পাতা:হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা - হরপ্রসাদ শাস্ত্রী (১৯১৬).pdf/৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

[ ২৭ ]

অপণে রচি রচি ভবনির্বাণা।
মিছেঁ লোঅ বন্ধাবএ আপনা॥
অম্ভে ন জাণহুঁ অচিন্ত জোই।
জাম মরণ ভব কইসণ হোই॥
জইসো জাম মরণ বি তইসো।
জীবন্তে মঅলেঁ ণাহি বিশেসো॥
জাএথু জাম মরণে বি সঙ্কা।
সো করউ রস রসানেরে কংখা॥  [পত্রাঙ্ক ৩৮]

 সরোরুহবজ্রের দোঁহাকোষের কথা এক বার বলা হইয়াছে, কিন্তু তিনি যে একখানি দোঁহাকোষ লিখিয়াছিলেন, এমন নহে; তিনি অনেকগুলি দোঁহা লিখিয়া গিয়াছেন। তাঁহার একখানি দোঁহার নাম ‘কথস্য দোঁহা,’ ইহার টীকাও তিনি লিখিয়া গিয়াছেন। তাঁহার কয়েকটি গাথাও আছে। ইনি সে কালে অনেক বই লিখিয়া গিয়াছেন, সংস্কৃতে ইঁহার তান্ত্রিক পুস্তক অনেকগুলি আছে।

১০। কম্বলাম্বরপাদ

 ইঁহাকে কখনও কখনও শুদ্ধ কম্বল এবং বাঙ্গালায় কামলি বলিয়া থাকে। ইনি ‘প্রজ্ঞাপারমিতা উপদেশ’ নামে একখানি মহাযানের পুস্তক লিখিয়াছেন। ইঁহার অধিকাংশ পুস্তকই বজ্রযান-সম্প্রদায়ের জন্য লেখা। ইনি নিজে যুগনদ্ধ হেরূকের উপাসনা করিতেন এবং ঐ উপাসনাক্রম লিখিয়া গিয়াছেন। ইঁহার বাঙ্গালা পুস্তকের নাম ‘কম্বলগীতিকা’। ইঁহার একটি গান পাওয়া গিয়াছে; তাতে ৪টি সংস্কৃত শব্দ আছে; ‘করুণ,’ ‘বহু,’ ‘বাস,’ ‘সদ্গুরু’; সংস্কৃত হইতে উৎপন্ন শব্দ চারিটি আছে—‘উই,’ ‘কইসে,’ ‘গঅণ,’ ‘মহাসুহ’। চলিত বাঙ্গালা ৯টি,—‘উপাড়ি,’ ‘কি,’ ‘কে,’ ‘গেলি,’ ‘চাপি,’ ‘নাহি,’ ‘মেলিল,’ ‘মেলিমেলি,’ ‘মিলিল’। আর পুরাণ বাঙ্গালা ২২টি।

খুণ্টি উপাড়ী মেলিলি কাচ্ছি।
বাহতু কামলি সদ্গুরু পুচ্ছি॥  [পত্রাঙ্ক ১৬]

 কম্বলাম্বরের এক শিষ্যের নাম প্রজ্ঞারক্ষিত, ইনিও কম্বলের মতানুসারে বজ্রযানের অনেক পুস্তক লিখিয়া গিয়াছেন।

১১। কঙ্কণ

 ইনি কম্বলাম্বরের বংশধর; ‘চর্য্যাদোঁহাকোষগীতিকা’ নামে ইঁহার একখানি পুথি আছে। ইঁহার একটি গান পাইয়াছি, তাতে চারিটি সংস্কৃত শব্দ, ৮টি সংস্কৃত হইতে উৎপন্ন, ১৯টি পুরাণ বাঙ্গালা ও ৮টি চলিত বাঙ্গালা কথা আছে, উহার মধ্যে ‘বিহাণ’ = প্রাতঃকাল, ‘থাকি,’ ‘সুন’ = শূন্য।