পাতা:স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (ষষ্ঠ খণ্ড).pdf/৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\o স্বামীজীর বাণী ও রচনা যে দিক্ হতেই আস্থক না, একবার কলকেতার হাওয়া খেলেই দেখছি সেই ভাষাই লোকে কয়। তখন প্রকৃতি আপনিই দেখিয়ে দিচ্ছেন যে, কোন ভাষা লিখতে হবে, যত রেল এবং গতাগতির সুবিধা হবে, তত পূর্ব-পশ্চিমী ভেদ উঠে যাবে, এবং চট্টগ্রাম হতে বৈদ্যনাথ পর্যন্ত ঐ কলকেতার ভাষাই চলবে । কোন জেলার ভাষা সংস্কৃতর বেশী নিকট, সে কথা হচ্ছে না— কোন ভাষা জিতছে সেইটি দেখ। যখন দেখতে পাচ্ছি যে, কলকেতার ভাষাই অল্প দিনে সমস্ত বাঙ্গালা দেশের ভাষা হ’য়ে যাবে, তখন যদি পুস্তকের ভাযা এবং ঘরে কথা-কওয়া ভাষা এক করতে হয় তো বুদ্ধিমান অবশুই কলকেতার ভাষাকে ভিত্তিস্বরূপ গ্রহণ করবেন। এথায় গ্রাম্য ঈর্ষাটিকেও জলে ভাসান দিতে হবে । সমস্ত দেশের যাতে কল্যাণ, সেথা তোমার জেলা বা গ্রামের প্রাধান্তটি ভুলে যেতে হবে । ভাষা ভাবের বাহক। ভাবই প্রধান ; ভাষা পরে হীরেমতির সাজ-পরানো ঘোড়ার উপর বদর বসালে কি ভাল দেখায় ? সংস্কৃতর দিকে দেখ দিকি । ব্রাহ্মণের সংস্কৃত দেখ, শবরস্বামীর মীমাংসাভাষ্য দেখ, পতঞ্জলির মহাভাষ্য দেখ, শেষ—আচার্য শঙ্করের ভাষ্য দেখ, আর অর্বাচীন কালের সংস্কৃত দেখ। এখুনি বুঝতে পারবে যে, যখন মানুষ বেঁচে থাকে, তখন জেস্ত-কথা কয়, মরে গেলে মর্য-ভাষা কয় । যত মরণ নিকট হয়, নূতন চিন্তাশক্তির যত ক্ষয় হয়, ততই দু-একটা পচা ভাব রাশীকৃত ফুল-চন্দন দিয়ে ছাপাবার চেষ্টা হয় । বাপ রে, সে কি ধুম—দশপাতা লম্বা লম্ব। বিশেষণের পর দুম ক’রে,—‘রাজ আসীং’ ! আহাহা! কি প্যাচওয়া বিশেষণ, কি বাহাদুর সমাস, কি শ্লেষ ! ও সব মড়ার লক্ষণ। যখন দেশটা উৎসন্ন যেতে আরম্ভ হ’ল, তখন এই সব চিহ্ন উদয় হ’ল । ওটি শুধু ভাষায় নয়, সকল শিল্পতেই এল । বাড়ীটার না আছে ভাব, গা • ভঙ্গি ; থামগুলোকে কুঁদে কুঁদে সারা ক’রে দিলে । গয়নাট। নাক ফুড়ে ঘাড় ফুড়ে ব্রহ্মরাক্ষসী সাজিয়ে দিলে, কিন্তু সে গয়নায় লতা-পাত চিত্র-বিচিত্রর কি ধুম ! গান হচ্ছে, কি কান্না হচ্ছে, কি ঝগড় হচ্ছে—তার কি ভাব, কি উদ্দেশ্য, তা ভরত ঋষিও বুঝতে পারেন না ; আবার সে গানের মধ্যে প্যাচের কি ধুম ! সে কি আঁকাবাকা ডামাডোল—ছত্রিশ নাড়ীর টান তায় রে বাপ ! তার উপর মুসলমান ওস্তাদের মকলে দাতে দাত চেপে, নাকের মধ্য দিয়ে আওয়াজে সে গানের আবির্ভাব ! এগুলো শোধরাবার লক্ষণ এখন হচ্ছে, এখন ক্রমে