পাতা:হেক্‌টর বধ - মাইকেল মধুসূদন দত্ত.pdf/৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৪
হেক্‌টর বধ।

যত বার তিনি রণক্ষেত্রবর্ত্তী বিপক্ষ পক্ষের প্রতি দৃষ্টিনিক্ষেপ করিলেন। অগ্নিকুণ্ড মণ্ডলীর একত্র সংগৃহীত অংসুরাশি দর্শনে তাহার দর্শনেন্দ্রিয় অন্ধ হইয়া উঠিল। অনিলানীত মুরলী ও বেণু প্রভৃতি অন্যান্য বিবিধ সঙ্গীত যন্ত্রের সুমধুর বিশুদ্ধ তানলয়ে মিশ্রিত কোলাহল ধ্বনিতে শ্রবণালয় যেন অবরুদ্ধ হইয়া উঠিল। যত বার তিনি স্বসৈন্যের প্রতি দৃষ্টি পরিচালনা করিলেন, তাহাদিগের নিরানন্দ অবস্থায় তিনি আক্ষেপ ও রোষে কেশ ছিঁড়িতে লাগিলেন। কতক্ষণ পরে যে শয্যাক্ষেত্র দুর্ভাবনা রূপ কৃষীবল তীক্ষ্ণ কণ্টকময় করিয়াছিল, সে শয্যা পরিত্যাগ করিয়া মহারাজ গাত্রোত্থান করিলেন।

 প্রথমে বক্ষদেশ সুবর্ণ কবচে আবৃত করিলেন। পরে পদযুগে সুন্দর পাদুকাদ্বয় বাঁধিলেন। এবং পৃষ্ঠদেশে এক প্রশস্ত পিঙ্গল বর্ণ সিংহ চর্ম্ম ধারণ করিয়া দক্ষিণ হস্তে স্বীয় সুদীর্ঘ শূল লইলেন। স্কন্দপ্রিয় বীরকেশরী মানিল্যুসও স্বশিবিরে সৈন্যের দুর্দ্দশাজনিত ব্যাকুলতায় নিদ্রা পরিহরণ করিয়া শয্যা ত্যাগ করিলেন, এবং রণের বেশ বিন্যাস করিয়া স্বীয় রাজভ্রাতার শিবিরাভিমুখে যাত্রা করিতেছেন, এমত সময়ে পথিমধ্যে রথীদ্বয়ের সমাগমন হইল। কণিষ্ঠ কহিলেন, হে বন্দনীয়! আপনি কি নিমিত্ত এ সময়ে এ পরিচ্ছদে শয্যা পরিত্যাগ করিয়াছেন, আপনার কি এই ইচ্ছা যে রিপুদলে কোন গুপ্ত চরকে গুপ্তভাবে প্রেরণ করেন! এ ঘোর তিমিরময় রজনী যোগে এ অসাধ্য-অভীষ্ট সিদ্ধি করিতে কাহার সাধ্য হইবে।