পোকা-মাকড়/ষষ্ঠ শাখার প্রাণী/ঝিল্লীপক্ষ পতঙ্গ/মৌমাছির দল

উইকিসংকলন থেকে

মৌমাছির দল

 প্রত্যেক দলে হাজার হাজার মাছি থাকে, কিন্তু আশ্চর্য্যের বিষয়, কোনো মাছি নিজের দল ছাড়িয়া অন্য দলের চাকে যায় না এবং গেলেও সেখানে জায়গা পায় না। তোমাদের গ্রামে যদি তিন হাজার লোক বাস করে, তবে প্রত্যেক লোককে চিনিয়া রাখা কত কঠিন, তাহা মনে করিয়া দেখ। কিন্তু মৌমাছিরা নিজের দলের সকল মাছিকেই চিনিয়া রাখে। যদি অপর চাকের মাছি ভুল করিয়া তাহাদের চাকে আসিতে চায়, তবে পাহারাওয়ালা মাছিরা নূতন মাছিকে তাড়াইয়া দেয়। মাছিরা দলের সকলকে কি-রকমে চিনিয়া রাখে, তাহা বোধ হয় তোমরা জান না। যাঁহারা মৌমাছির চলা-ফেরা অনুসন্ধান করিয়াছেন, তাঁহারা বলেন, প্রত্যেক চাকের মৌমাছিদের গায়ে এক-এক রকম গন্ধ আছে। এই গন্ধ শুঁকিয়া মাছিরা আপনার দলের মাছিদিগকে চিনিয়া লয়। পরীক্ষা করিয়া দেখা গিয়াছে, যদি কোনো চাকের কতকগুলি মাছিকে তিন-চারি ঘণ্টা ধরিয়া রাখা যায়, তাহা হইলে উহাদের গায়ের গন্ধ লোপ পায়। তখন সেই মাছিদিগকে ছাড়িয়া দিলে, তাহারা মহা বিপদে পড়ে। গায়ের গন্ধ না থাকায় নিজের চাকের মাছিরা তাহাদিগকে চিনিতে পারে না। কাজেই অনেক সাধ্যসাধনা করিয়াও তাহারা চাকে জায়গা পায় না।

 তোমাদিগকে এ-পর্য্যন্ত কেবল চাকের মাছিদের কথাই বলিলাম। ইহা ছাড়া আরো অনেক রকম মৌমাছি আছে। কিন্তু ইহাদের মধ্যে কেহই চাক বাঁধিয়া একত্র বাস করে না। অনেকেই কুমরে-পোকাদের মত পৃথক্ বাসা বাঁধিয়া বাচ্চাদের লালন-পালন করে। এক রকম মাছি গাছের আঠা জোগাড় করিয়া বইয়ের আলমারির গায়ে বাসা বাঁধে,—ইহারাও মৌমাছি-জাতীয় প্রাণী। আবার এক জাতি মৌমাছিকে গাছের পাতা কাটিয়া বাসা তৈয়ার করিতে দেখা যায়।

 যাহা হউক, মৌমাছির জীবনের সকল কথাই বড় আশ্চর্য্যজনক। এ-রকম ছোট প্রাণী যে এত বুদ্ধি খাটাইয়া চাক বাঁধিয়া বাসা করিতে পারে, ইহা যেন আমাদের বিশ্বাসই হয় না। কিন্তু ইহার সকলি সত্য।