বহুবিবাহ রহিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক বিচার/চতুর্থ আপত্তি

উইকিসংকলন থেকে

চতুর্থ আপত্তি।


 কেহ কেহ আপত্তি করিতেছেন, বহু কাল পূর্ব্বে এ দেশে কুলীন ব্রাহ্মণদিগের অত্যাচার ছিল। তখন অনেকে অনেক বিবাহ করিতেন। এক্ষণে, এ দেশে সে অত্যাচারের প্রায় নিবৃত্তি হইয়াছে; যাহা কিছু অবশিষ্ট আছে, অল্প দিনের মধ্যেই তাহার সম্পূর্ণ নিবৃত্তি হইবেক। এমন স্থলে, বহুবিবাহ নিবারণ বিষয়ে রাজশাসন নিতান্ত নিষ্প্রয়োজন।

 এক্ষণে কুলীনদিগের পূর্ব্ববৎ অত্যাচার নাই, এই নির্দ্দেশ সম্পূর্ণ প্রতারণবাক্য; অথবা, যাঁহারা সেরূপ নির্দ্দেশ করেন, কুলীনদিগের আচার ও ব্যবহার বিষয়ে তাঁহাদের কিছুমাত্র অভিজ্ঞতা নাই। পূর্ব্বে, বিবাহ বিষয়ে কুলীনদিগের যেরূপ অত্যাচার ছিল, এক্ষণেও তাঁহাদের তদ্বিষয়ক অত্যাচার সর্ব্বতোভাবে তদবস্থ আছে, কোনও অংশে তাহার নিবৃত্তি হইয়াছে, এরূপ বোধ হয় না। এ বিষয়ে বৃথা বিতণ্ডা না করিয়া, বর্ত্তমান কতকগুলি কুলীনের নাম, বয়স, বাসস্থান, ও বিবাহসংখ্যার পরিচয় প্রদত্ত হইতেছে।

হুগলী জিলা।

নাম বিবাহ বয়স বাসস্থান
ভোলানাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ৮০ ৫৫ বসো
ভগবান্ চট্টোপাধ্যায় ৭২ ৬৪ দেশমুখো
পূর্ণচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ৬২ ৫৫ চিত্রশালি
মধুসূদন মুখোপাধ্যায় ৫৬ ৪০ চিত্রশালি
তিতুরাম গাঙ্গূলি ৫৫ ৭০ চিত্রশালি
রামময় মুখোপাধ্যায় ৫২ ৫০ তাজপুর
বৈদ্যনাথ মুখোপাধ্যায় ৫০ ৬০ ভুঁইপাড়া
শ্যামাচরণ চট্টোপাধ্যায় ৫০ ৬০ পাখুড়া
নবকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ৫০ ৫২ ক্ষীরপাই
ঈশানচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ৪৪ ৫২ আঁকড়িশ্রীরামপুর
যদুনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ৪১ ৪৭ চিত্রশালি
শিবচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ৪০ ৪৫ তীর্ণা
রামকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ৪০ ৫০ কোননগর
শ্যামাচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ৪০ ৫০ চুঁচুড়া
ঠাকুরদাস মুখোপাধ্যায় ৪০ ৫৫ দণ্ডিপুর
নবকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ৩৬ ৪৪ গৌরহাটী
রঘুনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ৩০ ৪০ খামারগাছী
শশিশেখর মুখোপাধ্যায় ৩০ ৬০ খামারগাছী
তারাচরণ মুখোপাধ্যায় ৩০ ৩৫ বরিজহাটী
ঈশানচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ২৮ ৪০ গুড়প
শ্রীচরণ মুখোপাধ্যায় ২৭ ৪০ খামারগাছী
ভবনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় ২৩ ৪০ জাঁইপাড়া
মহেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ২২ ৩৫ খামারগাছী
গিরিশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ২২ ৩৪ কুচুণ্ডিয়া
প্রসন্নকুমার চট্টোপাধ্যায় ২১ ৩৫ কাপসীট
পার্ব্বতীচরণ মুখোপাধ্যায় ২০ ৪০ ভৈটে
যদুনাথ মুখোপাধ্যায় ২০ ৩৭ মাহেশ
কৃষ্ণপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ২০ ৪৫ বসন্তপুর
হরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ২০ ৪০ রঞ্জিতবাটী
রমানাথ চট্টোপাধ্যায় ২০ ৫০ গরলগাছা
অন্নদাচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ২০ ৪৫ ভৈটে
দীননাথ চট্টোপাধ্যায় ১৯ ২৮ বসন্তপুর
রামরত্ন মুখোপাধ্যায় ১৭ ৪৮ জয়রামপুর
কেদারনাথ মুখোপাধ্যায় ১৭ ৩২ মাহেশ
দুর্গাচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৬ ২০ চিত্রশালি
গোপালচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ১৬ ৩৫ মহেশ্বরপুর
অভয়চরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৫ ৩০ মালিপাড়া
অন্নদাচরণ মুখোপাধ্যায় ১৫ ৩৫ গোয়াড়া
শ্যামাচরণ মুখোপাধ্যায় ১৫ ৩৫ সোঁতিয়া
জগচ্চন্দ্র মুখোপাধ্যায় ১৫ ৪০ খামারগাছী
অঘোরনাথ মুখোপাধ্যায় ১৫ ৩৬ ভুইপাড়া
হরিশ্চন্দ্র মুখোপাধ্যায় ১৫ ৩২ মোগলপুর
ননীগোপাল বন্দ্যোপাধ্যায় ১৫ ২৪ পাতা
যদুনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৫ ২২ পাতা
দীননাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৫ ২৫ বেলেসিকরে
ভুবনমোহন মুখোপাধ্যায় ১৫ ২৪ ভৈটে
কালীপ্রসাদ গাঙ্গূলি ১৫ ৪৫ পশপুর
সূর্য্যকান্ত মুখোপাধ্যায় ১৫ ৩৫ ভৈটে
রামকুমার মুখোপাধ্যায় ১৪ ৩২ ক্ষীরপাই
কৈলাসচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ১৪ ৪৫ মধুখণ্ড
কালীকুমার মুখোপাধ্যায় ১৪ ৩৫ সিয়াখালা
মাধবচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ১৩ ৫০ বৈঁচী
হরিশ্চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ১৩ ৪০ গরলগাছা
কার্ত্তিকেয় মুখোপাধ্যায় ১২ ৩০ দেওড়া
যদুনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ১২ ৩০ তাঁতিসাল
মোহিনীমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় ১২ ৩০ মালিপাড়া
সাতকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় ১২ ৪০ মালিপাড়া
ব্রজরাম চট্টোপাধ্যায় ১২ ২৫ চন্দ্রকোনা
কৈলাসচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ১২ ৩২ কৃষ্ণনগর
রামতারক বন্দ্যোপাধ্যায় ১২ ২৮ জয়রামপুর
কালিদাস মুখোপাধ্যায় ১২ ৪০ ভূঁইপাড়া
বিশ্বম্ভর মুখোপাধ্যায় ১২ ৩০ বলাগড়
তিতুরাম মুখোপাধ্যায় ১২ ৪০ নতিবপুর
প্রসন্নকুমার গাঙ্গুলি ১২ ৩৬ গজা
মনসারাম চট্টোপাধ্যায় ১১ ৬৫ ভঞ্জপুর
আশুতোষ বন্দ্যোপাধ্যায় ১১ ১৮ তাঁতিমাল
প্যারীমোহন মুখোপাধ্যায় ১১ ৩০ গরলগাছা
লক্ষ্মীনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় ১১ ২৫ বিদ্যাবতীপুর
শিবচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ১১ ৪৫ বিদ্যাবতীপুর
কালীপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ১১ ৩০ ভৈটে
রামকমল মুখোপাধ্যায় ১১ ৪০ নিত্যানন্দপুর
কালীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় ১১ ২৮ বৈঁচী
দ্বারকানাথ মুখোপাধ্যায় ১১ ২৫ বৈঁচী
মতিলাল মুখোপাধ্যায় ১১ ৪৫ বৈঁচী
ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ১১ ৪৫
দুর্গারাম বন্দ্যোপাধ্যায় ১১ ৫০ শ্যামবাটী
যজ্ঞেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায় ১০ ৪৫ আনুড়
প্রসন্নকুমার চট্টোপাধ্যায় ১০ ৩৫ বেঙ্গাই
চণ্ডীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ১০ ৩০ বৈতল
প্রতাপচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ১০ ৪০ বসন্তপুর
কৈলাসচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১০ ৪০ সিয়াখালা
রামচাঁদ মুখোপাধ্যায় ৩৬ যদুপুর
কৈলাসচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ৩০ নপাড়া
সূর্য্যকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় ৪০ বৈঁচী
গোপালচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ৪৫ বৈঁচী
চুনিলাল বন্দ্যোপাধ্যায় ৩২ বৈঁচী
কালীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ৪০ মোল্লাই
গণেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ২০ দেওড়া
দিগম্বর বন্দ্যোপাধ্যায় ৩৫ গুড়প
কালিদাস মুখোপাধ্যায় ৪০ মালিপাড়া
যাদবচন্দ্র গাঙ্গূলি ৩৫ বহরকুলী
মাধবচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ২৫ সিকরে
কেদারনাথ মুখোপাধ্যায় ৩২ বরিজহাটী
ঈশ্বরচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ৪৫ পাতুল
শ্যামাচরণ মুখোপাধ্যায় ৪৫ জয়রামপুর
হরিশ্চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ৬০ শ্যামবাটী
রামচাঁদ চট্টোপাধ্যায় ৪০ ভঞ্জপুর
ঈশ্বরচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ৩২ ভঞ্জপুর
দিগম্বর মুখোপাধ্যায় ৩৬ রত্নপুর
কুড়ারাম মুখোপাধ্যায় ৩২ নতিবপুর
দুর্গাপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় ৬২ মথুরা
বৈকুণ্ঠনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ৩৪ বসন্তপুর
শ্রীধর বন্দ্যোপাধ্যায় ৩৫ ভুরসুবা
রামসুন্দর মুখোপাধ্যায় ৫০ আঁটপুর
বেণীমাধব গাঙ্গুলি ৫০ চিত্রশালি
শ্যামাচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ৩০ মোগলপুর
নবকুমার মুখোপাধ্যায় ২২ চন্দ্রকোনা
যদুনাথ মুখোপাধ্যায় ৩০ বাখরচক
চন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যার ৩০ বসন্তপুর
উমাচরণ চট্টোপাধ্যায় ৪০ রঞ্জিতবাটী
উমেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ২৬ নন্দনপুর
গঙ্গানারায়ণ মুখোপাধ্যায় ৩০ গৌরহাটী
ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ৩২ পশপুর
কালাচাঁদ মুখোপাধ্যায় ৫০ সুলতানপুর
মনসারাম চট্টোপাধ্যায় ৪৫ তারকেশ্বর
গঙ্গানারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় ২২ আমড়াপাট
বিশ্বম্ভর মুখোপাধ্যায় ৪০ বালিগোড়
ঈশ্বরচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ৩৫ তারকেশ্বর
মাধবচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ৪০ তালাই
ভোলানাথ চট্টোপাধ্যায় ২৬ টেকরা
হরশম্ভু বন্দ্যোপাধ্যায় ৪০ মাজু
নীলাম্বর বন্দ্যোপাধ্যায় ৩২ সন্ধিপুর
কালিদাস মুখোপাধ্যায় ৩০ বালিডাঙ্গা
ভোলানাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ৩৬ গৌরাঙ্গপুর
দ্বারকানাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ৩০ কৃষ্ণনগর
সীতারাম মুখোপাধ্যায় ৩৫ চন্দ্রকোনা
রামধন মুখোপাধ্যায় ৪০ চন্দ্রকোনা
নবকুমার মুখোপাধ্যায় ৪৩ বরদা
ধর্ম্মদাস মুখোপাধ্যায় ৩৫ নারীট
সূর্য্যকুমার মুখোপাধ্যায় ২৬ বরদা
শরচ্চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯ নপাড়া
মহেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ১৮ দণ্ডিপুর

 অনুসন্ধান দ্বারা যত দূর ও যেরূপ জানিতে পারিয়াছি, তদনুসারে কুলীনদিগের বিবাহসংখ্যা প্রভৃতি প্রদর্শিত হইল। সবিশেষ অনুসন্ধান করিলে, আরও অনেক বহুবিবাহকারীর নাম পাওয়া যাইতে পারে। ৪।৩।২ বিবাহ করিয়াছেন এরূপ ব্যক্তি অনেক, এস্থলে তাঁহাদের নাম নির্দ্দেশ করা গেল না। হুগলী জিলাতে বহুবিবাহকারী কুলীনের যত সংখ্যা, বর্দ্ধমান, নবদ্বীপ, যশর, বরিসাল, ঢাকা প্রভৃতি জিলাতে তদপেক্ষা ন্যূন নহে; বরং কোনও কোনও জিলায় তাদৃশ কুলীনের সংখ্যা অধিক। কুলীনদিগের বিবাহের যে সংখ্যা প্রদর্শিত হইল, তাহা ন্যূনাধিক হইবার সম্ভাবনা। যাঁহারা অধিকসংখ্যক বিবাহ করিয়াছেন, তাঁহারা নিজেই স্বকৃত বিবাহের প্রকৃত সংখ্যা অবধারিত বলিতে পারেন না। সুতরাং, অন্যের তাহা অবধারিত জানিতে পারা সহজ নহে। বিবাহের যে সকল সংখ্যা নির্দ্দিষ্ট হইয়াছে, যদি কোনও স্থলে প্রকৃত সংখ্যা তদপেক্ষা অধিক হয়, তাহাতে কোনও কথা নাই; যদি ন্যূন হয়, তাহা হইলে কুলীনপক্ষপাতী আপত্তিকারী মহাশয়েরা অনায়াসে বলিবেন, আমি ইচ্ছাপুর্ব্বক সংখ্যাবৃদ্ধি করিয়া নির্দ্দেশ করিয়াছি। কিন্তু, আমি সেরূপ করি নাই; অনুসন্ধান দ্বারা যাহা জানিতে পারিয়াছি, তাহাই নির্দ্দেশ করিয়াছি; জ্ঞানপূর্ব্বক কোনও বৈলক্ষণ্য করি নাই।

 প্রসিদ্ধ জনাই গ্রাম কলিকাতার ৫। ৬ ক্রোশ মাত্র অন্তরে অবস্থিত। এই গ্রামের যে সকল ব্যক্তি একাধিক বিবাহ করিয়াছেন, তাঁহাদের পরিচয় স্বতন্ত্র প্রদত্ত হইতেছে।

নাম বিবাহ বয়স
মহানন্দ মুখোপাধ্যায় ১০ ৩৫
যদুনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ১০ ২৯
আনন্দচন্দ্র গাঙ্গূলি ৬৫
দ্বারকানাথ গাঙ্গূলি ৩২
ভোলানাথ মুখোপাধ্যায় ৫০
চন্দ্রকান্ত মুখোপাধ্যায় ৬৪
শ্যামাচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৮
দীননাথ চট্টোপাধ্যায় ২৬
ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় ৪৫
ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় ২৭
নীলকণ্ঠ বন্দ্যোপাধ্যায় ৫০
সীতানাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ২৯
ত্রিপুরাচরণ মুখোপাধ্যায় ৩৫
কালিদাস গাঙ্গূলি ২৬
দীননাথ গাঙ্গূলি ১৯
কালীপদ বন্দ্যোপাধ্যায় ৪০
ক্ষেত্রমোহন চট্টোপাধ্যায় ৪০
কালীপদ মুখোপাধ্যায় ৫০
মাধবচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ৩৫
নবকুমার মুখোপাধ্যায় ৪৩
নীলমণি গাঙ্গূলি ৪৮
কালীকুমার মুখোপাধ্যায় ৫৫
চন্দ্রনাথ গাঙ্গূলি ৫০
শ্রীনাথ চট্টোপাধ্যায় ৪৩
হারানন্দ মুখোপাধ্যায় ৬০
প্যারীমোহন চট্টোপাধ্যায় ৪০
সূর্য্যকুমার মুখোপাধ্যায় ৪০
ভোলানাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ৫৫
সীতানাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ৫৫
চন্দ্রকুমার মুখোপাধ্যায় ৬০
চন্দ্রকুমার চট্টোপাধ্যায় ২৫
রমানাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ২৫
হরিনাথ মুখোপাধ্যায় ৬২
রাজমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় ৫৭
ভোলানাথ মুখোপাধ্যায় ৫০
দীননাথ মুখোপাধ্যায় ৫০
বিশ্বম্ভর মুখোপাধ্যায় ৫০
রামকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ৫০
প্যারীমোহন মুখোপাধ্যায় ৩৫
চন্দ্রকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ৩২
কালীকুমার গাঙ্গূলি ২৫
আশুতোষ গাঙ্গূলি ২০
যদুনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ৩১
নবীনচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ৩৩
কেদারনাথ মুখোপাধ্যায় ২৮
গৌরীচরণ মুখোপাধ্যায় ২৮
ভগবানচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ৩২
দ্বারকানাথ গাঙ্গূলি ৩০
কালীমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় ৩২
হরিহর গাঙ্গূলি ৩৫
কামাখ্যানাথ মুখোপাধ্যায় ২৮
প্যারীমোহন গাঙ্গূলি ৩৩
কালিদাস মুখোপাধ্যায় ৩৫
চন্দ্রকুমার চট্টোপাধ্যায় ২৮
নবীনচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ২৪
নন্দলাল বন্দ্যোপাধ্যায় ২৮
দীননাথ মুখোপাধ্যায় ৩০
যদুনাথ গাঙ্গূলি ২৭
বিশ্বেশ্বর মুখোপাধ্যায় ২৭
গোপালচন্দ্র বন্দোপাধ্যায় ২৭
চন্দ্রকুমার গাঙ্গূলি ২১
মহেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ২১
প্রিয়নাথ বন্দোপাধ্যায় ২২
যোগেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ২০

 এক্ষণে, সকলে বিবেচনা করিয়া দেখুন, বিবাহবিষয়ে কুলীনদিগের অত্যাচারের নিবৃত্তি হইয়াছে কি না। এখন যেরূপ অত্যাচার হইতেছে, পূর্ব্বে ইহা অপেক্ষা অধিক ছিল, এরূপ বোধ হয় না। বরং, পূর্ব্ব অপেক্ষা এক্ষণে অধিক অত্যাচার হইতেছে, ইহাই সম্পূর্ণ সম্ভব। পূর্ব্বে অধিক টাকা না পাইলে, কুলীনেরা কুলভঙ্গে সম্মত ও প্রবৃত্ত হইতেন না। অধিক টাকা দিয়া, কুলভঙ্গ করিয়া, কন্যার বিবাহ দেন, এরূপ ব্যক্তিও অধিক ছিলেন না। এ কারণে, স্বকৃতভঙ্গের সংখ্যা তখন অপেক্ষাকৃত অনেক অল্প ছিল। কিন্তু, অধুনাতন কুলীনেরা, অস্প লাভে সন্তুষ্ট হইয়া, কুলভঙ্গ করি। থাকেন। আর, কুলভঙ্গ করিয়া, কন্যার বিবাহ দিবার লোকের সংখ্যাও এক্ষণে অনেক অধিক হইয়াছে। পূর্ব্বে, কোনও গ্রামে কেবল এক ব্যক্তি কুলভঙ্গ করিয়া কন্যার বিবাহ দিতেন। পরে তাঁহার পাঁচ পুত্র হইল। তাঁহারা সকলে কন্যার বিবাহবিষয়ে পিতৃদৃষ্টান্তের অনুবর্ত্তী হইয়া চলিয়াছেন। এক্ষণে, সেই পাঁচ পুত্রের পুত্রদিগকে, কুলভঙ্গ করিয়া, কন্যার বিবাহ দিতে হইতেছে। সুতরাং, যে স্থানে কেবল এক ব্যক্তি কুলভঙ্গ করিয়া কন্যার বিবাহ দিতেন, সেই স্থানে এক্ষণে সেই প্রথা অবলম্বন করিয়া চলিবার লোকের সংখ্যা অনেক অধিক হইয়াছে। মূল্যও অল্প, গ্রাহকের সংখ্যাও অধিক, এজন্য, কুলভঙ্গ ব্যবসায়ের উত্তরোত্তর শ্রীকৃদ্ধিই হইতেছে। সুতরাং, স্বকৃতভঙ্গের সংখ্যা এখন অনেক অধিক এবং উত্তরোত্তর অধিক বই ন্যূন হওয়া সম্ভব নহে। স্বতভঙ্গেরা অধিক বিবাহ করিতেছেন, এবং স্থানে স্থানে তাঁহাদের যে কন্যার পাল জম্মিতেছে, তাহাদিগকে স্বকৃতভঙ্গ পাত্রে অর্পন করিতে হইতেছে। এমন স্থলে, বিবাহবিষয়ক অত্যাচারের বৃদ্ধি ব্যতীত হ্রাস কিরূপে সম্ভব হইতে পারে, বুঝিতে পারা যায় না। যাহা হউক, কুলীনদিগের বিবাহ- বিষয়ক অত্যাচারের প্রায় নিবৃত্তি হইয়াছে, যাহা কিছু অবশিষ্ট আছে, অল্প দিনেই তাহার সম্পূর্ণ নিবৃত্তি হইবেক, এ কথা সম্পূর্ণ অলীক।

কলিকাতাবাসী নব্যসম্প্রদায়ের অধিকাংশ লোক পল্লীগ্রামের কোনও সংবাদ রাখেন না; সুতরাং, তত্রত্য যাবতীয় বিষয়ে তাঁহারা সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ; কিন্তু, তৎসংক্রান্ত কোনও বিষয়ে অভিপ্রায় প্রকাশের প্রয়োজন হইলে, সম্পূর্ণ অভিজ্ঞের ন্যায়, অসঙ্কুচিত চিত্তে তাহা করিয়া থাকেন। তাঁহার, কলিকাতার ভাবভঙ্গী দেখিয়া, তদনুসারে পল্লী গ্রামের অবস্থা অনুমান করিয়া লয়েন। ঐ সকল মহোদয়ের বলেন, এ দেশে বিদ্যার সবিশেষ চর্চ্চা হওয়াতে, বহু- বিবাহাদি কুপ্রথার প্রায় নিবৃত্তি হইয়াছে।

 এ কথা যথার্থ বটে বহুকাল ইঙ্গরেজী বিদ্যার সবিশেষ অনুশীলন ও ইঙ্গরেজাতির সহিত ভূয়িষ্ঠ সংসর্গ দ্বারা, কলিকাতার ও কলিকাতার অব্যবহিত সন্নিহিত স্থানে কুপ্রথা ও কুসংস্কারের অনেক অংশে নিবৃত্তি হইয়াছে; কিন্তু, তদ্ব্যতিরিক্ত সমস্ত স্থানে ইঙ্গরেজী বিদ্যার তাদৃশ অনুশীলন হইতেছে না; ও ইঙ্গরেজজাতির সহিত তদ্রূপ ভূয়িষ্ঠ সংসর্গ ঘটিতেছে না; সুতরাং তত্তৎ স্থানে কুপ্রথা ও কুসংস্কারের প্রাদুর্ভাব তদবস্থই রহিয়াছে। ফলতঃ, পল্লীগ্রামের অবস্থা কোনও অংশে কলিকাতার মত হইয়াছে, এরূপ নির্দ্দেশ নিতান্ত অসঙ্গত। কার্য্যকারণভাবব্যবস্থার প্রতি দৃষ্টি করিলে, এরূপ সংস্কার কদাচ উদ্ভূত হইতে পারে না। কলিকাতায় যে কারণে যত কালে যে কার্য্যের উৎপত্তি হইয়াছে, যে সকল স্থানে যাবৎ সেই কারণের তত কাল সংযোগ না ঘটিতেছে, ভাবৎ তথায় সেই কার্য্যের উৎপত্তি প্রত্যাশা করা যাইতে পারে না। কলিকাতায় যত কাল ইঙ্গরেজী বিদ্যার যেরূপ অনুশীলন ও ইঙ্গরেজজাতির সহিত যেরূপ ভূয়িষ্ঠ সংসর্গ হইয়াছে। পল্লীগ্রামে যাবৎ সর্ব্বতোভাবে ঐরূপ না ঘটিতেছে, তাবৎ তথায় কলিকাতার অনুরূপ ফললাভ কোনও ক্রমে সম্ভবিতে পারে না। যাহা হউক, কলিকাতার ভাবভঙ্গী দেখিয়া, তদনুসারে পল্লীগ্রামের অবস্থা অনুমানকরা নিতান্ত অব্যবস্থা।

 ফলকথা এই, কোনও বিষয়ে মত প্রকাশের প্রয়োজন হইলে, তদ্বিষয়ের বিশেষজ্ঞ না হইয়া, তাহা করা পরামর্শসিদ্ধ নহে। সবিশেষ অনুসন্ধান ব্যতিরেকে কেহ কোনও বিষয়ের বিশেষজ্ঞ হইতে পারেন না। বহুবিবাহপ্রথাবিষয়ে সবিশেষ অনুসন্ধান করিলে, ঐ জঘন্য ও নৃশংস প্রথার অনেক নিবৃত্তি হইয়াছে, উহা আর পূর্ব্বের মত প্রবল নাই, পরপ্রতারণা যাঁহার উদ্দেশ্য নহে তাদৃশ ব্যক্তি কদাচ এরূপ নির্দ্দেশ করিতে পারেন না। ঈর্ষ্যার পরতন্ত্র, বা বিদ্বেষ- বুদ্ধির অধীন, অথবা কুসংস্কারবিশেষের বশবর্ত্তী হইয়া, প্রস্তাবিত বিষয়ের প্রতিপক্ষত করামাত্র যাহার মুখ্য উদ্দেশ্য, তিনি তদ্বিষয়ের বিশেষজ্ঞই হউন, আর অনভিজ্ঞই হউন, যাহা স্বপক্ষসমর্থনের, বা পরপক্ষখণ্ডনের, উপযোগী জ্ঞান করিবেন, তাহাই সচ্ছন্দে নির্দ্দেশ করিবেন, যাহা নির্দ্দেশ করিতেছেন, তাহা সম্পূর্ণ অবাস্তব হইলেও, তাহাকেই তদ্বিষয়ের প্রকৃত অবস্থা বলিয়া কীর্ত্তন করিতে কিঞ্চিন্মাত্র সঙ্কুচিত হইবেন না। কোনও ব্যক্তি, সদভিপ্রায়প্রবর্ত্তিত হইয়া, কার্য্যবিশেষের অনুষ্ঠান করিলে, উক্তবিধ ব্যক্তিরা ঐ অনুষ্ঠানকে, অসদভিপ্রায় প্রণোদিত বলিয়া, অম্লান মুখে অতথ্যনির্দ্দেশ করেন; কিন্তু আপনারা যে জিগীষার বশ হইয়া, অতথ্যনির্দ্দেশ দ্বারা পরের চক্ষে ধূলি প্রক্ষেপ করিতেছেন, তাহা একবারও ভাবিয়া দেখেন না।