পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভারতীয় জীবনে বেদান্তের কার্যকারিত [ মাগ্রাজে প্রদত্ত তৃতীয় বক্তৃত। ] আমাদের জাতি ও ধর্মের অভিধা বা সংজ্ঞা-স্বরূপ একটি শব্দ খুব চলিত হইয়া পড়িয়াছে ! আমি হিন্দু শব্দটি লক্ষ্য করিয়া এই কথা বলিতেছি। ‘বেদাস্তধর্ম বলিতে আমি কি লক্ষ্য করিয়া থাকি, তাহা বুঝাইবার জন্য এই শব্দটির অর্থ ভাল করিয়া বুঝা আবশ্বক। প্রাচীন পারসীকগণ সিন্ধু-নদকে ‘হিন্দু বলিতেন । সংস্কৃত ভাষায় যেখানে ‘স আছে, প্রাচীন পারসীক ভাষায় তাহাই হ’-রূপে পরিণত হইয়াছে। এইরূপে সিন্ধু হইতে ‘হিন্দু’ হইল। আর তোমরা সকলেই জানো, গ্রীকগণ ‘হ’ উচ্চারণ করিতে পারিত না ; সুতরাং তাহারা একেবারে হটিকে উড়াইয়া দিল—এইরূপে আমরা ইণ্ডিয়ান’ নামে পরিচিত হইলাম । এখন কথা এই, প্রাচীনকালে এ-শব্দের অর্থ যাহাই থাকুক, উহা সিন্ধুনদের অপরতীরের অধিবাসিগণকেই বুঝাক বা যাহাই বুঝাক, বর্তমানে এই শব্দের আর কোন সার্থকতা নাই ; কারণ এখন আর সিন্ধুনদের অপরতীরের অধিবাসিগণ একধর্মাবলম্বী নহে। এখানে এখন আসল হিন্দু, মুসলমান, পারসীক, খ্ৰীষ্টান এবং অল্পসংখ্যক বৌদ্ধ ও জৈন বাস করিতেছেন । হিন্দু শব্দের বুৎপত্তিগত অর্থ ধরিলে ইহাদের সকলকেই হিন্দু বলিতে হয়, কিন্তু ধর্মহিসাবে ইহাদের সকলকে হিন্দু বল্প চলে না। আর আমাদের ধর্ম যেন নানা মত, নানা ভাব এবং নানাবিধ অনুষ্ঠান ও ক্রিয়াকলাপের সমষ্টি স্বরূপ—এইসব একসঙ্গে রহিয়াছে, কিন্তু ইহাদের একটা সাধারণ নাম নাই, একটা মণ্ডলী নাই, একটা সংঘবদ্ধ প্রতিষ্ঠান নাই। এই কারণে আমাদের ধর্মের একটি সাধারণ বা সর্ববাদিসম্মত নাম দেওয়া বড় কঠিন । বোধ হয়, একটিমাত্র বিষয়ে আমাদের সকল সম্প্রদায় একমত, আমরা সকলেই আমাদের শাস্ব—বেদে বিশ্বাসী। এটি বোধ হয় নিশ্চিত যে, ষে-ব্যক্তি বেদের সর্বোচ্চ প্রামাণ্য অস্বীকার করে, তাহাঁর নিজেকে হিন্দু বলিবার অধিকার নাই । - তোমরা সকলেই জানো, এই বেদসমূহ দুই ভাগে বিভক্ত-কর্মকাও ও জ্ঞানকাও । কর্মকাণ্ডে নানাবিধ যাগযজ্ঞ ও অনুষ্ঠানপদ্ধতি আছে, উহাদের