বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড)/৫৮

উইকিসংকলন থেকে

শিরোনাম সূত্র তারিখ
যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া হলে অবস্থার মোকাবিলায় ভারত প্রস্তুত-অর্থমন্ত্রী চ্যবনের মন্তব্য দৈনিক আনন্দবাজার ২৮শে অক্টোবর, ১৯৭১

উদ্বাস্তুরা ফিরে যাবার সঙ্গে সঙ্গে নতুন করগুলি প্রত্যাহার করে নেয়া হবে

- চ্যবন

(দিল্লী অফিস থেকে)

 ২৮শে অক্টোবর-কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ওয়াই বি চ্যবন আজ এখানে প্রেস ক্লাব অফ ইণ্ডিয়ায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় সুস্পষ্টভাবে জানান যে, নতুন যে সব কর ধার্য করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ সাময়িক, পূর্ব বাংলার উদ্বাস্তুরা স্বদেশে ফিরে যাবার সঙ্গে সঙ্গেই তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। তিনি বলেন, সত্যি কথা বলতে কি, এই নতুন কর ধার্যের উদ্দেশ্যে কেবল অতিরিক্ত অর্থ সংগ্রহ করাই নয়, দেশবাসীকে সংকট সম্পর্কে অবহিত করাও।

 শ্রী চ্যবন বলেন, সরকারের বাজেটের হিসাব অনুযায়ী উদ্বাস্তুদের ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই স্বদেশে ফিরে যাবার কথা। সেই সময় পর্যন্ত তাদের ভরণ-পোষণের জন্য মোট ৪৫০ কোটি টাকার দরকার। যদিও ভারত একটা আন্তর্জাতিক ট্রাস্ট হিসেবে উদ্বাস্তুদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নিয়েছে, বাইরে থেকে যে সব সাহায্য আসছে তা অত্যন্ত কম। এমনকি প্রতিশ্রুত ১২৫ কোটি টাকার মধ্যে মাত্র ৩০ কোটি টাকার মতো সরকারের হাতে এসেছে।

 শ্রী চ্যবন স্বীকার করেন যে, পূর্ব বাংলা থেকে বিরাটসংখ্যক উদ্বাস্তু আগমনের ফলে ভারতের অর্থনীতির উপর প্রচণ্ড চাপ পড়ছে এবং তার অর্থনৈতিক চিত্র কিছুটা বিকৃত হতে চলেছে। দৃষ্টান্তস্বরূপ এই সমস্যার ফলে মুদ্রাস্ফীতির প্রবণতা দেখা দিয়েছে এবং তা দ্রব্যমূল্যের উপর প্রতিফলিত হয়েছে।

 উদ্বাস্তুরা ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ফিরে যাবে বলে কেন তিনি মনে করছেন শ্রী চ্যবন তা স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। এবং যদি ঐ সময়ের মধ্যে উদ্বাস্তুরা ফিরে যেতে না পারে তাহলে সরকার কি করবেন তাও তিনি বিশদভাবে প্রকাশ করতে অস্বীকার করেন। তার মতে, পরিস্থিতি ক্রমশ দানা বাঁধছে। তবু তিনি সংকট নিরসনে ভারতের তড়িঘড়ি কোন ব্যবস্থা গ্রহণের সম্ভাবনা বাতিল করে দেন।

 তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধ চাই না। তিনি আরও বলেন, সশস্ত্র সংঘর্ষ এড়াতে ভারত কোন চেষ্টাই বাদ রাখবে না। তবে আমাদের উপর যদি যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া হয় তা আমরা সেই জরুরী অবস্থায় মোকাবিলা করার জন্য প্রস্ত্তত। সঙ্গে সঙ্গে তিনি এ কথাও স্মরণ করিয়ে দেন যে, যুদ্ধ যদি বাধে তাহলে আমাদের অর্থনীতির উপর আরও চাপ পড়বে।

 জাতীয় অর্থনীতির চিত্রণে শ্রী চ্যবন বলেন, উদ্বাস্তু আগমনের ফলে আমাদের অর্থনীতির উপর প্রচণ্ড চাপ পড়া সত্ত্বেও সরকার সামাজিক ও বৈষয়িক উভয় প্রকার উন্নয়নমূলক পরিকল্পনায় অগ্রসর হতে কৃতসংকল্প। এই সব ক্ষেত্রে কোন রকম ছাঁটাই হবে না। শিল্প ক্ষেত্রে অচলাবস্থা দেখা দেওয়ায় অর্থমন্ত্রী কিছুটা অসন্তোষ প্রকাশ করেন। শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধি মোটেই সন্তোষজনক নয়। সরকার ইতিমধ্যেই এই সমস্যা বিচার করে দেখেছেন। শিল্প ক্ষেত্রে বর্তমান অচলাবস্থার কারণ নির্ণয়ের উদ্দেশে পরিকল্পনা কমিশন সারাদেশে একটা অনুসন্ধান শুরু করেছেন। কারণ নির্ণিত হবার পর অবস্থার উন্নতির জন্য সংশোধনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 শ্রী চ্যবন নিশ্চিত, এই ব্যবস্থা যদি সফল করা যায় তাহলে বর্তমান যে মূল্য রেখা ঊর্ধ্বগতি হয়েছে সরকার তাকে ঘরে রাখতে সমর্থ হবেন। কারণ প্রাকৃতিক বিপর্যয় সত্ত্বেও কৃষি উৎপাদনের সামগ্রিক চিত্র ভালোই রয়েছে। তবে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে সরকারের হিসাব কিছু বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দৃষ্টান্তস্বরূপ, বন্যা ও খরা ত্রাণে বাজেটে মাত্র ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার এ পর্যন্ত বিভিন্ন রাজ্যকে মোট প্রায় ১৫০ কোটি টাকা দিয়েছেন। এর ফলেও আমাদের অর্থনীতির উপর কিছুটা বাড়তি চাপ পড়েছে।

 যাই হোক, ভালোভাবে অর্থ সংগ্রহ করে এবং ব্যয় হ্রাস করে বিশেষ করে পরিকল্পনা বহির্ভূত বিষয়ে-সরকার পরিস্থিতি সামলে নেবেন বলে আশা করছেন। এ কাজে রাজ্য সরকারগুলির সাড়াও উৎসাহব্যঞ্জক।

 আবার সরকার আবশ্যিক দ্রব্যগুলির বিলি বণ্টনের মূল ব্যবস্থাগুলি ঠিক করে রাখবেন যাতে প্রয়োজন হলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে কণ্ট্রোল প্রবর্তন করা যায়। তবে এই মূহূর্তে সরকার কণ্ট্রোলের কথা ভাবছেন না।