পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (প্রথম খণ্ড).pdf/১২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরোপকারে নিজেরই উপকার ሕፃ প্রত্যেক ব্যক্তির মনেই কতকগুলি বিশেষ ভাবের সহিত জড়িত কেন ? কতকগুলি প্রতীক সর্বজনীনভাবে প্রচলিত। তোমাদের অনেকের ধারণা— খ্ৰীষ্টধর্মের সংস্পর্শেই ক্রুশ-চিহ্ন প্রথম আবিভূর্ত হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে খ্ৰীষ্টধর্মের বহু পূর্ব হইতে, মুশা জন্মিবার পূর্ব হইতেই, বেদের আবির্ভাব হইবার পূর্ব হইতে—এমন কি মানুষের কার্যকলাপের কোনপ্রকার মানবীয় ইতিহাস রক্ষিত হইবার পূর্ব হইতেই উহা বর্তমান ছিল । আজটেক ও ফিনিসীয় জাতির মধ্যেও যে ক্রুশ-প্রতীক প্রচলিত ছিল, তাহার প্রমাণ পাওয়া যাইতে পারে। খুব সম্ভব, সকল জাতিই এই ক্রুশ-চিহ্ন ব্যবহার করিত। আবার ক্রুশবিদ্ধ পরিত্রাতার—ত্ৰুশবিদ্ধ হইয়৷ রহিয়াছে এরূপ একটি মানুষের—প্রতীক প্রায় সকল জাতির মধ্যে ছিল বলিয়া বোধ হয় । সমগ্র জগতের মধ্যে বৃত্ত একটি উৎকৃষ্ট প্রতীকের স্থান অধিকার করিয়াছে। তাহার পর সর্বাপেক্ষা সর্বজনীন প্রতীক ‘স্বস্তিক’ (ধ্ব) রহিয়াছে। এক সময়ে লোকে ভাবিত, বৌদ্ধগণ সমগ্র জগতে উহা ছড়াইয়া দিয়াছে, কিন্তু এখন জানা গিয়াছে যে, বৌদ্ধধর্মের অভু্যদয়ের অনেক পূর্ব হইতেই বিভিন্ন জাতির মধ্যে উহ! প্রচলিত ছিল। প্রাচীন রাবিলন ও মিশরে ইহা দেখা যাইত । ইহা ৰাৱ৷ কি প্রমাণ হইতেছে ?—এই প্রতীকগুলি শুধু রীতিগত বা কল্পনাপ্রস্থত নয়। নিশ্চয়ই উহাদের কোন যুক্তি আছে, মনুষ্য-মনের সহিত উহাদের কোনরূপ স্বাভাবিক সম্বন্ধ আছে। ভাষাও একটা কৃত্রিম বস্তু নয়। কয়েকজন লোক একত্র হইয়া কতকগুলি ভাবকে বিশেষ বিশেষ শব্দ দ্বারা প্রকাশ করিবে— এইরূপ সম্মত হওয়াতে ভাষার উৎপত্তি হইয়াছে—ইহা সত্য নয়। কোন ভাবই তাহার অনুরূপ শব্দ ব্যতিরেকে অথবা কোন শব্দই তাহার অঙ্কুরূপ ভাব ব্যতিরেকে থাকিতে পারে না। শব্দ ও ভাব স্বভাবতই অবিচ্ছেম্ভ । ভাবসমূহ বুঝাইবার জন্য শব্দ-ব বর্ণ-প্রতীক—উভয়ই ব্যবহৃত হইতে পারে। বধির ও মূক ব্যক্তিদিগকে শব্দপ্রতীক ছাড়া অন্ত প্রতীকের সাহাষ্যে চিন্ত৷ করিতে হয়। মনের প্রত্যেকটি চিন্তার পরিপূরক হিসাবে একটি করিয়া রূপ আছে। সংস্কৃত দর্শনে উহাদিগকে ‘নাম-রূপ’ বলা হয়। ষেমন কৃত্রিম উপায়ে ভাষা সৃষ্টি করা অসম্ভব, সেরূপ কৃত্রিম উপায়ে প্রতীক স্বষ্টি করাও অসম্ভব। পৃথিবীতে প্রচলিত আনুষ্ঠানিক ধর্মের প্রতীকগুলির মধ্যে মানবজাতির ধর্মচিন্তার অভিব্যক্তি দেখিতে পাই। অনুষ্ঠান, মন্দির ও অন্তান্ত