পাতা:স্মৃতির রেখা - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্থান মরুভূমি নয়—তরুণ-মুখের হাসি-কান্নায়, সে-সব অজানা দূরের জগতও জাগ্ৰত প্ৰাণ-স্পন্দনে ভরা, সেখানেও বিচিত্ৰ সন্ধ্যাকাশে বিচিত্র বনপৰ্ব্বতের নিৰ্জনতায় বিরহী একা বসে প্রিয়ার কথা ভাবে, ম৷ হারানো ছেলের স্মৃতিতে চোখের জল ফেলেন, দেশকৰ্ত্তারা বড় বড় কাজ করেন, বড় বড় যুদ্ধ বিগ্ৰহ হয় ! এই পৃথিবীতে এই মন্তোষের মনের সুখ-দুঃখ নিযেই ভগবানের অপূর্ব কাব্য। এর সঙ্গে জীব-জন্তুর, গাছপালাব দুঃখ তার মনে আসে যদি, তবে তাব আনন্দের তুলনা কোথায় ? ৷৷ ১৩ই এপ্রিল, ১৯২৮ ৷৷ ৩০শে চৈত্র, ১৩৩৭ ৷৷ নব-বর্ষের প্রথম দিনটা । অনেককাল আগের শৈশবের সেই-সব কালবৈশাখীর দিনের কথা মনে পড়ে। সেই বৃষ্টির গন্ধ, মেঘান্ধকার । আকাশের মায়ায় মুগ্ধ হ’য়ে ঘরের কোণে বসা, কঁথা পাতা, শিল-পড়ার আশায় আগ্রহে আকাশের দিকে ঘন-ঘন চাওয, ঘরের দাওযায় চেয়ার পেতে মেঘান্ধকার আকাশের দূর পূর্বপ্রান্তে চেয়ে বিদ্যুৎ-চমক-বুষ্টির গন্ধ উপভোগ করতে করতে মনে পড়ল কত কথা। অনেকদূরে আজ আমার গ্রামে হয়তো চড়কের গোষ্ঠবিহার, ছেলেবেলার মত মেলা হচ্ছে, কত হাসিমুখ ছেলেমেয়ে, পাড়াগায়ের কত মাটির ঘর থেকে এসেছে-এতক্ষণ লাঠিখেলা চলেছে-পাঁচিশ বৎসর আগের মত হয়তো । পাঁচশ বৎসর আগের ...স বালকের কথা মনে হয়, যােব মনে কালবৈশাখীর অপূর্ব বাৰ্ত্তা আনতো ! ত্ৰিশ পঞ্চােশ একশো হাজার তিন হাজার বছর কেটে যাবে । তিনি হাজার বছর পরোকার সে বাংলার ছবি আমি এই মেঘন্ধকার নির্জন সন্ধ্যাটিতে বাংলা থেকে দূরের দেশে এক জঙ্গল-পাহাড়ের ধারের ঘরটিতে ব’সে মনে আনতে চেষ্টা করি। হয়তো সম্পূর্ণ নতুন ধরনের সভ্যতা, যার বিষয় আমরা কল্পনা করতেও সাহস পাই না, সম্পূর্ণ নতুন ধরনের রাজনৈতিক অবস্থা তখন জগতে এসেছে । হয়তো ইংরেজি-জাতির কথা, প্ৰাচীন গ্ৰীক রোমানদের মত ইতিহাসের গল্পের বিষয়ীভূত হয়ে দাড়িযেছে। রেল ষ্টীমাব এরোপ্লেন টেলিগ্ৰাফ তখন প্রাচীন যুগের মানব-সভ্যতার কৌতুহলপ্ৰদ নিদর্শন-স্বরূপ-সে ভবিষ্যৎযুগের মানবের চিত্ৰশালিকায় রক্ষিত হচ্ছে। বৰ্ত্তমান বাংলা ভাষা, তখন আর কেউ বুঝতে পারবে না, হৰ্ষতো এ ভাষা একেবারে লুপ্ত হ’য়ে গিয়ে এর স্থানে সম্পূর্ণ নতুন এক ধরনের ভাষা প্রচলিত হ’য়েছে। বহুদূর ভবিষ্যতের ছবি ! o os