পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (প্রথম খণ্ড).pdf/১২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S e 8 স্বামীজীর বাণী ও রচনা কোকড়ানো লেজের মতে, এবং উহা কখনও সোজা হইবে না, তখনই আমরা আর গোড়া হইব না। অনেক প্রকার গোড়া আছে—মদ্যপান-নিবারক, চুরুট-নিবারক ইত্যাদি। এক সময়ে এই ক্লাসে একজন যুবতী মহিলা আসিতেন। তিনি এবং আর কয়েকজন মহিলা মিলিয়া চিকাগোয় একটি হল-বাড়ি করিয়াছেন ; সেখানে শ্রমজীবীদের কিছু কিছু সঙ্গীত ও ব্যায়াম শিখিবার বন্দোবস্ত আছে। একদিন তিনি আমাকে মদ্যপান ও ধূমপান প্রভৃতিতে যে অনিষ্ট হয়, তাহ বলিতেছিলেন। তিনি বলিলেন, এই-সকল দোষের প্রতিকারের উপায় তিনি জানেন । আমি সেই উপায়টি কি জানিতে চাহিলে তিনি বলিলেন, ‘আপনি কি হল-বাড়িটির কথা জানেন না ? তাহার কথা শুনিয়া মনে হয়, র্তাহার মতে মানবজাতির যাহ। কিছু অশুভ, ঐ ‘হল-বাড়ি’টি তাহার অব্যর্থ মহৌষধ। ভারতে কতকগুলি গোড়া আছেন, তাহারা মনে করেন, মেয়েদের ৰদি একাধিক বিবাহের অনুমতি দেওয়া যায়, তবেই সব দুঃখ ঘুচিবে। এই সবই গোড়ামি ; আর জ্ঞানী ব্যক্তি কখন গোড়া হইতে পারেন না। গোড়ার ঠিক ঠিক কাজ করিতে পারে না । জগতে যদি গোড়ামি না থাকিত, তবে জগৎ এখন যেরূপ উন্নতি করিতেছে, তদপেক্ষা অধিক উন্নতি করিত। গোড়ামি দ্বারা মানবজাতির উন্নতি হয়—এরূপ চিন্তা করা ভুল। পক্ষাস্তরে উহাতে বরং উন্নতির বিন্ন হয়, কারণ উহাতে ঘৃণা ও ক্রোধের উৎপত্তি হয়, ফলে মানুষ পরস্পর বিরোধ করে এবং পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিহীন হইয়া যায়। আমরা যাহা করি বা আমাদের যাহা আছে, মনে করি, তাহাই জগতে শ্রেষ্ঠ এবং যাহা আমাদের নাই, তাহার কোন মূল্য নাই। অতএব যখনই গোড়ামির ভাব আসিবে, তখন সর্বদাই স্নেই কুকুরের লেজের কথা মনে করিও । জগতের জন্য তোমার উদ্বিগ্ন অথবা বিনিদ্র হইবার প্রয়োজন নাই ; তোমাকে ছাড়াই জগৎ ঠিক চলিয়া যাইবে । যখন তোমার এই গোড়ামি থাকিবে না, কেবল তখনই তুমি ভালভাবে কাজ করিতে পারিবে। যাহার মাথা খুব ঠাণ্ডা, যে শান্ত এবং সর্বদা উত্তমরূপে বিচার করিয়া কাজ করে, যাহার স্বায়ু সহজে উত্তেজিত হয় না এবং যাহার গভীর প্রেম ও সহানুভূতি আছে, সে-ই সংসারে ভাল কাজ