পাতা:স্বর্ণলতা-তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়.pdf/৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুৰ্বিবংশ পরিচ্ছেদ নীলকমল ও বিধুভুষণের পুনৰ্ম্মিলন হগলী জেলার অন্তগত দেবীপরে বারইয়ারি পজায় যাত্রা, পাঁচালি, কবি ইত্যাদি বায়না হইয়াছে । বৈকাল হইতে রাত্রি ১০টা পৰ্য্যন্ত পাঁচালি হইয়া গেল । সকলেই পাঁচালি শুনিয়া প্রশংসা করিল। কিন্তু তাহার গানে যত মোহিত না হইল, বাজনা শুনিয়া তদপেক্ষা অধিক প্রীতি লাভ করিল। এ দলে বিধভষেণ বাদ্যকর । শেষরাত্রে যাত্রা আরম্ভ হইয়াছে। সকলেই যাত্রা শুনিতে বসিয়াছে। বিধভষণের দলের সকলে প্রাতঃকালে গান শুনিতে গেল। বিধ্যভাষণও সেই সঙ্গে গেলেন । তাঁহারাও উপস্থিত হইলেন, আর সঙের বাজনা বাজিয়া উঠিল এবং যাত্রার দল হইতে একটি কচি, কৃশকায়, ছিটের ইজের চাপকান-পরা রাম উঠিয়া ডাকিতে আরম্ভ করিল, “বাছা হনুমান –বাছা হনুমান ।” দুই চারি বার ডাকিয়া চপ করিল । পুনরায় “বাছা হনুমান-বাছা হনুমান ।” রামটি এমনি কৃশ ও দৰবল যে, এক এক বার বাছা হনুমান বলিয়া ডাকিতে তাহার আপাদমস্তক পয্যন্ত কল্পিত হইতেছে, গলায় শির উঠিতেছে এবং মুখ কালির বণ হইয়া যাইতেছে । কিন্তু তথাপি হনুমানের দয়া হয় না। হনুমান এসেও আসে না । রামের এ দিকে চক্ষ ভাঙ্গিয়া আসিতেছে। লক্ষণ, ভরত, শতঘ্ন, এরা ম'রে আসরে পড়ে ঘুম দিচ্ছেন । রাম বেচারার হিংসা হচ্ছে । মরিতে পারিলেই একটা ঘামাইয়া বাঁচে । কিন্তু হনুমান না এলে ত যন্ধে আরম্ভ হইতে পারে না ? হনুমানও আইসে না। দল হইতে একজন তানপুরা ফেলিয়া দৌড়িয়া হনুমানকে আনিতে গেল । পাঠকবগ, চলন দেখি সাজঘরে হনুমান কি করিতেছে। নীলকমল গোবিন্দ অধিকারীর দলে গিয়াছিল, পাবেই বলা হইয়াছে। কিন্ত নীলকমলের বিদ্যা বন্ধি দেখিয়া, গোবিন্দ অধিকারী তাহাকে নিজে না রাখিয়া, আর এক রামযাত্রার দলে সুপারিশ করিয়া দিয়াছিল। নীলকমল চারি টাকা বেতন পায়, আর তামাক সাজে, মন্দিরে বাজায়, দু-এক বার বা বেহালারও কান মোড়া দেয় । কি করে ? বিদেশে চাকরি মেলে না । যা পেয়েছে, তাই করিতেছে। কিন্ত এত দিন তাহাকে কেহ সঙ সাজিতে বলে নাই । আজ আর অন্য লোক নাই, সতরাং অধিকারী নীলকমলকে হনমান সাজিতে বলিয়াছে । নীলকমল ইহাতে অত্যন্ত রাগত হইয়াছে । চক্ষ লাল করিয়া কহিল, “আমার সঙ্গে এমন কোন বন্দোবস্ত ছিল না যে, আমি সঙ সাজবো। আর যদিও সাজি, তবে রাজা সাজবো কিবা আর কিছু সাজবো, আমি হনুমান সাজতে পারবো ना !" অধিকারী কহিল, “এতে দোষ কি ? যাত্রার দলে সঙ ত সকলেই সেজে থাকে। আর যদি সওঁ সাজতেই হয়, তবে হনুমানই বা কি, আর রাজাই বা কি ?” সবণ'লত-৬