পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

३ १२ স্বামীজীর বাণী ও রচনা দুঃখ-শোকপুর্ণ এই জগতের বিদ্যা খুব বড় হইতে পারে, কিন্তু যিনি অপরিণামী আনন্দময়, একমাত্র র্যাহাতে শাস্তি বিরাজিত, একমাত্র র্যাহাতে অনন্ত জীবন ও পূর্ণত্ব, একমাত্র যাহার নিকট গেলে সকল দুঃখের অবদান হয়, তাহাকে জানাই আমাদের পুর্বপুরুষগণের মতে শ্রেষ্ঠ বিদ্যা । যে-সকল বিদ্যা বা বিজ্ঞান আমাদিগকে শুধু অন্ন বস্ত্র দিতে পারে, স্বজনদের উপর প্রভূত্ব বিস্তার করিবার ক্ষমতা দিতে পারে, যে-সকল বিদ্যা শুধু মানুষকে জয় ও শাসন করিবার এবং দুর্বলের উপর সবলের আধিপত্য করিবার শিক্ষা দিতে পারে ; ইচ্ছা করিলে তাহারা অনায়াসেই সেই-সকল বিজ্ঞান, সেইসকল বিদ্যা আবিষ্কার করিতে পারিতেন । কিন্তু ঈশ্বরের কৃপায় তাহারা ওদিকে কিছুমাত্র দৃষ্টিপাত না করিয়া একেবারে অন্য পথ ধরিলেন, যাহা পুর্বোক্ত পথ অপেক্ষ অনন্তগুণে শ্রেষ্ঠ ও মহৎ, পুর্বোক্ত পথ অপেক্ষ যাহাতে অনন্তগুণ বেশী আনন্দ । ঐ পথ ধরিয়া তাহারা এমন একনিষ্ঠভাবে অগ্রসর হইলেন যে, এখন উহা আমাদের জাতীয় বিশেষত্ব হইয়া দাড়াইয়াছে, সহস্ৰ সহস্ৰ বৎসর ধরিয়া পিতা হইতে পুত্রে উত্তরাধিকারস্থত্রে আসিয়া আমাদের জীবনের অঙ্গীভূত হইয়াছে, আমাদের ধমনীর প্রত্যেক শোণিতবিন্দুর সহিত মিশিয়া গিয়াছে, আমাদের স্বভাবসিদ্ধ হইয়াছে। এখন ধর্ম ও হিন্দু—এই দুইটি শব্দ একাৰ্থবাচক হইয়া দাড়াইয়াছে। ইহাই আমাদের জাতির বিশেষত্ব, ইহাতে আঘাত করিবার উপায় নাই । অসভ্য জাতিসমূহ তরবারি ও বন্দুক লইয়। বর্বর ধর্মসমূহ আমদানি করিয়াছে, একজনও সেই সাপের মাথার মণি ছুইতে পারে নাই, একজনও এই জাতির প্রাণপাখিকে মারিতে পারে নাই । অতএব ইহাই আমাদের জাতির জীবনীশক্তি, আর যতদিন ইহা অব্যাহত থাকিবে, ততদিন জগতের কোন শক্তিই এই জাতিকে বিনাশ করিতে পরিবে না। যতদিন আমরা উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত মহত্তম রত্নস্বরূপ এই ধর্মকে ধরিয়া থাকিব, ততদিন জগতের সর্বপ্রকার অত্যাচার, উৎপীড়ন ও দুঃখের অগ্নিরাশির মধ্য হইতেও প্ৰহলাদের ন্যায় অক্ষত শরীরে বাহির হইয়া আসিব । হিন্দু যদি ধাৰ্মিক না হয়, তবে আমি তাহাকে ‘হিন্দু বলি না। অন্যান্য দেশে রাজনীতিচর্চা লোকের মুখ্য অবলম্বন হইতে পারে এবং তাহার সঙ্গে সঙ্গে সে একটু-আধটু ধর্মের অনুষ্ঠান করিতে পারে, কিন্তু এখানে—এই ভারতে আমাদের জীবনের সর্বপ্রথম কর্তব্য ধর্মাঙ্গুষ্ঠান, তারপর যদি সময় থাকে, তবে অন্যন্ত জিনিস তাহার