বর্ণপরিচয় (দ্বিতীয় ভাগ, ১৮৭৬)/৪ পাঠ

উইকিসংকলন থেকে

৪ পাঠ।

যাদব।

যাদব নামে একটি বালক ছিল, তাহার বয়স আট বৎসর। যাদবের পিতা প্রত্যহ তাহাকে পাঠশালায় পাঠাইয়া দিতেন। যাদব লেখা পড়া শিখিতে ভাল বাসিত না। সে এক দিনও পাঠশালায় যাইত না; প্রতিদিন পথে পথে খেলা করিয়া বেড়াইত।

 পাঠশালার ছুটী হইলে, সকল বালক যখন বাড়ী যাইত, যাদবও সেই সময়ে বাড়ী যাইত। তার বাপ মা মনে করিতেন, যাদব পাঠশালায় লেখা পড়া শিখিয়া আসিল। এই রূপে, প্রতি দিন সে বাপ মাকে ফাঁকি দিত।

 এক দিন যাদব দেখিল, ভুবন নামে একটি বালক পাঠশালায় পড়িতে যাইতেছে। তাহাকে কহিল, ভুবন, আজ তুমি পাঠশালায় যাইও না। এস দুজনে মিলিয়া খেলা করি। পাঠশালার ছুটী হইলে, যখন সকলে বাড়ী যাইবে, আমরাও সেই সময়ে বাড়ী যাইব।

 ভুবন কহিল, না ভাই, আমি খেলা করিব না। সারা দিন খেলা করিলে, পড়া হবে না। কাল পাঠশালায় গেলে, গুরু মহাশয় ধমকাইবেন, বাবা শুনিলে ক্রোধ করিবেন। আমি আর দেরি করিব না। বেলা হইল, ত্বরায় পাঠশালায় যাই। এই ধলিয়া ভূবন চলিয়া গেল।

 আর এক দিন যাদব দেখিল, অভয় নামে একটি বালক পড়িতে যাইতেছে। তাহাকে কহিল, অভয়, আজ পড়তে যাইও না। এস দুজনে খেলা করি।

 অভয় কহিল, না ভাই, তুমি বড় খারাপ ছোকরা, তুমি এক দিনও পড়িতে যাও না। তোমার সহিত খেলা করলে আমিও তোমার। মত খারাপ হইয়া যাইব। তোমার মত পথে পথে খেলিয়া বেড়াইলে, লেখা পড়া কিছুই হবে না। কাল গুরু মহাশয় বালিয়াছেন, ছেলেবেলা মন দিয়া লেখা পড়া না করিলে, চির কাল দুঃখ পায়।

 এই বলিয়া অভয় চলিয়া যায়। যাদব টানাটানি করিতে লাগিল। অভয় তাহার হাত ছাড়াইয়া পলাইয়া গেল। কহিল, আজ আমি তোমার সব কথা গুরু মহাশয়কে বলিয়া দিব।

 অভয় পাঠশালায় গিয়া গুরু মহাশয়কে যাদবের কথা বলিয়া দিল। গুরু মহাশয় যাদবের পিতার নিকট বলিয়া পাঠাইলেন, তোমার ছেলে এক দিনও পড়িতে আইসে না। প্রতিদিন পথে পথে খেলিয়া বেড়ায়। আপনিও পড়িতে আইসে না, এবং অন্য অন্য বালককেও আসিতে দেয় না।

 যাদবের পিতা শুনিয়া অতিশয় কোপ করিলেন, তাহাকে অনেক ধমকাইলেন, বই কাগজ কলম যা কিছু দিয়াছিলেন, সব কাড়িয়া লইলেন। সেই অবধি, তিনি যাদবকে ভাল বাসিতেন না, কাছে আসিতে দিতেন না, সম্মুখে আসিলে, দূর দূর করিয়া তাড়াইয়া দিতেন।