পাতা:স্রোতের গতি - ইন্দিরা দেবী (১৯২১).pdf/২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০
স্রোতের গতি

দুর্ভাগ্যে কিরণ তাঁহাকেও জয় করিয়াছে। তাঁহার স্বামী তাঁহাকে দিয়া বারাঙ্গনার পরিচর্য্যা করাইয়া লন নাই। সর্ব্বস্ব কাড়িয়া লইয়া তাঁহাকে দিয়াই সপত্নীকে বরণ করাইয়া ঘরে তুলেন নাই। তাহার পর আসন্নমৃত্যু বুঝিয়া চাকর দিয়া তাঁহাকে একবস্ত্রে বাপের বাড়ী পাঠাইয়াও দেন নাই। তবু কিরণ মরণকালেও সেই স্বামীকে দেখিতে, তাহার পায়ের ধূলা পাইতে চাহিয়াছিল। তাহার শেষ-দৃষ্টি শেষ-বাক্য সেই পাষণ্ডের উদ্দেশেই ব্যয়িত হইয়াছিল। “এলেন না? জন্মশোধ একবার দেখে যেতে পেলাম না?”—এই ছিল তার শেষ কথা। সে নিজের ললাটে হাত দিয়া বলিয়াছিল, সবই তাহার ভাগ্য; স্বামীকে সে এজন্য কোন কটু কথা বলে নাই, নিন্দা করে নাই। জন্মান্তরে যেন তাঁহাকে সুখী করিতে পারে, ইহাই ছিল তাহার কামনা। হা রে অভাগিনি নারি! অস্থি-মজ্জায় অন্তরে-বাহিরে দাসীত্বের শৃঙ্খল কি এমনি করিয়াই পরিতে হয়? এ হীনতার বন্ধন কি জন্মান্তরেও মুক্ত হইবার নয়? যদি কামনার কিছু থাকে, চাহিতেই যদি হয়, তবে বল— “হে ভগবন্, নারীজন্ম যেন আর না হয়।”

 এই মাসীমার শিক্ষা ও সাহচর্য্যে শৈশব অতিবাহিত হওয়ায়, যৌবন অমিয়াকে যে পুরুষদ্বেষিণী করিয়া তুলিবে,