস্মিত হইল। তাহার মন্ত্রী ও পত্র অবিলবেই প্রাণত্যাগ করিল । সাপটিও গহবারে একটি রঞ্জ দিয়া বাহির হইয়া গেল । ব্রাহ্মণ সাপের পশ্চাৎ পশ্চাৎ চলিল । ভোর হইলে সাপ ব্যাঘ্ররপে ধারণ করিয়া এক কৃষকের প্রাণবধ করিল ; এবং একট পরে এক বষ হইয়া একটি বালককে নট করিল । ব্রাহ্মণ এখনও পশ্চাৎ পশ্চাৎ আছে । ক্ষণকাল পরে সেই বাষ একটি বন্ধ মানযের আকার ধারণ করিল। তখন ব্রাহ্মণ তাহার পদতলে পতিত হইয়া তাহার পরিচয় জিজ্ঞাসা করিল । বন্ধ প্রথমতঃ পরিচয় দিতে অস্বীকার করিল ; কিন্ত ব্রাহ্মণের আগ্রহাতিশয্য দেখিয়া কহিল, “আমি কমসত্র । অথাৎ যাহার যেরপে মৃত্যু হইবে অদন্টে লেখা থাকে, আমি সেইরপে তাহার প্রাণ সংহার করি।” ব্রাহ্মণ জিজ্ঞাসা করিল, “আমি কিসে মরিব বলিয়া দিন ।” বদ্ধ কহিল, “পাগল ! সে কথা বলিতে নাই।” কিন্ত ব্রাহ্মণ কোন মতেই তাহার পা ছাড়িবে না, অগত্যা বদ্ধ কহিল, “তোমাকে গংগার কমীরে মারিবে ।” -