পাতা:হিমালয় - জলধর সেন.pdf/৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*8 হিমালয় যে, ছুটে গিয়ে এই মুক্ত প্ৰকৃতির সুন্দর শোভার মধ্যে এই চিস্তাক্লিষ্ট বিষঃ মনটাকে খানিক প্ৰফুল্ল কোরে নিয়ে আসি । কিন্তু স্বামীজি অত্যন্ত কাতর, তঁাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পালুম না ; তবু যে তার সেবা কোর্তে পাল্লম, এই একটা আনন্দের কারণ হলো। কোন রকমে সন্ধ্যাটা কেটে গেল, কিন্তু রাত্রে বিপদের উপর পিপদ উপস্থিত , আমার অত্যন্ত জর ও রক্ত :- মাশয় হোলো। রাত্ৰি যত শেষ হোতে লাগলো রোগও তত বাড়তে লাগল। ক্ৰমে আমি উত্থানশক্তি-বৃহিত হয়ে পড়লুম ; সমস্ত পথশ্রমের কষ্ট আমার বলহীন, নিজীব দেহটা আক্রমণ কোলে ; হাত প। নাড়বারও ক্ষমতা রইল না ! শরীরের অবস্থা এ রকম হোলে ও আমার চিন্তাশক্তি তখন বেশ তীব্র ছিল ; আমার মনে হলো উসার আলোকে চরাচর সুরঞ্জিত হবার আগেই হয়তো হিমালয়ের এই নির্জন উপতাকায় আমার ইহ জীবনের ভ্ৰমণ পৰ্য্যবসিত হোচে । সন্ন্যাসী হয়ে বেরিয়ে মনে বড় অহঙ্কার হেয়েছিল যে, যখন মায়াজাল ছিন্ন করা এত সহজ, তখন লোকে তা পারে না কেন ? এই তি আমি পেরেছি; কিন্তু মৃত্যু যখন জীবনের পাশে এসে দাড়ালো, মৃত্যুর সেই উচ্চ অনাবৃত তটপ্রান্তে দাড়িয়ে যখন প্রতি মুহূর্তে সেই বিস্মৃতিপূর্ণ, গভীর অতলে আমার পদস্থািলন হবার সম্ভাবনা দেখলুম, তখন সংসাবে ? সমস্ত মায়া মোহ এসে আচ্ছন্ন কোলে । মনে হোলো যাদের ফেলে / ছি, সন্ন্যাসী বোলেই যে তাদের ছেড়ে আসতে পেরেছি তা নয় ; তাদের একবার দেখা বার আশা আছে বোলেই তাদের ফেলে আসতে পেরেছিলুম, বা ধন ছিড়িতে পারি নি । যখন এই সকল গম্ভীর চিন্তা আমার মনে উদয় হোয়েছিলো, তখন স্বামীজি তঁার রোগশষ্যা ছেড়ে বহুকষ্টে একবার উঠে আমার মানমুখ ও ক্লান্ত চক্ষুর দিকে অত্যন্ত ব্যাকুল স্নেহপূর্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে দেখছিলেন। সন্ন্যাসজীবন আরম্ভ কোরে, যে সব অনিয়ম ও অত্যাচার কোরেছি, তাতে কোরেই আজ এই বন্ধুহীন দেশে পর্বতের মধ্যে এমন কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়েছি বোলে স্বামীজি অত্যন্ত কাতর। হেয়ে পোড়লেন। তার কাতরতা।