পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভারতীয় জীবনে বেদাস্তের কার্যকারিতা > R〉 উদ্ধৃত হইয়াছে • কেবল যেখানে এমন বিষয় ব্যাখ্যার প্রয়োজন হইয়াছে, যাহা শ্রুতিতে, কোনরূপে পাওয়া যায় না, এমন অল্পস্থলেই কেবল স্মৃতিবাক্য উদ্ধৃত হইয়াছে। অন্যান্ত-মতবাদিগণ কিন্তু শ্রুতি অপেক্ষ স্মৃতির উপরেই অধিক পরিমাণে নির্ভর করিয়াছেন ; যতই আমরা দ্বৈতবাদী সম্প্রদায়সমূহের পর্যালোচনা করি, ততই দেখিতে পাই, তাহাদের উদ্ধৃত স্মৃতিবাক্য শ্রুতির তুলনায় এত অধিক যে, বৈদাস্তিকের নিকট তাহ। আশা করা উচিত নয়। বোধ হয়, ইহারা স্মৃতি-পুরাণাদি প্রমাণের উপর এত অধিক নির্ভর করিয়াছিলেন যে, কালে অদ্বৈতবাদীই খাটি বৈদাস্তিক বলিয়া পরিগণিত হইয়াছেন। যাহা হউক, আমরা পুর্বেই দেখিয়াছি, বেদান্ত’ শব্দ দ্বারা ভারতীয় ধর্মসমষ্টি বুঝিতে হইবে । আর বেদান্ত যখন বেদ, তখন ইহা সর্ববাদি-সম্মতিক্রমে আমাদের প্রাচীনতম গ্রন্থ। অবশ্য আধুনিক পণ্ডিতগণের মত যাহাই হউক, হিন্দুরা বিশ্বাস করিতে প্রস্তুত নন যে, বেদের কতকাংশ এক সময়ে এবং কতকাংশ অন্য সময়ে লিখিত হইয়াছে। হিন্দুরা অবশ্য এখনও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করিয়া থাকেন যে, সমগ্র বেদ এককালে উৎপন্ন হইয়াছিল, অথবা যদি আমার এরূপ ভাষা-প্রয়োগে কেহ আপত্তি ন করেন—উহার কখনই স্কষ্ট হয় নাই, উহারা চিরকাল হৃষ্টিকর্তার মনে বর্তমান ছিল । 'বেদাস্ত’ শব্দে আমি সেই অনাদি অনন্ত জ্ঞানরাশিকেই লক্ষ্য করিতেছি । ভারতের দ্বৈতবাদ, বিশিষ্টাদ্বৈতবাদ ও অদ্বৈতবাদ সকলই উহার অন্তর্ভুক্ত । সম্ভবতঃ আমরা বৌদ্ধধর্ম, এমন কি জৈনধর্মের অংশবিশেষ গ্রহণ করিতে পারি—যদি উক্ত ধর্মাবলম্বিগণ অনুগ্রহপুর্বক আমাদের মধ্যে আসিদ্ধত সম্মত হন। আমাদের হৃদয় তো যথেষ্ট প্রশস্ত— আমরা তে র্তাহাদিগকে গ্রহণ করিতে প্রস্তুত—তাহারাই আসিতে অসম্মত । আমরা তাহাদিগকে গ্রহণ করিতে অনায়াসে প্রস্তুত ; কারণ বিশেষভাবে বিশ্লেষণ করিলে দেখিবে যে, বৌদ্ধধর্মের সারভাগ ঐ-সকল উপনিষদ হইতেই গৃহীত ; এমন কি বৌদ্ধধর্মের নীতি—তথাকথিত অদ্ভূত ও মহান নীতিতত্ত্ব— কোন না কোন উপনিষদে অবিকল বর্তমান । এইরূপ জৈনদেরও ভাল ভাল মতগুলি উপনিষদে রহিয়াছে, কেবল অযৌক্তিক সিদ্ধাস্তগুলি নাই। পরবর্তী কালে ভারতীয় ধর্মচিন্তার যে-সকল পরিণতি হইয়াছে, সেগুলিরও বীজ আমরা উপনিষদে দেখিতে পাই। সময়ে সময়ে বিনা যুক্তিতে এরূপ অভিযোগ করা হইয়া থাকে যে, উপনিষদে ‘ভক্তি'র আদর্শ নাই। যাহার উপনিষদ বিশেষভাবে