পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একবিংশ পরিচ্ছেদ : ৭৩ গোপাল । না । ভবেন । কেন ? গোপাল । যদি চাই, আর যদি ঘরে না থাকে, তবে মা বড় কাঁদে । মা’র কান্না দেখলে আমি থাকতে পারি না। আমারও বড় কান্না পায়। এই জন্য আমি কিছ: চাই নে। এক দিন আমি আর বিপিন একত্র বাড়ী গেলাম, বিপিন খাবার খেতে লাগলো, মা আমাকে কিছু দিতে পারলেন না ব’লে কত কানতে লাগলেন। সে অবধি আমি একত্তর বাড়ী যাই নে। যখন বঝি, বিপিন বাড়ী গিয়া খাবার-টাবার খেয়ে খেলা করছে, আমি তখন বাড়ী গিয়াই বিপিনের সঙ্গে খেলা করি। যদি ঘরে কিছ: থাকে, মা ডেকে দেন। যদি না থাকে, তা হলে আর কিছ খেতে পাই নে—এই কথা বলিতে বলিতে গোপালের চক্ষ হইতে অশ্রদ্বষণ হইতে লাগিল । গোপালের অশ্রুপাত দশন করিয়া ভবনের সরল চিত্ত দ্রব হইয়া গেল । ভবন জিজ্ঞাসা করিল, “বিপিন যাহা খেতে পায়, তার কিছু তোমাকে দেয় না ? গোপাল কহিল, “বিপিনের দেবার ইচ্ছা আছে, কিন্তু জেঠাই-মা দিতে দেন না । বিপিনকে খাবার দিলে তিনি নিজে সমুখে বসে থাকেন, পাছে বিপিন আমাকে দেয় ।” ভবেন । “চল, আমি আমাদের বাড়ী চল । আমার যে খাবার আছে, দু-জনে ভাগ ক’রে খাব এখন ; আর তোমাকে মা'র কাছ থেকে একটা পয়সা চেয়ে দেবো।” গোপাল । তোমার মা'র কাছে চাইলে দেবে না, তুমি যদি দাও, তবে চল যাই । ভবন । আচ্ছা চল যাই, আমিই দেবো এখন । উভয়ে অত্যন্ত বিমষচিত্তে বাটী গেল । বাটী গিয়া গোপাল বাহিরে বসিল । ভুবন মায়ের কাছে গিয়ে গোপালের কাছে যাহা শনিয়াছিল, আনপিনবিক বর্ণনা করিল। তিনি শনিয়া গোপালকে ডাকিয়া আনিতে কহিলেন । ভবন মাতার আজ্ঞা পাইবা মাত্র দৌড়িয়া বারে আসিয়া গোপালকে লইয়া গেল । ভবনের মাতা গোপালের মান মুখ ও ছল ছল নেত্ৰ দেখিয়া যার-পর-নাই দুঃখিত হইলেন । দুটি হাত ধরিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “গোপাল, তোমরা দু-জনে একত্তর হয়ে পাঠশালা থেকে এলে, তা তুমি বাইরে বসেছিলে কেন ?" গোপাল কিছু উত্তর করিল না । তখন ভবনের মাতা উভয়কে খাবার দিলেন । এবং দটি ছোট ছোট গেলাসে জল দিলেন। গোপাল ও ভবন খাবার খাইয়া জল খাইতেছে । গোপাল এক গেলাস জল খাইয়া শান্য গেলাসটি হাতে ধরিয়া কহিল, “আমাকে আর একট জল দিন ।” ভবনের মাতা হাসিতে হাসিতে কহিলেন, “ক’র কাছে জল চাছ ।"