পাতা:স্মৃতির রেখা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পাশের ঘরে কে একজন গান গাচ্ছে আর বেহালা বাজাচ্ছে-বাঙ্গালী মনে হচ্ছে। “ওগো মাঝি তরী হেথা” গান ধরেছে। একটা জিনিষ নতুন ঠেকছে। কয়দিন হাতে অনেক কাজ, দেখি কি করি । আজ ছিল বৃহস্পতিবার-আমাদের দেশের হাটবার । ষ্টীমারের ডেকে ব’সে ব’সে কেবল মনে ভেবেছি আমাদের বঁাশ বনে ঘেরা ভিটাটিতে দূর শৈশবের একদিনে সামনের পুরোনো পাচালটা দেখতে দেখতে হাটে বেরুচ্ছি। খানসামা চ দিয়ে গেল, চুমুক দিতে দিতে বার বার সেই কথাই মনে আসতে লাগল। উপরের ডেক আজ ছিল বড় নিৰ্জন, ব’সে ভাববার বড় সুবিধা । মানসিক ঘুম ল’লে একটা জিনিস আছে-শারীরিক ঘুমের চেয়েও তাতে মানুষকে লক্ষ্মীছাড়া ক’রে ফেলে। দেহে সজাগ থাকা কঠিন না হ’তে পারে কিন্তু মনে সজাগ থাকা কঠোর সাধনার ওপর নির্ভর করে । ,সটা মাঝে মাঝে বুঝতে পারি । ৷৷ ১৮ই জানুয়ারা, ১ মে ২৮ ৷৷ এই দিনটাতে বড় আনন্দ পেয়েছিলাম সাজকীরটিলায় । দুপুরের পর আজ হেঁটে সাজকী চ’লে গেলাম। উচু টিলাটার ওপর তেতুলগাছটার তলায় চুপ ক’রে অনেকক্ষণ নির্জনে ব’সে বসে চারদিকের রৌদ্রদীপ্ত মধ্যাহ্নের অপূৰ্ব্ব । শাস্তির মধ্যে শ্যামল তালশীর্ষগুলোর দিকে চেয়ে রইলাম । কত বছর আগেকার সে শৈশব সুরাটা যেন বাজে-এক পুরোনো শান্ত দুপুরের রহস্যময় সুর। কত দিগন্তব্যাপী মাঠের মধ্যে এই শান্ত দুপুরে কত বটের তলা, কত মধ্যাহ্ন। আবার যেন ফিরে আসে পচিশ বছর পরে । এই শাস্ত স্তব্ধ মধ্যাহ্নে কেবলই মনে পড়ে জীবনটা কি-তা ভেবে দেখতে হবে । এই পঞ্চাশ ষাট বছরের এবারকার মত জীবনে কি সারাজীবন ফুরিয়ে গেল ? এই দুপুর, এই প্রথম বসন্তের আবেশ, এই নীল আকাশ, এই বাঁশের শুকনো পাতা ও পোলার আহবান, তেলাকুচালতার দুলুনি-এ সব যে বড় अळणी क्ल ! 晚 কে জানে হয়তে। যদি আসতেই হয় তবে হাজার বছর পরে । কারণ পার্থিব জীবন ছাড়া আরও একটা অপার্থিব জীবন ধারা কল্পনা করতে পারা যায় যাতে আনন্দ পা সৌন্দৰ্য্য আরও ক্রমপরিস্ফুট হবে—সৌন্দর্ঘ্যের সত্যের উপভোগই জীবনের উদ্দেশ্য, এ সম্বন্ধে আমার কোনো সন্দেহ নাই। ጓ ዓ