পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হারানাে খাতা।
১২১

মন্তব্য সম্বন্ধে দুজনে একটু মতের অনৈক্য ঘটিতেছে। ম্যানেজার সেদিন এমন একটুখানি আভাস দিলেন তার ভাবটা যেন নরেশ তাঁহার স্বাধীন ও নির্ভীক ভাব সর্ব্বদা বজায় রাখিতে চাহিলে উহার এখানে চাকরী করা একটু অসম্ভব হইয়া পড়িতেছে, এই রকমেরই। নরেশ এই বিষয়েই কিছু ভাবিতেছিলেন।

 পরিমল আসিয়া প্রবেশ করিল।

  “নিরঞ্জনের কাছ থেকে এই এক্ষুণি পড়া শেষ করে এলেম। ওর কাছেই আমি পড়বো, তুমি রাগ করো না।”

 নরেশ একটা অপ্রিয় আলোচনার পরেই অপ্রিয় চিন্তার (এবং শুধু এই একটীই নয় আরও অনেক গুলারই) হাত হইতে মুক্তি পাওয়ায় হয়ত মনের মধ্যে একটুখানি স্বাচ্ছন্দ্যানুভবই করিলেন। চোখ না ফিরাইয়া মুখ তুলিয়া বলিলেন, “কই না, রাগ তো করিনি।”

 পরিমল তাঁহার গা ঘেঁসিয়া কাঁধের উপর হাত রাখিয়া বলিল “তা বই কি, রাগ নাকি আর তুমি করতে বাকি রেখেছিলে! কদিন ধরে দেখাই পাইনে, কথাই কও না, আবার বলা হচ্চে, ‘রাগ করেননি!’ মাগো! এম্‌নি করেই কি তা বলে শাস্তি দিতে হয়? ওর চাইতে যে কান মলে দেওয়াও ঢের ভাল ছিল।”

 নরেশ নিজের মনের চিন্তা তন্ময়তায় যে স্ত্রীর প্রতি কর্ত্তব্যে এতটাই ত্রুটী ঘটিতে দিয়া ফেলিয়াছেন, তৎক্ষণাৎ তাহা বুঝিয়া মনে মনে লজ্জিত ও ঈষৎ দুঃখিত হইয়া পড়িয়া তাহার হাত দুটি নিজের কণ্ঠে জড়াইয়া দিলেন ও তাহাকে নিজের কাছে টানিয়া লইয়া হাসিবারভাবে কহিলেন, “তাই নাকি? এসো তাহলে কান মলে দিই।” এই বলিয়া তাহার লজ্জায় রাঙ্গা কর্ণমূল দুই আঙ্গুলে ধরিয়া নাড়িয়া দিলেন।

 পরিমল ওইটুকু আদরেই একেবারে গলিয়া পড়িল। তারপর অনেক-