বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড)/১৭

উইকিসংকলন থেকে

ডঃ কামাল সিদ্দিকী

 ১৯৭০ সালের মাঝামাঝি আমি নড়াইলে এস, ডি, ও হিসেবে যোগদান করি। নড়াইলে আসার পর বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজকর্মের মধ্যে ম্যাজিষ্ট্রেট-এর দায়িত্ব পালন করা অন্যতম ছিল। এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পাকিস্তানী সেনাবহিনীর সাথে আমার সম্পর্ক খারাপ হয়ে পড়ে, যেহেতু রাজনৈতিক কর্মীদের আমি সবসময় জামিনে মুক্তি দিতাম। পাকিস্তান সেনাবাহিনী এটা চাইত না। এবং তাদের অনুরোধ বা উপরোধ উপেক্ষা করার ফলে তারা আমাকে শুভ নজরে দেখত না। ১৯৭০ সালের সময় আমি নড়াইলেই ছিলাম। এই নির্বাচনকে সৎ নির্বাচন বলা যায় এবং আওয়ামী লীগ সামগ্রিকভাবে সমস্ত আসনে জয়লাভ করেন। নির্বাচনে জয়লাভ হলেও পরিস্থিতি আমার কাছে ভাল ঠেকছিল না। মার্চের প্রথমদিকে আমি ঢাকায় আসি এবং সামগ্রিক অবস্থা দেখে আমার এই ধারণা বদ্ধমূল হয় যে, পাকিস্তানীদের সাথে আওয়ামী লীগের আলোচনা ব্যর্থ হবে। আমার এ ধারণ একক ছিল না। অনেকেরই এরূপ ধারণা ছিল। ৮ই মার্চ আমি নড়াইলে ফিরে যাই। সেখানেও উত্তেজনা বিরাজ করছিল এবং বিভিন্ন মিছিল ও শোভাযাত্রার মাধ্যমে বাঙালীরা রাজপথে তাদের মনোভাব প্রকাশ করছিল।

 ১১ই মার্চ একটি ঘটনা ঘটে যায়, ফলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়। ঐ তারিখে আমি ক্যাণ্টনমেণ্টে কোন কাজে গাড়ি নিয়ে যাই। আমার গাড়িতে কালো ফ্ল্যাগ ছিল। এই ফ্ল্যাগ দেখা মাত্র পাহারারত সৈনিক চীৎকার করে আমাকে নামতে বলে এবং গুলি করতে উদ্যত হয়। গাড়ি থামাবার পর সে আবার বলে কালো পতাকা নামাও। আমি উত্তর দিই যে, কিছুতেই আমি কালো পতাকা নামাবো না। সৈনিকটি তখন বলে কালো পতাকাসহ ক্যাণ্টনমেণ্টে প্রবেশ করা চলবে না। আমি বলি, কালো পতাকা ছাড়া ক্যাণ্টনমেণ্টে আমি ঢুকতে পারি না এবং সেখান থেকেই ফিরে আসি। এ ব্যাপারে আমি প্রেসে একটি বিবৃতি দিই। তোফায়েল আহমদও এই ঘটনার ওপর একটি বিবৃতি দিয়েছিলেন।

 ২৫শে মার্চ একটি জরুরী কাজে আমি খুলনায় অবস্থান করছিলাম। ২৫শের রাত্রির ঘটনার পর ২৬ তারিখে রূপসা নদী পার হয়ে আমি কালিয়ায় পৌঁছি। সেখানে একটি জনসমাবেশে আমি বক্তৃতা দিই এবং বলি যে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। আমাদের সবাইকে এখন লড়তে হবে। এখানে উল্লেখ্য যে, সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত হবার সিদ্ধান্ত ছিল পূর্বপরিকল্পিত। ১৪ই মার্চ ঝিনাইদহে আমরা কয়েকজন সরকারী কর্মচারী মিলিত হই। এর মধ্যে ছিলেন তৌফিক এলাহি চৌধুরী, শাহ ফরিদ, মাহবুব (পুলিশ) এবং অন্য কয়েকজন। এখানে আমরা শপথ নিই যে, প্রয়োজন হলে দেশের জন্য আমরা অস্ত্র ধারণ করবো। ২৭শে মার্চ নড়াইলে ফিরে এসে দেখি যে, অবস্থা বেশ খারাপ। নড়াইল কম-বেশী জনশূন্য এবং লোকেরা অত্যন্ত ভীত। আমি একটি মাইক নিয়ে শহরের রাস্তায় নেমে পড়ি। এবং ৪টায় একটি সমাবেশের আহ্বান করি। এই সমাবেশে আমি ঘোষণা করি, নড়াইল স্বাধীন বাংলাদেশের অংশ এবং দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করা আমাদের পবিত্র কর্তব্য। যেহেতু রেডিওতে শুনেছিলাম জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধে সামরিক নেতৃত্ব দান করছেন আমরাও সৈনিক হিসেবে তাঁর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করি। এই সভাতে কয়েকজন সংসদ সদস্য নিয়ে একটি যুদ্ধ পরিচালনা কাউন্সিল গঠিত হয়। কয়েকজন আনসার এবং সাধারণ মানুষদের নিয়ে সেনাবাহিনী গঠন করা হয়। মানুষের মাঝে যে কি বিপুল উৎসাহ এবং উদ্দীপনা ছিল তা বর্ণনা করা যায় না। নিম্নবর্ণের বেশ কিছু হিন্দু শুধুমাত্র তীর-ধনুক নিয়েই এই সেনাবাহিনীতে যোগদান করে। যশোর এবং মাগুরা থেকে লোকজন এসেও এই গণবাহিনীর সদস্য হয়।

 ২১শে মার্চ প্রায় চার লক্ষ লোকের বিশাল গণবাহিনী যশোর আক্রমণ করে। এই অভূতপূর্ব দৃশ্য পাকিস্তানীদের জন্য যথেষ্ট ছিল। তারা সহজেই বুঝেছিল যে, এই বিশাল জনস্রোতকে সামনাসামনি পরাস্ত করা সম্ভব নয়। এক কথায় তারা ভীতি ছড়িয়ে ছত্রভংগ হয়ে ক্যাণ্টনমেণ্টে পালিয়ে যায়। বহু পাকিস্তানী সৈন্য আমাদের হাতে ধরা পড়ে। এখানে উল্লেখ্য যে, এরই মধ্যে তারা লুটতরাজ ও ধর্ষণে লিপ্ত হয়েছিল। বহু বিহারী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে যোগ দিয়েছিল। তাদের অনেকেই আমাদের হাতে মৃত্যুবরণ করে।

 নড়াইলে ফিরে এসে আমরা জনগণকে সংগঠিত করার ভূমিকা গ্রহণ করি। সবাই এগিয়ে এসেছিল যার যা ছিল তা নিয়ে। খাদ্যদ্রব্যের প্রশ্ন তো বাদই দিলাম। জনগণের মধ্যে তখন একটাই ইচ্ছা ছিল এবং সেটি হচ্ছে মার্চ করে আক্রমণ করা।

 কিন্তু পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে এত সহজেই হার মানানো সম্ভব নয়। তারা বিশাল কামান দিয়ে নড়াইলের ওপরে আক্রমণ চালায় এবং আমাদের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। প্রায় তিনশত আনসার কামানের গুলিতে মারা যায়। এছাড়া বিমান বাহিনী প্রায় সারাক্ষণ নড়াইলের ওপর গুলিবর্ষণ করতে থাকে। আমি অন্যদের সঙ্গে সামগ্রিক অবস্থা বিশ্লেষণ করি। এবং সিদ্ধান্ত নিই যে, আমাদের যুদ্ধবন্দীদের বিচার করা হবে। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ শোনা হয় এবং সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। বিচারে তাদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় এবং কয়েকশত বন্দীকে গুলি করে এই দণ্ড কার্যকর করা হয়।

 আমরা পাকিস্তানী প্রশাসনযন্ত্রকে বিকল করে দিয়েছি, জনগণের মধ্যে দেশপ্রেম এবং যুদ্ধের মনোভাব সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছি এবং এর ফলে আমার কাছে প্রতীয়মান হয় যে, বিদ্রোহের প্রথম স্তর সম্পূর্ণ হয়েছে, এখন জনগণের মধ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে দেয়ার কাজ। আমি সরকারী কর্মচারীদের ছয় মাসের বেতন দিয়ে বলি যে, অফিসে তারা যেন আর ফিরে না আসে। সক্ষম যোদ্ধাদের বলি সীমান্তের দিকে চলে যেতে যেহেতু নড়াইলকে আর রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। এরপর আমি নড়াইল ত্যাগ করি। আমার ইচ্ছা ছিল বাবা-মার সাথে শেষবারের জন্য একবার দেখা করা এবং সে উদ্দেশ্যেই আমি এপ্রিল মাসের ৭/৮ তারিখে ঢাকায় আসি। ঢাকায় আমাদের বাসার দিকে যখন রওয়ানা হচ্ছি তখনই আমার একজন পরিচিত লোকের সাথে দেখা হয়। তিনি আমাকে জানান যে, নড়াইলের সব ঘটনার খবরই ঢাকায় এসে পৌঁছে গেছে। সেনাবাহিনী জানে আমি বহু পাকিস্তানী হত্যা করেছি। যদি বাসায় যাই, আমাকে তো ধরে হত্যা করা হবেই, বাবা-মাও আর বাঁচবে না। একথা শোনার পর আমি স্কুটার নিয়ে নয়ারহাটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই এবং রাজবাড়ী হয়ে চুয়াডাঙ্গার দিকে যেতে থাকি। পথের মধ্যে লক্ষ্য করি সব জায়গাতেই বিহারীরা অত্যন্ত তৎপর। চুয়াডাঙ্গার উদ্দেশ্যে যখন নৌকা করে যাচ্ছি তখন একটি বিমান এসে নৌকার ওপর গুলি ছোড়ে। আমি পানিতে লাফ দিয়ে জীবন রক্ষা করি এবং শেষে কলকাতায় পৌঁছি।

 কলকাতায় গিয়ে কীড ষ্ট্রীটে সমবেত হই। এখানে বহু এমপির সাথে দেখা হয় এবং ১৭ই এপ্রিলের স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার কথাও জানতে পারি। এর পরে পাকিস্তানী দূতাবাসের জনাব হোসেন আলী এবং আনোয়ার করিম চৌধুরীর সাথে দেখা করি এবং সমস্ত ঘটনার বর্ণনা দিই। তাদের বক্তব্যও আমি শুনি। তবে আমার মনে হচ্ছিল যে, কলকাতায় আমার অবস্থানের কোন প্রয়োজন নেই, এবং আমি তখন খুলনা সীমান্তের গজাডাংগা ক্যাম্পে যোগদান করি। এই ক্যাম্পের প্রধান ছিলেন ক্যাপ্টেন সালাহউদ্দিন।

 মে এবং জুন মাস ট্রেনিং এবং ছোটখাটো অপারেশন পরিচালনার মধ্যে কাটে। জুন মাসের শেষে জেনারেল ওসমানী এই ক্যাম্প পরিদর্শনে আসেন এবং আমার খোঁজ করেন। তিনি আমাকে বলেন যে, মুজিব নগর সচিবালয়ে আমার প্রয়োজন রয়েছে। তাঁর এই সিদ্ধান্তে আমার প্রবল আপত্তি থাকা সত্ত্বেও করার কিছু ছিল না। কারণ তিনি ছিলেন সর্বাধিনায়ক। আমি কলকাতায় ফিরে আসি এবং প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করি। তিনি আমাকে সাধারণ প্রশাসন বিভাগের সচিব জনাব নূরুল কাদের খানের সংগে দেখা করতে বলেন। তিনি আমাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব যোগদান করতে আদেশ দেন।

 পররাষ্ট্র মন্ত্রী জনাব খন্দকার মোশতাকের সাথে এর পূর্বে আমার কোন আলাপ ছিল না। যাই হোক তাঁর সঙ্গে আমি কাজ করতে শুরু করি। আমার প্রধান কাজ ছিল বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা। এছাড়া যারা বাংলাদেশের পক্ষে আনুগত্য প্রকাশ করতে চাইতেন তাঁদের সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ করিয়ে দেয়া এবং বিভিন্ন আদেশ পৌঁছিয়ে দেয়া। পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সাথে যে সকল আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব দেখা করতে আসতেন তাঁদের সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করে দেয়াও আমার কাজের অংশ ছিল। যেহেতু খন্দকার মোশতাক সংসদ বিষয়ক মন্ত্রীও ছিলেন সেহেতু সংসদ সদস্যদের বেতন প্রদানের ব্যবস্থা করা এবং বিভিন্ন সংসদীয় উপদল এবং গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করাও আমার দায়িত্বের মধ্যেই এসে পড়ে। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের দিকে খন্দকার মোশতাক মুজিব নগর সরকারের ভেতর কোণঠাসা হয়ে পরেন। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ ছিল যে, তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রক্ষা করছিলেন। অতএব, যদিও জাতিসংঘ প্রেরিত প্রতিনিধিদলে তাঁর নেতৃত্ব করার কথা ছিল কিন্তু তাঁকে বাদ দেয়া হয় এবং তাঁর স্থলে দলের প্রধান হিসেবে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে নিয়োগ করা হয়।

 পরবর্তীকালে খন্দকার মোশতাকের ভূমিকা একেবারেই গৌণ হয়ে পড়ে। তিনি মুজিব নগর মন্ত্রী পরিষদের সদস্য হিসেবে বহাল থাকলেও সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী মহলে তাঁর প্রভাব একেবারেই ছিল না। যখন থেকে এই অভিযোগ সবার মধ্যে প্রচারিত হলো যে, তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সরকারের অনুমতি ছাড়া যোগাযোগ করেছেন তখন তিনি প্রায় গৃহবন্দী ছিলেন। একবার তিনি গঙ্গার পারে সান্ধ্য ভ্রমণের অনুমতি চেয়েছিলেন কিন্তু ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তা নাকচ করে দেন।

 সংসদ সদস্যদের ব্যাপারে আমার প্রশাসনিক দায়িত্ব ছিল এবং সেই সূত্রে আমি জুলাই মাসে বাগডোগরায় বাংলাদেশের সংসদ সদস্যদের সভায় উপস্থিত ছিলাম। সেখানে যে অবস্থার সৃষ্টি হয় তা দেখে বিচলিত হওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। সদস্যরা নানাদলে-উপদলে বিভক্ত ছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সবার মনোভাব সমানভাবে সুদৃঢ় ছিল না। এমনকি অনেক সংসদ সদস্য ও নেতারা পাকিস্তানে ফিরে গিয়ে আপোষ করার পক্ষেও মত প্রদান করেন। এইসব দেখে আমার মনে হচ্ছিল যে, এরা মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করতে গিয়ে হয়তো বা সবকিছু ভণ্ডুল করে ফেলতে পারেন। একক উদ্দেশ্যে সবাই কাজ করছিলেন না। পরবর্তীকালে অবশ্য ভারতীয় রণনীতির পাশে এইসব প্রশ্নের আপেক্ষিক গুরুত্ব কমে আসে।

 বামপন্থী রাজনৈতিক সংগঠন ও ব্যক্তিদের প্রতি আওয়ামী লীগের মনোভাব বৈরী ছিল। নীতি হিসেবে নয় কিন্তু বহু আওয়ামী লীগ নেতা এদের বিরোধিতা করতেন। যেমন শিবপুর এলাকায় বামপন্থী নেতা মান্নান ভূঁইয়া একটি মুক্ত অঞ্চল গড়ে তোলেন। এটি অনেক আওয়ামী লীগের লোকজন সহ্য করতে পারতেন না। এমনকি অবস্থা এক পর্যায়ে এতই খারাপ হয়েছিল যে, বহু সদস্য সরকারের কাছে দাবী তোলেন যে, মান্নান ভূঁইয়াকে হত্যা করা হোক এবং তাঁর সংগঠন ধ্বংস করে দেয়া হোক। অন্য একটি ঘটনা যেটা এখানে উল্লেখ করা যায় সেটি হচ্ছে, কিছু সংসদ সদস্যের মাধ্যমে ইসরাইলের অনুপ্রবেশের চেষ্টা। ইসরাইল সরকার ভারতীয় ডানপন্থী রাজনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁরা আবার বাংলাদেশের কিছু সংসদ সদস্যের মাধ্যমে ইসরাইলী সাহয্যের প্রস্তাব নিয়ে আসেন। ব্যাপারটা আমার কাছে খুবই খারাপ ঠেকে এবং আমি সরকারী কর্মচারীর দায়িত্ব বহির্ভূত একটি কাজ করি। আমি তথ্যটি সিপিএম-এর পত্রিকায় জানিয়ে দিই এবং খবরটি এ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এর ফলে ইসরাইলী লবীর তৎপরতা বন্ধ হয়ে যায়।

 কলকাতায় মাওলানা ভাসানীর সংগেও আমার দেখা হয়। তাঁর অবস্থা মোটেই ভালো ছিল না। তাঁর দেখাশুনা করার জন্য কেউ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। সেপ্টেম্বর মাসের দিকে তিনি কলকাতায় ছিলেন এক প্রকার বন্দীর মত। আমি নিজে থেকেই তাঁর কাপড়-চোপড়ের ব্যবস্থা করি। একটি ব্যাপার বেশ মনে পড়ে। তিনি এসবের মধ্যেও তাল টুপির জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন। আমি সারা কলকাতা খুঁজে তাঁর জন্য এই টুপি সংগ্রহ করি।

 এছাড়া মওলানা ভাসানীর বিভিন্ন বক্তব্য আমি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতাম এবং অনেক ক্ষেত্রে তাঁর কাছে খবর নিয়ে যেতাম। যথা-উপদেষ্টা পরিয়দের সদস্য হওয়ার অনুরোধ খন্দকার মোশতাকের পক্ষ থেকে আমি বহন করি। খন্দকার মোশতাক অবশ্য চেয়েছিলেন যে, মওলানা ভাসানী যদি এই পরিষদের সদস্য হন, তবে তাঁর নিজস্ব মতামত ভারতবিরোধী জাতীয়তাবাদ, আরো শক্তিশালী হবে। সে সময়ে অবশ্য খন্দকার মোশতাকের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়েছিল।

 ডিসেম্বর মাসে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সব জল্পনা-কল্পনা এবং কোন্দলের সমাপ্তি ঘটে। ১৬ তারিখ দেশ স্বাধীন হয় এবং ১৮ তারিখ খুলনায় ডি, সি, হিসেবে যোগদান করি।

ডঃ কামাল সিদ্দিকী
মার্চ, ১৯৮৪।