পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৪৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভারতের নারী 88 S গুরুজনদের সম্মুখে কেহ স্ত্রীর সহিত কথা বলে না। একাকী যখন অপর কেহ থাকে নাৰা শুধু ছোটর থাকে, তখনই স্ত্রীর সহিত কথাবার্তা বলা যায়। যদি আমি বিবাহ করিতাম, তাহা হইলে আমার ভ্রাতুপুত্র, ভ্রাতুপুত্রীর সামনে স্ত্রীর সহিত কথা বলিতাম, কিন্তু বড় বোন বা পিতামাতার সম্মুখে বলিতাম না। ভগ্নীদের নিকট তাহদের স্বামী সম্বন্ধে কোন কথা আমি বলিতে পারি না । ভাবটি এই যে, আমরা সন্ন্যাস-কেন্দ্রিক জাতি। এই একটি ভাবের উপর সমগ্র সমাজ-ব্যবস্থার দৃষ্টি নিবদ্ধ রহিয়াছে। বিবাহকে একটা অপবিত্র, একটা নিম্ন পর্যায়ের ব্যাপায় বলিয়া মনে করা হয় । সেইজন্য প্রেমের বিষয় লইয়া কোন আলোচনা কখনও করা চলিবে না । মা, ভাই, বোন বা অপর কাহারও সামনে আমি কোন উপন্যাস পড়িতে পারি না । তাহারা আসিলে উপন্যাসটি বন্ধ করিয়া দিই । পান-ভোজনের ব্যাপারেও এই একই রীতি। আমরা গুরুজনদের সম্মুখে আহার করি না। শিশু বা সম্পর্কে ছোট না হইলে কোন পুরুষের সম্মুখে আমাদের মেয়েরা কখনও আহার করে না । মেয়েরা বলে, ‘মরিয়া যাইব, তবু স্বামীর সম্মুখে কিছু চিবাইতে পারিব না।’ মাঝে মাঝে ভাই ও বোনেরা একত্রে খাইতে বসিতে পারে। ধরুন আমি এবং আমার ভগ্নী একসঙ্গে খাইতেছি, এমন সময় ভগ্নীর স্বামী দরজার গোড়ায় আসিয়া পড়িল—তাহা হইলে তখনই ভগ্নী খাওয়া বন্ধ করিয়া দিবে, আর স্বামী-বেচারা সরিয়া পড়িবে। যে-সব প্রথা আমাদের দেশের একান্ত নিজস্ব, সেইগুলি আমি বলিলাম । ইহাদের ভিতর কতকগুলি,আমি অন্যান্য দেশেও লক্ষ্য করিয়াছি। আমি কখনও বিবাহ করি নাই। বধূসম্বন্ধীয় জ্ঞান আমার সম্পূর্ণ নয়। মাতা এবং ভগ্নী যে কি, তাহা আমি জানি ; অপরের বধু আমি দেখিয়াছি মাত্র, তাহা হইতে যেটুকু জ্ঞান সংগ্ৰহ করিয়াছি, তাহাই আপনাদের বলিলাম । শিক্ষা এবং সংস্কৃতি নির্ভর করে পুরুষের উপর ; অর্থাৎ যেখানে পুরুষের উচ্চসংস্কৃতিসম্পন্ন, সেখানে মেয়েরাও ঐরূপ হইবে । যেখানে পুরুষদের সংস্কৃতি নাই, সেখানে মেয়েদেরও নাই। অতি প্রাচীনকাল হইতে হিন্দুপ্রথা-অম্বুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষা গ্রামীণ ব্যবস্থার অন্তর্গত ছিল । স্মরণাতীত কাল হইতে সমস্তভূমি রাষ্ট্রাপ্ত করা হইয়াছিল। আপনাদের ভাষায় এগুলি ছিল সরকারের। জমির উপর কাহারও কোন ব্যক্তিগত অধিকার নাই। ভারতবর্ষে রাজস্ব জমি