পাতা:স্মৃতির রেখা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্যই থাকে, কোন প্রচার-বিভাগের বিশদ চিত্তাকর্ষক প্যাম্মফলেটের মতন না হয়ে ওঠে। সাহিত্য ও আর্টের জাত নষ্ট হয় তখনি, যখন এ অপরন্তর কোন উদ্দেশ্য সাধতে গিয়ে আপনার মূল সাধনা-অৰ্থাৎ সমসাময়িক সমস্যারও অতীত শাশ্বত সৌন্দৰ্য-সৃষ্ট্রির প্রেরণা থেকে বিচ্যুত হয়। মনে রাখতে হবে স্বধৰ্ম ত্যাগ করা ভয়াবহ-অনেক কিছুর মত এক্ষেত্ৰেও । তারপর আমরা আনতে পারি।-- সাহিত্যের সঙ্গে নীতি ও কল্যাণবুদ্ধির সম্পর্কের কথা । সাহিত্যে সুনীতি দুনীতি, শ্লীলতা অশ্লীলতা ইত্যাদি নিয়ে প্রত্যেক দেশের সাহিত্যের ইতিহাসেই অনেক ঝড় বয়ে গিয়েছে। শ্লীলতা ও অশ্লীত সম্বন্ধে আমরা এই বলতে পারি যে, বাইরের পৃথিবী এবং মানুষের জটিল জীবন-কাহিনী তাদের অন্তর্নিহিত রসরূপে তখনই আমাদের অভিভূত করতে পারে, যখন আমরা এদের একই সঙ্গে ইন্দ্ৰিয়ের মধ্য দিয়ে এবং ইন্দ্ৰিয়াতীতরূপে আমাদের মানস চেতনায় পাই । এইজন্য আদিরসও যখন মধুর রসে পরিণত হয়, তপন তা হয় আর্ট। কামজ প্রেমের কথা বলতে গিয়েও কবি যখন নিরাসক্ত কুতুহলে অতীন্দ্ৰিয় ব্যঞ্জনার সৃষ্টি করে চলেন, তখনই তা হয় আর্ট । তখন তা আর শ্লীলও থাকে না, অশ্লীলও নয় । সঙ্কীর্ণ অর্থে নৈতিকতার মানদণ্ড সাহিত্যের প্রতি প্রয়োগ করা যায় না। অবশ্য, কিন্তু যে বৃহৎ কল্যাণবুদ্ধি আমাদের সকলের স্রষ্টার মনে তার জগৎ সৃষ্টির বেলায় ছিল বলে আমরা কল্পনা করি, রস-স্রষ্টাকে ধ্যাননেত্ৰে তাকে পেতে চেষ্টা করা প্রয়োজন । কারণ, কি জীবনে, কি সাহিত্যে-শক্তি ও প্ৰতিভার সঙ্গে প্রেম ও সত্যবৃদ্ধি যুক্ত না হ’লে স্থায়ী কিছুর প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয় না । সমাজের প্ৰচলিত নীতি-প্ৰথাকে সাহিত্যিক নির্মম আঘাত করতে পারেন, কিন্তু শুধু সত্যের জন্যই পারেন, ব্যক্তিগত খেয়াল চরিতার্থ করবার জন্য নয়। সাহিত্যিক বাস্তৰ জগতের প্রতি বিশ্বস্ত থেকে তার চিত্র অ্যাকবেন । কিন্তু তার অন্তদৃষ্টি যথেষ্ট পরিষ্কার হ’লে তিনি দেখবেন যে বাইরের জগতে যা ঘটে, তার চেয়ে লেখকের মনের জগতে আর এক মহত্তর ব্যঞ্জনাময় বাস্তব আছে ; এবং, যদিও মানুষের জীবন এত বিচিত্র ও মোহনীয়রূপে জটিল, কারণ পাপ দুর্বলতা পদস্থলনের কাহিনী তার পক্ষে অত্যন্ত স্বাভাবিক, তবুও সে যেখানে বড়, সেখানে তার রূপ কেবল এইই নয়। তা ছাড়া, বৃহত্তর অর্থে নীতিবোধ, জীবন সমাজের মূল সত্তার সঙ্গে জড়িত ; সাহিত্য থেকে তাকে কি আমরা বিচ্ছিন্ন করতে পারি ! মাঝে মাঝে একটা কথা শোনা যায় যে, আমাদের মত পরাধীন দরিত্র দেশের সঙ্কীর্ণ সমাজের মধ্যে কথা-সাহিত্যের উপাদান তেমন মেলে না । “আমাদের W)