>や38 স্বামীজীর রাণী ও রচনা অস্তদৃষ্টিপরায়ণ হইল, স্বচিত্তের বিশ্লেষণ ভারতীয় আর্যের প্রধান লক্ষ্য হইল। অপর দিকে গ্রীকজাতি জগতের এমন এক স্থানে বাস করিত, য়েথানে গাম্ভীর্য অপেক্ষ সৌন্দর্যের বেশী সমাবেশ—গ্রীক দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্বর্তী সুন্দর দ্বীপসমূহ— চতুদিকের নিরাভরণা কিন্তু হাস্যময়ী প্রকৃতি—তাহার মন সহজেই বহির্মুখ হইল, উহা বাহা জগতের বিশ্লেষণ করিতে চাহিল । ফলে আমরা দেখিতে পাই, ভারত হইতে সর্বপ্রকার বিশ্লেষণাত্মক এবং গ্রীস হইতে শ্রেণীবিভাগপুর্বক বিশ্বজনীন সত্যে উপনীত হইবার বিজ্ঞানসমূহের উদ্ভব । হিন্দু মন নিজ বিশিষ্ট পথে চলিয়া অতি বিস্ময়কর ফল লাভ করিয়াছিল। এখনও হিন্দুদের যেরূপ বিচারশক্তি, ভারতীয় মস্তিষ্ক এখনও যেরূপ শক্তির আধার, তাহার সহিত অন্য কোন জাতির তুলনা হয় না। আর আমরা সকলেই জানি, আমাদের যুবকগণ অন্য যে-কোন দেশের যুবকগণের সহিত প্রতিযোগিতায় সর্বদাই জয়ী হইয়া থাকে ; তথাপি যখন সম্ভবতঃ মুসলমানদিগের ভারতবিজয়ের দুই-এক শতাব্দী পূর্বে জাতীয় প্রাণশক্তি স্তিমিত হইয়া পড়িয়াছিল, তখন জাতির এই বিশেষত্বটিকে—বিচারশক্তিকে লইয়া এত বাড়বাড়ি করা হইল যে, উহারও অবনতি হইল । আর আমর। ভারতীয় শিল্প, সঙ্গীত, বিজ্ঞান, সকল বিষয়েই এই অবনতির কিছু না কিছু চিহ্ন দেখিতে পাই । শিল্পের আর সেই উদার ধারণা রহিল না, ভাবের উচ্চতা ও বিভিন্ন অঙ্গের সামঞ্জস্যের চেষ্ট। অণুর রহিল না । সকল বিষয়েই প্রচণ্ড অলঙ্কারপ্রিয়তার আবির্ভাব হইল, সমগ্র জাতির মৌলিকত্ব যেন অস্তৰ্হিত হইল । সঙ্গীতে প্রাচীন সংস্কৃতের হৃদয়-আলোড়নকারী গভীর ভাব আর রহিল না, পুর্বে যে প্রত্যেকটি মুর স্বতন্ত্র থাকিয়াও অপুর্ব ঐকতানের স্বষ্টি করিত, তাহা আর রহিল না ; সুর গুলি যেন নিজ নিজ স্বাতন্ত্র্য হারাইল । আমাদের সমগ্র আধুনিক সঙ্গীতে নানাবিধ স্বরের তালগোল পাকাইয়া গিয়াছে। কতকগুলি মিশ্ৰস্থরের বিশৃঙ্খল সমষ্টি হইয়া দাড়াইয়াছে ; ইহাই সঙ্গীতশাস্ত্রের অবনতির চিহ্ন । তোমাদের ভাবরাজ্যের অন্যান্য বিষয়গুলি বিশ্লেষণ করিলেও এইরূপ অলঙ্কারপ্রিয়তার প্রাচুর্য এবং মৌলিকতার অভাব দেখিতে পাইবে, আর তোমাদের বিশেষ কর্মক্ষেত্ৰ—ধর্মেও ঘোর ভয়াবহ অবনতি হইয়াছিল । যে জাতি শত শত বৎসর যাবৎ এক মাস জল ডান হাতে খাইব, কি বঁ। হাতে থাইব’—এইরূপ গুরুতর সমস্তাগুলির বিচারে ব্যস্ত রহিয়াছে, সেই জাতির নিকট স্বার কি আশা করিতে পারো ? যে-দেশের বড় বড় মাথাগুলি
