পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বর্ণলতা : ৬২ জিনিসের বড় বড় কথা শনা যায়। আমি বলে বিশ্বাস করবে না, কিন্ত যে দিবি বলো আমি করতে পারি, এর চেয়ে আমাদের গাঁয়ে রামা কমোর ভাল ঠাকুর গড়তে পারে।” বিধভ.ষণ কহিলেন, “আচ্ছা, পারে ভালই, এখন যা করতে এসেছ ক’রে যাও ।” উভয়ের কালী দশন করা হইল। মন্দিরের বারে একজন কালীর পরিচারক ছিল। বিধ ও নীলকমল প্রণাম করিয়া উঠিবা মাত্রেই সে দশানী ও প্রণামী পয়সা চাহিল। বিধ ভাষণ জিজ্ঞাসা করিলেন, “কত দিতে হবে ?” পরিচারক কহিল, “তাহার নিয়ম নাই, কিন্ত আট আনার কম নয়, অধিক যত দিতে পার, ততই তোমাদেরই ভাল।" বিধভষণ কোমরস্থিত থলি হইতে চারি তানা দিলেন। নীলকমল না দিয়া চলিয়া আসিতেছে। পরিচারক জিজ্ঞাসা করিল, “তুমি দিলে না ?” নীলকমল কহিল, “আমি বাবর চাকর, আমি আর কি দেবো ?” উভয়ে মন্দির হইতে বাহিরে আসিলে পাড়া হস্ত প্রসারণ করিয়া কহিল, “আমাকে কি দেবে দাও।” বিধভাষণ কহিলেন, “তোমাকে আর কি দেবো ? একবার ত দিয়ে এলাম ।” পাডা কহিল, “ও ত প্রণামী দিলে । তুমি প্রণামী কেন লাক টাকা দাও না। তাতে ত আমার কোন লাভ নাই । আমি যে তোমাদের সঙ্গে ক’রে এনে কালী দশন করালাম, তার বকশিশ কই ? আর ফল দিলাম, সিন্দর দিলাম, এর দক্ষিণা কৈ ?” - বিধ্যভাষণ ট্যাকে থেকে আর চারি আনা পাণ্ডাকে দিয়া যাইতেছেন, কিন্ত -কালীঘাটের লোকে যদি একবার টের পায়—কাহারও কাছে পয়সা আছে, তাহা হইলে তাহাকে সহজে ছাড়ে না । বিধভাষণের হাতে পয়সা আছে দেখিয়া অন্ততঃ প’চিশ জন স্ত্রী পর্যুষে আসিয়া মালা হাতে করিয়া তাঁহাকে ও নীলকমলকে ঘিরিয়া ফেলিল । আর যাইবার উপায় নাই । সম্মুখে যাইতে গেলে পশ্চাৎ দিক হইতে কাপড় ধরিয়া টানে, পশ্চাতে আসিতে গেলে সম্মখে টানে ; যে দিকে যান, অপর দিক হইতে তিন চারি জন টানাটানি করে। আর এত আশীবাদ ও গোলমাল করিতে লাগিল যে, সেখানে যে না গিয়াছে, সে কখন তাহা অনুমান করিতেও সমর্থ হয় না, বলিলেও বিশ্বাস করে না । বিধভাষণ বিরক্ত হইয়া কোমর হইতে পয়সা সকলকে কিছু কিছ দিতে গেলেন । কিন্তু দুঃখ ও আশ্চয্যের বিষয়, কোমরে থলি নাই । উচ্চৈঃস্বরে নীলকমলকে ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “নীলকমল, আমার থলি কি হ’ল ?” নীলকমল কহিল, “আমি আপনার মাথা বাঁচাতে পারি নে, তা তোমার থলি কোথায় কেমন ক'রে বলবো ।” বস্তুতঃ নীলকমলের মাথা বাঁচান দায় হইয়া উঠিয়াছিল । যে ষে দিক হইতে পারিতেছে, তার কপালে সিন্দর দিতেছে । সকলেরই যে কপালে পড়িতেছে, তা