পাতা:স্মৃতিকথা (জ্ঞানদানন্দিনী দেবী).djvu/১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
 পুরাতনী
১৮

চেয়ে মিষ্টি যে জিরেন রস তাই আনত, আমাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে খাওয়ানো হত। বাপের বাড়ী ছেড়ে অবধি সেরকম রস আর কখনো খাইনি। খুব সুগন্ধ নতুন খেজুর গুড়ও তারাই এনে দিত, তেমন গুড়ও আর কখনো পাইনি। পুকুরধারের বড় কলাবাগানে মা একজন গরিব ক্যাওড়াব মেয়েকে থাকতে জায়গা দিয়েছিলেন, সে সেখানে ঘর বেঁধেছিল। সে আমাদের উঠোনের ছড়া ঝাঁট-এর কাজটা করত, ওঁরা তাকে খেতে দিতেন। তার একটু পয়সা রোজগার করবার দরকার হলে সে মাকে এসে বলত—মা ঠাকরুণ, একখানা ভাল কাপড় আর কিছু গয়না যদি আমাকে দেন তো আমি সাজগোজ করে দুচার বাড়িতে গিয়ে ক্ষুদে-নাচন নেচে কিছু পয়সা যোগাড় করে আনতে পারি। মা তাকে একখানা ভাল শাড়ি ও কিছু গয়না দিতেন, সেইগুলো নিয়ে সে নাচ সেরে আবার দু একদিনের মধ্যে ফিরিয়ে দিত, মা তার উপর গঙ্গাজল ছিটিয়ে ঘরে তুলতেন। মুসলমান পাড়াপড়শীরাও মা ও বাবামশায়ের কাছে এসে এমন সহজভাবে আপনার জায়গা বুঝে নিয়ে সেখানে বসত ও গল্প করত যাতে কোন পক্ষের কোন দ্বিধাবোধ বা মনোমালিন্যের কারণ কিছুমাত্র থাক্‌ত না। তাদের বাগানের কোন নতুন ফল বা তরকারি হলে তারা কত আহ্লাদের সহিত আমাদের এনে দিত। মা বাবামশায়রাও নিজের ঘরের তৈরী বা বাগানের কোন জিনিস কত খুশির সঙ্গে তাদের দিতেন।