পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২৮
হারানাে খাতা।

পক্ষে কণ্টকারণ্যের স্থানাধিকার করে। তার পরেও যদি জোর করিয়া তাহাকে সেখানে পড়িয়া থাকিতে হয়, তো সে কাঁটা শুধু তার শরীরকে নয়, তার মনকে শুদ্ধ তীক্ষ্ণ ধারে বিঁধিয়া বিঁধিয়া রুধিরাক্ত ও অসাড় করিয়া দেয় (তাই অধীন জাতির মধ্যে স্ত্রী পুরুষের দিনে দিনে দুর্ব্বলদেহ ও ক্ষীণ প্রাণ হইয়া ধ্বংসোন্মুখ হইয়া পড়া অনিবার্য্য)। আমারও সেই অবস্থা। শুধু নিজেকে লইয়া দিন কাটা নয়, নিজের কাছে নিজের দাম এতটাই কম হইয়া গিয়াছে যে সে কি বলিব,— এটা যদি আমার কোন তৈজস পত্রের সামিল হইত তো এটাকে জঞ্জালের সঙ্গে ঝাঁটাইয়া আমি কোন কালে আদি গঙ্গায় ভাসাইয়া দিতাম।

 আমায় কাজ দিন,—কোন—কোনও একটা কাজ দিন। কোন বালিকা বিদ্যালয়ের চাকরী আমি পাই না কি? বেশী না জানি ‘ক খ’ ও তো ছোট মেয়েদের শিখাইতে পারিব। কোন ভদ্র পরিবারে গান শিখাইবার অধিকার কি আমার আছে? যেখানে আমি আদরের সহিত অভ্যর্থিতা হইব, সেই আমার স্বজাতি-বর্গের মধ্যে পা দিবার কথা ভাবিতে গেলেও আমার বুক ভয়ে কাঁপে। অথচ আমি জানি সেইখানেই আমার প্রকৃত কার্য্যক্ষেত্র। যদি তাদের মধ্যের একটা জীবনও আমার দ্বারা রক্ষিত হয়! জানি আমার মত পুণ্য সঞ্চয়হীনার পক্ষে সে পুণ্যের প্রলোভন নেহ্যৎ সামান্য নয়। কিন্তু আমার তাহাতে ভরসা হয় না। মনের মধ্যে আমার প্রৌঢ়ত্ব দেখা দিলেও বয়সে আমি আজও ত কুড়ির সীমা ছাড়াইতে পারি নাই। নিজের উপরে বিশ্বাস আমার দৃঢ় হইলেও পরের উপর এখনও যে ভয় রাখতে হয়। তদ্ভিন্ন যাহাদের আমি পাপ পথ হইতে ফিরাইয়া আনিব, তাদের আশ্রয় কোথায়? সেও যে