পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সপ্তদশ পরিচ্ছেদ

না হয় দেবতা আমাতে নাই।—
মাটি দিয়ে তবু গড়ে তো প্রতিমা সাধকেরা পূজা করেত তাই?
একদিন তার পূজা হয়ে গেলে চিরদিন তার বিসর্জ্জন,
খেলার পুতলি করিয়া তাহারে আর কি পূজিরে পৌরজন?

—কাহিনী

 বিশ্বপ্রিয়কে নরেশ সুষমা সম্বন্ধীয় সমস্যার কথা জানাইয়া পরামর্শ চাহিলেন। বিশ্বপ্রিয় সব কথাই নিবিষ্ট মনে শ্রবণ করিল কিন্তু সুষমার সঙ্গে নরেশের যে কখন কোন অসৎ সম্বন্ধ ছিল না, এই কথাটা সেও মনে মনে ঠিক বিশ্বাস করিতে পারিল না! রাজা নরেশের যে প্রবল প্রতাপাম্বিতা ‘উপসর্গ’টার জন্য তিনি কলিকাতা মহানগরীর অনেকখানি আত্মীয়রূপে পরিগণিত হইয়া পড়িয়াছিলেন, অর্থাৎ যথার্থ বড়লোকের ছেলের দলে স্থান লাভ করিবার নেহাৎই অযোগ্য নহেন বলিয়া স্বীকৃত হইয়াছিলেন এবং অন্যসকলের মত বন্ধু সমাজে তাঁর ‘নিজ জনের’ পরিচয় করাইয়া দিতে উহাকে পাশে লইয়া, কি বাঙ্গালা, কি ইংরাজী আর কি পার্শী থিয়েটায়ের রিজার্ভ বক্সে বসিয়া অভিনয় না দেখায়, বাগানের মজলিসে তাহার ‘মুজুরা’ না করানোয় ধনী মহলে যে নিন্দার সীমা ছিল না, এসব তো আর লুকানো কথা নয়। আজ হঠাৎ একেবারে জলজ্যান্ত সেই জীবটীকে বেমালুম উড়াইয়া দিতে চাহিলে সে উড়িবে কেন? বন্ধুদের মধ্যে নরেশের আড়ালে অনেকেই তাহার সম্বন্ধে—অবশ্য যাদের একটু কাব্য-রসোপভোগ সামর্থ্য ছিল— উল্লেখ করিতে হইলে ঠাট্টা করিয়া তাহাকে ‘বসন্ত সেনার চারু দত্ত’ বলিয়া উল্লেখ করিতেন। বিশ্বপ্রিয় নিজেও কখন কখন যে না করিয়াছে তা নয়। অতএব সে স্থির করিল,