পাতা:হেমচন্দ্র.pdf/৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

R হেমচন্দ্র । দিনের দুঃখের ছবি প্রাণে যদি প্রতিবিম্বিত হয়ে থাকৃতে, আর সেই প্রাণ যদি তোমাকে দেখাতে পারতুম, তা হ’লে তুমি দেখতে যে আমি কি কষ্টে এক বৎসর কাটিয়েছি (দীর্ঘ নিশ্বাস ) রজনী এখন ত প্রভাত ছয় নি, লজ্জাভয়ে আমাকে শীঘ্র ছেড়ে যেওনা, যতক্ষণ পারি তোমার চাদ-মুখ দেখি । সরল । নাথ! আকাশের তারা সকল শশি-মুখ দেখতে দেখতে একে একে অস্তগত হয়েছে, এ দুঃখিনীর নয়ন-তারা তোমাকে দেখতে দেখতে যদি সেই রূপ অস্তগত হ’তো, তা হ’লে, নাথ, এই প্রভাতে আমি কি মুখী হ’তুম। হেমচন্দ্র। সরলে, দুঃণীদিগের আশাই একমাত্র অবলম্বন। সরল । নাথ, ও কথা বলা বাহুল্য। আমি এই আশালতাই অবলম্বন ক’রে সম্বৎসর জীবিত ছিলুম ও থাকবো ; কিন্তু নাথ, তোমার খুড়ীমার বাক্য-হুতাশনের প্রখর তাপে বোধ হয় সেই অণশীলতা আর জীবিত থাকে ন। (বিগলিত নেত্ৰ হইতে দুই তিন বিন্দু অশ্রুপতন )। হেমচন্দ্র । ( অনন্তমনে, ছল ছল নেত্রে, আপনার অবস্থা চিন্তন ) আমি যত শীঘ্ৰ পারি তোমাদিগকে এখান থেকে নিয়ে যাব । সরল। নাথ, তোমার সঙ্গে থেকে যদি সন্ধ্যাকালে একমুট আহার হয়, অতি সামান্য কুটীরে থাকৃতে হয়, আর মাটীতে এই অঞ্চল শয্যা হয়, তাও আমার পক্ষে স্বৰ্গতুল্য। আমি আর এ প্রচণ্ড অহঙ্কার সহ করতে পারিনি, আর সারা দিন শশঙ্কিত হ’য়ে কাটাতে পারিনি। নাথ, মানুষের প্রাণ যে এত কঠিন হয় আমি তা পূৰ্ব্বে জানতুম না । তিন বৎসর পূৰ্ব্বে প্রতিদিন আদর করে আমি যার মাথা বেঁধে দিতুম, আপনি না খেয়ে যাকে খাওয়াতু, ই নাথ, সে এখন আমাকে চাকরাণীর মতন খাটায় ! হায়! যদি এ ক’রেও ক্ষান্ত হ’তো তাহ’লেও সইতে পারতুম্ ; কেননা, আমার এখন অল্প বয়স, বড় দুঃখ হ’লে এক দিন না খেয়েও কাটালে বড় কষ্ট হয় না, কিন্তু ঠাকুরণ, বুড়মানুষ (আহা! উনি কত দিন বা বাচৰে ) ওঁর উপর আমার মতন ব্যবহার! গরীবের কি কিছু মান নাই? ভাদের কি প্রাণ নাই ? সদা তাচ্ছিল্য করলে কি তার প্রাণে ব্যথা পায় না?