বিদ্যাসাগর/চত্বারিংশ অধ্যায়

উইকিসংকলন থেকে

চত্বারিংশ অধ্যায়।

কন্যার বিবাহ, উইল ও সাক্ষ্য-বাক্য।

 ১৮৮২ সালের ৩০শে আষাঢ় বা ১৮৭৫ খৃষ্টাব্দের ১৩ই জুলাই বিদ্যাসাগর মহাশয়ের তৃতীয় কন্যার বিবাহ হয়। পাত্র শ্রীযুক্ত সূর্য্যকুমার অধিকারী। ইনি বি, এ উপাধিধারী। পুত্র বর্জ্জনের পর বিদ্যাসাগর মহাশয় জামাতা সূর্যকুমারে পুত্রপ্রেম ঢালিয়া দিয়াছিলেন।

 ১৮৭৫ সালে এক উইল হয়। এই উইলে পুত্র নারায়ণ বিষয়বৰ্জ্জিত হন।[১] শাস্ত্রানুসারে অন্য কোন উত্তরাধিকারী বিষয় পাইবেন বলিয়া স্থির হয়।

 উইলের ভাষা বিশুদ্ধ মার্জ্জিত বাঙ্গালা। কলিকাতায় ভূতপূর্ব্ব রেজিষ্টার শ্রীযুক্ত প্রতাপচন্দ্র ঘোষ, উইলের ভাষা দেখিয়া চমৎকৃত হইয়াছিলেন। উইলের লিপি-প্রণালীতেও নূতনত্ব পরিলক্ষিত হইয়া থাকে। উইলে তাঁহার দানশীলতা ও মুক্তপ্রাণতার পরিচয়। উইল খানি এই,—

শ্রীশ্রীহরি—

শরণম

১। আমি স্বেচ্ছাপ্রবৃত্ত হইয়া স্বচ্ছন্দচিত্তে আমার সম্পওির অন্তিম বিনিয়োগ করিতেছি। এই বিনিয়োেগ দ্বারা আমার কৃতপূর্ব্বান সমস্ত বিনিয়োগ নিরস্ত হইল।

 ২। চৌগাছানিবাসী শ্রীযুক্ত কালীচরণ ঘোষ, পথিরানিবাসী শ্রীযুত ক্ষীরোদনাথ সিংহ, আমার ভাগিনেয় পসপুরনিবাসী শ্রীযুত বেণীমাধব মুখোপাধ্যায় এই তিন জনকে আমার এই অন্তিম বিনিয়োগপত্রের কার্য্যদর্শী নিযুক্ত করিলাম। তাঁহারা এই বিনিয়োগপত্রের অনুযায়ী যাবতীয় কার্য্য নির্ব্বাহ করিবেন।

 ৩। আমি অবিদ্যমান হইলে আমার সমস্ত সম্পত্তি নিযুক্ত কার্য্যদর্শীদিগের হস্তে যাইবেক।

 ৪। এক্ষণে আমার যে সকল সম্পত্তি আছে, কার্য্যদর্শীদিগের অবগতির নিমিত্ত তৎসমুদয়ের বিবৃতি এই বিনিয়োগ পত্রের সহিত গ্রথিত হইল।

 ৫। কার্য্যদর্শীরা আমার ঋণ পরিশোেধ ও আমার প্রাপ্য আদায় করিবেন।

 ৬। আমার সম্পত্তির উপস্বত্ব হইতে আমার পোষ্যবর্গ ও কতকগুলি নিরুপায় জ্ঞাতি কুটুম্ব আত্মীয় প্রভৃতির ভরণ-পোষণ ও কতিপয় অনুষ্ঠানের ব্যয় নির্ব্বাহ হইয়া আসিতেছে। এই সমস্ত ব্যয় এক কালে রহিত করিয়া আপন আপন প্রাপ্য আদায়ে প্রবৃত্ত হইবেন, আমার উত্তমর্ণেরা সেরূপ প্রকৃতির লোক নহেন, কার্য্যদশীরা তাঁহাদের সম্মতি লইয়া এরূপ ব্যবস্থা করিবেন যে এই বিনিয়োগপত্রের লিখিত বৃত্তি প্রভৃতি প্রচলিত থাকিয়া তাঁহাদের প্রাপ্য ক্রমে আদায় হইয়া যায়।

 ৭। এক্ষণে যে সকল ব্যক্তি আমার নিকট মাসিক বৃত্তি পাইয়া থাকেন, আমি অবিদ্যমান হইলে, তাঁহাদের সকলের সেরূপ বৃত্তি পাওয়া সম্ভব নহে। তন্মধ্যে যাঁহারা বিষয়ের উপস্বত্ব হইতে যেরূপ মাসিক বৃত্তি পাইবেন, তাহা নিম্নে নির্দ্দিষ্ট হইতেছে।

প্রথম শ্রেণী।

 পিতৃদেব শ্রীযুত ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ৫০৲ পঞ্চাশ টাকা। মধ্যম সহোদর শ্রীযুত দীনবন্ধু ন্যায়রত্ন ৩০৲ ত্রিশ টাকা। তৃতীয় শ্রীযুত শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন ৪০৲ চল্লিশ টাকা। কনিষ্ঠ সহোদর শ্রীযুত ঈশানচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যর ৩০৲ ত্রিশ টাকা। জ্যেষ্ঠা ভগিনী শ্রীমতী মনোমোহিনী দেবী ১০৲ টাকা। মধ্যমা ভগিনী শ্রীমতী দিগম্বরী দেবী ১০৲ দশ টাকা। কনিষ্ঠা ভগিনী মন্দাকিনী দেবী ১০৲ দশ টাকা। বনিতা শ্রীমতী দীনময়ী দেবী ৩০৲ ত্রিশ টাকা। জ্যেষ্ঠা কন্যা শ্রীমতী হেমলতা দেবী ১৫৲ টাকা। মধ্যমা কন্যা প্রীমতী কুমুদিনী দেবী ১৫৲ পনর টাকা। তৃতীয়া কন্যা শ্রীমতী বিনোদিনী দেবী ১৫৲ টাকা। কনিষ্ঠা কন্যা শ্রীমতী শরৎকুমারী দেবী ১৫৲ পনর টাকা। পুত্রবধূ শ্রীমতী ভবসুন্দরী দেবী ১৫৲ পনর টাকা। পৌত্রী শ্রীমতী মৃণালিনী দেবী ১৫৲ পনর টাকা। জ্যেষ্ঠ দৌহিত্র শ্রীমান্ সুরেশ্চন্দ্র সমাজপতি ১৫৲ পনর টাকা। কনিষ্ঠ দৌহিত্র শ্রীমান্ যতীন্দ্রনাথ সমাজপতি ১৫৲ পনর টাকা। দৌহিত্রী শ্রীমতী রাজরাণী দেবী ১৫৲ পনর টাকা। কনিষ্ঠ ভ্রাতৃবধু শ্রীমতী এলোকেশী দেবী ১০৲ দশ টাকা। শ্বাশুড়ী শ্রীমতী তারাসুন্দরী দেবী৲ ১০ দশ টাকা। জ্যেষ্ঠা কন্যার শাশুড়ী স্বর্ণময়ী দেবী ১০৲ টাকা। জ্যেষ্ঠা কন্যার ননদ শ্রীমতী ক্ষেত্রমণি দেবী ১০৲ দশ টাকা। মাতৃদেবীর মাতুলকন্যা শ্রীমতী উমাসুন্দরী দেবী ৩৲ তিন টাকা। মাতৃদেবীর মাতুল-দৌহিত্র গোপালচন্দ্র চট্টোর বনিতা ৩৲ তিন টাকা। পিতৃব্যপুত্র ত্রিলোক মুখোপাধ্যায়ের বনিতা ৩০৲ টাকা। পিতৃদেবের পিতৃস্বসৃকন্যা শ্রীমতী নিস্তারিণী দেবী ৩৲ তিন টাকা। বৈবাহিকী শ্রীমতী সারদা দেবী ৫৲ পাঁচ টাকা। মদনমোহন তর্কালঙ্কারের মাতা ৮৲ আট টাকা। শ্রীযুক্ত মদনমোহন বসুর বনিতা শ্রীমতী নৃত্যকালী দাসী ১০৲ দশ টাকা। শ্রীযুক্ত মধুসূদন ঘোষের বনিতা শ্রীমতী থাকমণি দাসী ১০৲ দশ টাকা। বারাশতনিবাসী শ্রীযুক্ত কালীকৃষ্ণ মিত্র ৩০৲ ত্রিশ টাকা। কালীকৃষ্ণ মরিয়া গেলে তাহার বনিতা শ্রীমতী উমেশমোহিনী দাসী ১০৲ দশ টাকা। শ্রীরাম প্রামাণিকের বনিতা শ্রীমতী ভগবতী দাসী ২৲ দুই টাকা।

দ্বিতীয় শ্রেণী।

 মাতৃস্বসৃপুত্র শ্রীযুত সর্ব্বেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায় ১০৲ দশ টাকা। ভাগিনেয়ী শ্রীমতী মোক্ষদা দেবী ৫৲ পাঁচ টাকা। জ্যেষ্ঠা ভগিনীর ননদ শ্রীমতী তারামণি দেবী ৫৲ পাঁচ টাকা। পিতৃস্বসৃকন্যা শ্রীমতী মোক্ষদা দেবী ২৲ দুই টাকা। মাতৃদেবীর মাতৃস্বসৃপুত্র শ্রীযুক্ত শ্যামাচরণ ঘোষাল ৫৲ পাঁচ টাকা। মাতৃদেবীর মাতুলপুত্র তারাচরণ মুখোর পরিবার ৮৲ আট টাকা। মাতৃদেবীর মাতৃস্বসৃপুত্র শ্রীযুত কালিদাস মুখোপাধ্যায় ৫৲ পাঁচ টাকা। মাতৃদেবীর পিতৃস্বসৃপুত্র রামেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের পরিবার ৫৲ পাঁচ টাকা। মাতৃদেবীর মাতুলকন্যা শ্রীমতী বরদা দেবী ২৲ দুই টাকা। বারাশতনিবাসী নবীনকৃষ্ণ মিত্রের বনিতা শ্রীমতী শ্যামাসুন্দরী দাসী ১০৲ দশ টাকা। মদনমোহন তর্কালঙ্কারের কন্যা শ্রীমতী কুন্দবালা দেবী ১০৲ দশ টাকা। মদনমোহন তর্কালঙ্কারের ভগিনী বামাসুন্দরী দেবী ৩৲ তিন টাকা। বর্দ্ধমানের প্যারীচাঁদ মিত্রের বনিতা শ্রীমতী কামিনী দাসী ১০৲ দশ টাকা।

৮। যদি কার্য্যদর্শীরা দ্বিতীয় শ্রেণীনিবিষ্ট কোন ব্যক্তিকে মাসিক দেওয়া অনাবশ্যক বোধ করেন অর্থাৎ আমার দত্ত বৃত্তি না হইলেও তাঁহার চলিতে পারে এরূপ দেখেন, তাহা হইলে তাঁহার বৃত্তি রহিত করিতে পারিবেন।

 ৯। আমার দেহান্ত সময়ে আমার মধ্যমা, তৃতীয়া ও কনিষ্ঠা কন্যার যে সকল পুত্র ও কন্যা বিদ্যমান থাকিবে, কোনও কারণে তাহাদের ভরণপোষণ, বিদ্যাভ্যাস প্রভৃতির ব্যয় নির্বাহের অসুবিধা ঘটিলে তাহারা প্রত্যেকে দ্বাবিংশ বর্ষ বয়ঃক্রম পর্য্যন্ত মাসিক ১৫৲ পনর টাকা বৃত্তি পাইবেক।

 ১০। আমার দেহান্ত সময়ে আমার যে সকল পৌত্র ও দৌহিত্র অথবা পৌত্রী ও দৌহিত্রী বিদ্যমান থাকিবে, তাহাদের মধ্যে কেহ অন্ধত্ব পঙ্গুত্ব প্রভৃতি দোযাক্রান্ত অথবা অচিকিৎস্য রোগগ্রস্থ হইলে আমার বিষয়ের উপস্বত্ব হইতে যাবজ্জীবন মাসিক ১০৲ দশ টাকা বৃত্তি পাইবেক।

 ১১। যদি আমার মধ্যমা অথবা কনিষ্ঠা ভগিনীর কোনও পুত্র উপার্জ্জনক্ষম হইবার পূর্ব্বে তাঁহার বৈধব্য ঘটে, তাহা হইলে যাবৎ তাঁহার কোনও পুত্র উপার্জনক্ষম না হয়, তাবৎ তিনি আমার বিষয়ের উপস্বত্ব হইতে সপ্তম ধারা নির্দ্দিষ্ট বৃত্তি ব্যতিরিক্ত মাসিক আরও ২০৲ কুড়ি টাকা পাইবেন।

 ১২। যদি শ্রীমতী নৃত্যকালী দাসীর কোনও পুত্র উপার্জ্জনক্ষম হইবার পূর্ব্বে তাঁহার বৈধব্য ঘটে, তাহা হইলে যাবৎ তাঁহার কোনও পুত্র উপার্জ্জনক্ষম না হয়, তাবৎ তিনি আমার বিষয়ের উপস্বত্ব হইতে সপ্তম ধারা নির্দ্দিষ্ট বৃত্তি ব্যতিরিক্ত মাসিক আরও ১০৲ দশ টাকা বৃত্তি পাইবেন।

 ১০। কার্য্যদর্শীরা আমার বিষয়ের উপস্বত্ব হইতে নীলমাধব ভট্টাচার্য্যের বনিতা শ্রীমতী সারদা দেবীকে তাঁহার নিজের ও পুত্রত্রয়ের ভরণ পোষণার্থে মাস মাস ৩০৲ ত্রিশ টাকা, আর তাঁহার পুত্রেরা বয়ঃপ্রাপ্ত হইলে যাবজ্জীবন কাল মাস মাস ১০৲ দশ টাকা দিবেন তিনি বিবাহ করিলে অথবা উৎপথবর্ত্তিনী হইলে তাঁহাকে উক্ত উভয় বিধেয় মধ্যে কোনও প্রকার বৃত্তি দিবার অবশ্যকতা নাই।

 ১৩। আমি অবিদ্যমান হইলে আমার বিষয়ের উপস্বত্ব হইতে যে অনুষ্ঠানে বেরূপ মাসিক ব্যয় হইবেক, তাহা নিম্নে নির্দ্দিষ্ট হইতেছে।

 জন্মভূমি বীরসিংহ গ্রামে আমার স্থাপিত বিদ্যালয়

১০০৲ এক শত টাকা।

    গ্রামে আমার স্থাপিত চিকিৎসালয়

৫০৲ পঞ্চাশ টাকা।

    গ্রামে অনাথ ও নিরুপায় লোক

৩০৲ ত্রিশ টাকা।

 বিধবা-বিবাহ ••• ••• ••• •••

১০০৲ এক শত টাকা।

 ১৫। যদি শ্রীযুক্ত জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়, শ্রীযুত উপেন্দ্রনাথ পালিত, শ্রীযুত গোবিন্দচন্দ্র ভড় এই তিনজন আমার দেহান্ত সময় পর্য্যন্ত আমার পরিচারক নিযুক্ত থাকে, তাহা হইলে কার্য্যদর্শীরা তাহাদের প্রত্যেককে এককালীন ৩০০৲ তিন শত টাকা দিবেন।  ১৬। কার্য্যদর্শীরা বিষয় রক্ষা, লৌকিক রক্ষা, কন্যাদান প্রভৃতির আবশ্যক ব্যয় স্বীয় বিবেচনা অনুসারে করিবেন।

 ১৭। এই বিনিয়োগপত্রে যাঁহার পক্ষে অথবা যে বিষয়ে যেরূপ নির্ব্বন্ধ করিলাম, যদি তাহাতে তাঁহার পক্ষে সুবিধা অথবা সে বিষয়ের সুশৃঙ্খল না হয়, তাহা হইলে কার্য্যদর্শীরা সকল বিষয়ের সবিশেষ পর্য্যালোচনা করিয়া যাঁহার পক্ষে অথবা যে বিষয়ে যেরূপ নির্ব্বন্ধ করিবেন তাহা আমার স্বকৃতের ন্যায় গণনীয় ও মাননীয় হইবেক।

 ১৮। এক্ষণে আমার সম্পত্তির যেরূপ উপস্বত্ব আছে, উত্তরকালে তাহার খর্ব্বতা হয়, তাহা হইলে যাহাকে বা যে বিষয়ে যা দিবার নির্ব্বন্ধ করিলাম, কার্য্যদর্শীরা স্বীয় বিবেচনা অনুসারে তাহার ন্যূনতা করিতে পারিবেন।

 ১৯। আবশ্যক বোধ হইলে কার্য্যদর্শীরা আমার সম্পত্তির কোন অংশ বিক্রয় করিতে পারিবেন।

 ২০। আমার রচিত ও প্রচারিত পুস্তক সকল শম্ভুচন্দ্রের সংস্কৃত যন্ত্রের পুস্তকালয়ে বিক্রীত হইতেছে, আমার একান্ত অভিলাষ শ্রীযুত ব্রজনাথ মুখোপাধ্যায় যাবৎ জীবিত ও উক্ত পুস্তকালয়ের অধিকারী থাকিবেন তাবৎকাল পর্য্যন্ত আমার পুস্তক সকল ঐ স্থানেই বিক্রীত হয় তবে এক্ষপে যেরূপ সুপ্রণালীতে পুস্তকালয়ের কার্য্য নির্ব্বাহ হইতেছে তাহার ব্যতিক্রম ঘটিলেও তন্নিবন্ধন ক্ষতি বা অসুবিধা বোধ হইলে কার্য্যদর্শীরা স্থানান্তরে বা প্রকারান্তরে পুস্তক বিক্রয়ের ব্যবস্থা করিতে পারিবেন।

 ২১। কার্য্যদর্শীরা একমত হইয়া কার্য্য করিবেন মতভেদস্থলে অধিকাংশের মতে কার্য্য নির্ব্বাহ হইবেক।

 ২২। নিযুক্ত কার্য্যদর্শীদিগের মধ্যে কেহ অবিদ্যমান অথবা এই বিনিয়োগপত্রের অনুযায়ী কার্য করিতে অসম্মত হইলে অবশিষ্ট দুই জনে তাঁহার স্থলে অন্য ব্যক্তিকে নিযুক্ত করিবেন। এইরূপে নিযুক্ত ব্যক্তি আমার নিজের নিয়োজিত ব্যক্তির ন্যায় ক্ষমতা প্রাপ্ত হইবেন।

 ২৩। যদি নিযুক্ত কার্য্যদর্শীরা এই বিনিয়োগপত্রের অনুযায়ী কার্য্য ভার গ্রহণে অসম্মত বা অসমর্থ হন তাহা হইলে যাঁহারা এই বিনিয়োগপত্র অনুসারে বৃত্তি পাইবার অধিকারী তাঁহারা বিচারালয়ে আবেদন করিয়া উপযুক্ত কার্য্যদর্শী নিযুক্ত করাইয়া লইবেন। তিনি এই বিনিয়োগপত্রের অনুযায়ী সমস্ত কার্য্য নির্ব্বাহ করিবেন।

 ২৪। যাবৎ আমার ঋণ পরিশোধ না হয় তাবৎকাল পর্য্যন্তু এই বিনিয়োগপত্রের নিয়ম অনুসারে নিযুক্ত কার্য্যদর্শীদিগের হস্তে সমস্ত ভার থাকিবে। ঋণ পরিশোধ হইলে ঐ সময়ে যাহারা শাস্ত্রানুসারে আমার উত্তরাধিকারী থাকিবেন তাঁহারা আমার সমস্ত সম্পত্তির অধিকারী হইবেন এবং সপ্তম নবম দশম একাদশ দ্বাদশ ত্রয়োদশ চতুর্দশ ও পঞ্চদশ ধারায় নির্দিষ্ট বৃত্তি প্রদানপূর্বক উপস্বত্ব ভোগ করিবেন। ঐ উত্তরাধিকারীরা বয়ঃপ্রাপ্ত হইলে কার্য্যদর্শী তাঁহাদিগকে সমস্ত বুঝাইয়া দিয়া অপসৃত হইবেন।

 ২৫। আমার পুত্র • • শ্রীযুত নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের

    

• • সংস্রব ও সম্পর্ক পরিত্যাগ করিয়াছি এই হেতুবশতঃ বৃত্তি নির্ব্বন্ধ স্থলে তাঁহার নাম পরিত্যক্ত হইয়াছে এবং এই হেতুবশতঃ তিনি চতুর্ব্বিংশ ধারা নির্দ্দিষ্ট ঋণ পরিশোধ কালে বিদ্যমান থাকিলেও আমার উত্তরাধিকারী বলিয়া পরিগণিত অথবা দ্বাবিংশ ও এয়োবিংশ ধারা অনুসারে এই বিনিয়োগপত্রের কার্য্যদর্শী নিযুক্ত হইতে পারিবেন না। তিনি চতুর্ব্বিংশ ধারা নির্দ্দিষ্ট ঋণ পরিশোধকালে বিদ্যমান না থাকিলে যাঁহাদের অধিকার ঘটিত তিনি তৎকালে বিদ্যমান থাকিলেও তাঁহারা চতুর্ব্বিংশ ধারার লিখিত মত আমার সম্পত্তির অধিকারী হইবেন। ইতি তাং ১৮ই জ্যৈষ্ঠ ১২৮২ সাল ইং ৩০শে মে ১৮৭৫ সাল।

(স্বাক্ষর) শ্রীঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কলিকাতা।

ইসাদী।

শ্রীরাজকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়  শ্রীশ্যামাচরণ দে

শ্রীরাধিকাপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়  শ্রীনীলমাধব সেন

শ্রীগিরীশচন্দ্র বিদ্যারত্ন  শ্রীযোগেশচন্দ্র দে

শ্রীবিহারিলাল ভাদুড়ী শ্রী কালীচরণ ঘোষ।

সর্ব্ব সাকিম্ কলিকাতা।

চতুর্থ ধারায় উল্লিখিত সম্পত্তির বিবৃতি—

(ক) সংস্কৃতযন্ত্রের তৃতীয় অংশ—

(খ) আমার রচিত ও প্রচারিত পুস্তক—

বাঙ্গালা—

(১) বর্ণপরিচয় দুই ভাগ (২) কথামালা (৩) বোধোদয় (৪) চরিতাবলী (৫} আখ্যানমঞ্জরী দুই ভাগ (৬) বাঙ্গালার ইতিহাস ২য় ভাগ (৭) জীবনচরিত (৮) বেতাল-পঞ্চবিংশতি (৯) শকুন্তলা (১০) সীতার বনবাস (১১) ভ্রান্তিবিলাস (১২) মহাভারত (১৩) সংস্কৃতভাষা প্রস্তাব (১৪) বিধবাবিবাহ বিচার (১৫) বহুবিবাহ বিচার।

সংস্কৃত—

 (১) উপক্রমণিকা (২) ব্যাকরণকৌমুদী (৩) ঋজুপাঠ ৩য় ভাগ (৪) মেঘদূত। (৫) শকুন্তলা (৬) উত্তরচরিত।

ইংরেজী—

 (1) Poetical Selection. (2) Selection from Goldsmith

 (গ) যে সকল পুস্তকের স্বত্বাধিকার ক্রয় করা হইয়াছে।

 (১) মদনমোহন তর্কালঙ্কার প্রণীত শিশুশিক্ষা তিন ভাগ।

 (২) রামনারায়ণ তর্করত্ন প্রণীত কুলীনকুলসর্ব্বস্ব।

 (ঘ) কাদম্বরী সটীক বাল্মীকি রামায়ণ প্রভৃতি মুদ্রিত সংস্কৃত পুস্তক।

 (ঙ) নিজ ব্যবহারার্থ সংগৃহীত বাঙ্গালা হিন্দী পার্শী ইংরেজী প্রভৃতি পুস্তকের লাইব্ররী।

 (চ) কর্ম্মটাঁড়ের বাঙ্গালা ও বাগান।

(স্বাক্ষর) ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।

 উইলের নগদ টাকার কোন উল্লেখ নাই। নগদ ছিল না ও থাকিত না। মৃত্যুর পূর্ব্বকাল পর্যন্ত বিদ্যাসাগর মহাশয়ের মাসিক আয় প্রায় চারি হাজার টাকা ছিল, দানে সংসারে প্রায় সবই ব্যয়িত হইত। শুনিতে পাই, মৃত্যুকালে তিনি ১৫।১৬ হাজার টাকা মাত্র নগদ রাখিয়া গিয়াছিলেন। অবারিত দান না থাকিলে, তিনি লক্ষ লক্ষ টাকা নগদ রাখিয়া যাইতে পারিতেন। উইলের একাধারে উল্লিখিত পুস্তকাবলীর তালিকায় পাঠকের হৃদয়ঙ্গম হইবে, বাঙ্গালীর উপর বিদ্যাসাগরের সাহিত্য কিরূপ অধিকার বিস্তার করিত। উইলে দেবসেবাদির কোন উল্লেখ নাই। উহাতেও বিদ্যাসাগরের মতিগতির পরিচয়।

 ১৮৭৫ খৃষ্টাব্দে বর্ধমানচক্‌দিঘীর জমিদার সারদাপ্রসাদ রায়ের উইল-সংক্রান্ত, মোকদ্দমা উপস্থিত হয়। ১২৮৩ সালের ১৮ই ও ১৯শে শ্রাবণ বা ১৮৭৬ খৃষ্টাব্দের ১লা এবং ২রা আগষ্ট বিদ্যাসাগর মহাশয় এই মোকদ্দমায় সাক্ষ্য দেন। উইল প্রকৃত নহে বলিয়া, সারদা বাবুর বিধবা স্ত্রী রাজেশ্বরী এই মোকদ্দমা রুজু করিয়াছিলেন। বিদ্যাসাগর মহাশয় বাদিনীর পক্ষে সাক্ষী ছিলেন। তাঁহাকে দুইদিন অসুস্থাবস্থায় সাক্ষ্য দিতে হইয়াছিল। চক্‌দিঘীর জমিদার পরিবারের সহিত তাঁহার কিরূপ ঘনিষ্ঠতা ছিল, এই সাক্ষ্যবাক্যে তাহার প্রমাণ। সাক্ষ্যে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের অনেক প্রাণের কথা বাহির হইয়াছিল। আত্মবাক্যে প্রাণের কথা প্রকাশ পায়। এই সাক্ষ্যবাক্যে ব্যক্তিগত অনেক ঐতিহাসিক ও সামাজিক তত্ত্ব জানিতে পারা যায়। সাক্ষ্য-বাক্য ইংরেজীতে লিখিত। আমরা তাহার অনুবাদ দিলাম,—

 মং ৮৯৫ হইতে ৮৭০—৪র্থ সাক্ষী ঈশ্বরচন্দ্র শর্ম্মা বিদ্যাসাগরের এজাহার। তারিখ ১৮৭৭ সালের ১লা এবং ২রা আগষ্ট।

বর্দ্ধমানের-পূর্ব্ববিভাগের দেওয়ানি আদালত।

উপস্থিত

বাবু নবীনচন্দ্র গাঙ্গুলি দ্বিতীয় সবর্ডিনেট্ জজ।

মকদ্দমার নং ১৮৭৫ সালের ৭৯ নং।

১৮৭৬ সালের ১লা আগষ্ট।

 বাদীর পক্ষে ৪ নং সাক্ষী উপস্থিত হইয়া বিধি অনুসারে শপথ গ্রহণপুর্ব্বক বলিতেছেন,—আমার নাম ঈশ্বরচন্দ্র শর্ম্মা বিদ্যাসাগর। আমি ৺ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ে পুত্র। নিবাস কলিকাতা, বয়স ৫৬ বৎসর। লেখক ব্যবসায়ী।

 সাক্ষী বলিতেছেন,—আমি কিছুদিন পূর্ব্বে সংস্কৃত কলেজের প্রিন্সিপাল ছিলাম। আমি বহুসংখক সংস্কৃত এবং বাঙ্গালা পুস্তক লিখিয়াছি। আমি চক্‌দিঘীর সারদা রায়কে চিনিতাম। আমার বিবেচনায় তাঁহার সহিত আমার ২০ বৎসরের অধিক কালের আলাপ। তাঁহার মৃত্যুর ১০।১২ বৎসর পূর্ব্ব হইতে তাঁহাকে চিনিতাম। তাঁহার সহিত আমার বিশেষ আলাপ ও বন্ধুত্বভাব ছিল। তিনি বিষয়সম্বন্ধে আমার পরামর্শ গ্রহণ করিতেন। আমি নাবালক ললিতমোহন রায়কে চিনি। সারদা বাবু, তাঁহার মৃত্যুর পর কিরূপে তাঁহার বিষয়ের বন্দোবস্তু হইবে, সে বিষয়ে আমার পরামর্শ জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন। তিনি আমাকে তাঁহার উইলের একটি খসড়া দেখাইয়াছিলেন। আমার বিবেচনায় ইহা তাঁহার মৃত্যুর ৪।৫ বৎসর পূর্ব্বে, কিন্তু আমার ঠিক মনে নাই। সেই খসড়া আমার হস্তে আসিয়াছিল। উহা পাঠ করিবার নিমিত্ত উনি আমাকে দিয়াছিলেন। এই প্রকারেই উহা আমার হাতে আসে। উহা ভাল কি মন্দ, ইহা দেখিবার জন্য তিনি আমাকে দিয়াছিলেন। ঐ খসড়া আমার কাছে অনেক দিন ছিল। আমার বোধ হয়, উহা এক বৎসর কি দেড় বৎসর আমার নিকটে ছিল। কিন্তু এক্ষণে আমার ঠিক মনে নাই। ঐ খসড়া আমি সারদা বাবুকে প্রত্যর্পণ করি। উইলের ঐ নকলের কোন্ অংশ আপত্তিজনক, তাহা আমি তাঁহাকে দেখাইয়া দিই এবং ঐ খসড়া তাঁহাকে ফিরাইয়া দিই। ঐ আপত্তিজনক অংশগুলির বিষয় তাঁহাকে অমি মুখেই বলি, তাঁহাকে ঐ খসড়া ফিরিয়া দিবার পর সারদা বাবুর সহিত আমার একবার কি দুইবার কথা হয়। আমার স্মরণ আছে, তিনি পশ্চিমে যান। যখন তিনি পশ্চিমে যাইবার ইচ্ছা করেন, তাহার কিছু পূর্ব্বে তাঁহার সহিত আমার সাক্ষাৎ হয় নাই। এক সময়ে তাঁহাকে আমি জিজ্ঞাসা করিয়াছিলাম যে, উইলের বিষয় কি হইল? তাহাতে তিনি উত্তর দেন যে, আমার একবার পশ্চিমে যাইবার ইচ্ছা আছে এবং আমি মনে মনে এই স্থির করিয়াছি যে, তথায় যাইবার পূর্ব্বে আমি যাহা হউক একটা স্থির করিয়া যাইব। তাঁহার সহিত আমার অন্য কিছু কথা হইয়াছিল কি না, তাহা আমার স্মরণ নাই এবং ইহাও আমার ঠিক স্মরণ নাই, পশ্চিমে যাইবার কত দিন পূর্ব্বে তাঁহার সহিত ঐ কথা হইয়াছিল। কিন্তু আমার বিবেচনা হয়, তথায় যাইবার ৬।৭ মাস পূর্ব্বে তাঁহার সহিত ঐ কথা হইয়াছিল।

 (প্রঃ—উইলে স্বাক্ষরকারী সাক্ষী কে হইবে, তাহার সম্বন্ধে আপনাদের কোন কথাবার্ত্তা কিম্বা ঐ সম্বন্ধীয় কোন কথাবার্তা হইয়াছিল কি না?) আমি তাঁহাকে বলিয়াছিলাম যে, উইল সম্বন্ধে প্রায়ই গোলযোগ উপস্থিত হয়, তজ্জন্য আমার বিবেচনায় এইরূপ লোকের সঙ্গে উইল লেখা উচিত যে, পরে কেহ কোন গোলযোগ উপস্থিত করিতে না পারে। তাহার পরে বহুক্ষণ ধরিয়া তাঁহার সহিত কথাবার্ত্তা হয় এবং ইহা সিদ্ধান্ত হয় যে, তিনি তাঁহার উইল হব্‌হাউস সাহেব, হগ্‌সাহেব, লফোর্ড সাহেব, হীরালাল শীল, শ্রীরাম চাটুর্য্যে ও আমার সমক্ষে লিখিবেন এবং স্বাক্ষর করিবেন এবং লিখিবার পর রেজেষ্টারি করাইয়া লইবেন। পশ্চিম অঞ্চলে যাইবার পূর্ব্বে তাঁহার সহিত আমার এই কথাবার্ত্তা হয়। পূর্ব্বে যে কথাবার্ত্তা হইয়াছিল, তাহার বিষয় আমি পূর্ব্বে বলিয়াছি; কিন্তু এই কথাবার্ত্তা তারও পূর্ব্বে হইয়াছিল। যখন উইলের সম্বন্ধে কথাবার্ত্তা চলিতেছিল, তখনই ইহা নির্দ্ধারিত হইয়াছিল যে, মাননীয় ব্যক্তিসমূহ এই উইলের স্বাক্ষরকারী সাক্ষী হইবেন এবং ঐ উইল নিয়মিতরূপে রেজেষ্টারী করা হইবেক। হব্‌হাউস সাহেব বর্দ্ধমান বিভাগের একজন বিচারক ছিলেন এবং পরে তিনি হাইকোর্টের বিচারক হন। যখন আমি সারদা বাবুকে মাননীয় সাক্ষীসমূহের কথা বলি, তখন তিনি নিজেই ঐ তিন জন ভদ্র লোকের নাম করিয়াছিলেন। হগ্‌সাহেব এক্ষণে কলিকাতা পুলিসের কমিসনর। লফোর্ড সাহেব তখন বর্দ্ধমান বিভাগের মাাজিস্ট্রেট ছিলেন। তিনি এক্ষণে কোথায় আছেন, তাহা আমি জানি না। পূর্ব্বোক্ত শ্রীরাম চাটুর্য্যের নিবাস বর্দ্ধমান জেলার সাঁকোনাড়া গ্রাম। তিনি ঐ সময়ে পাকপাড়া রাজবাটীর একজন কর্ম্মকর্ত্তা ছিলেন। সারদা বাবুর সহিত তাঁহার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠতা এব বন্ধুত্ব ছিল। সারদা বাবু পুর্ব্বোক্ত হীরালাল শীলের বাটীতে মারা যান। আমার যত দুর স্মরণ আছে, তাহাতে আমি বিবেচনা করি যে, উইলের ঐ খসড়া শ্রীরাম চাটুর্য্যের স্বহস্তের লেখা। তিনি এখনও জীবিত আছেন। সারদা বাবু পশ্চিম হইতে ফিরিয়া আসিলে পর অন্য আর একটী বিষয়ের সহিত তাঁহার সঙ্গে উইলেরও কথা হয়। সে কথাবার্ত্তা এই—তিনি কলিকাতা আসিয়াছিলেন এবং আমাকে স্বয়ং জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন, কতকগুলি লোক ললিতমোহনকে পোষ্যপুত্র লইবার জন্য পরামর্শ দিতেছে, আপনার এ বিষয়ে মত কি? আমি এ বিষয়ে আপত্তি উত্থাপন করিয়া বলিয়াছিলাম যে, ক্ষত্রবংশের একজন পুত্রকে শাস্ত্রমতে পোষ্যপুত্ররূপে গ্রহণ করা যাইতে পারে না, সম্পর্কে আবার ভাগিনেয় হয় এবং যদি তিনি ঐ ভাগিয়েকে পোয্য পুত্ররূপে গ্রহণ করেন, তাহা হইলে ইহা আইনবিরুদ্ধ কার্য্য হইবেক। আমি ঐ কথা বলিলে, তিনি ও বিষয়ের আর কোন কথা উত্থাপন করেন নাই। তৎপরে আমি তাঁহাকে বলিয়াছিলাম, ললিতমোহনকে যদি বিষয় দেওয়াই অভিপ্রেত হয়, তাহা হইলে উইল করিয়াই বিষয় দেওয়া শ্রেয়ষ্কর, আর কোন প্রকারে নহে। তিনি বলিলেন, আচ্ছা যখন আমি পুনরায় কলিকাতার প্রত্যাগমন করিব, তখন উইলের একটী খসড়া আনিব এবং কলিকাতায় পুনরাগমনে এ বিষয়ের শেষ করিব। সারদা বাবুর উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ হইতে প্রত্যাগমনের পর এই কথাবার্ত্তা হইয়াছিল। আমার ঠিক মনে নাই যে, এই কথাবার্ত্তা তাঁহার প্রত্যাগমনের কত দিন পরে হইয়াছিল; সারদা বাবু কখন আমাকে বলেন নাই যে, তিনি উইল প্রস্তুত করিয়াছেন। আমার বোধ হইতেছে যে, তিনি আমাকে একবার জিজ্ঞাসা করেন যে, পুনরায় বিবাহ করা উচিত কি না। আমার মনে নাই যে, কখন তিনি আমাকে ইহা জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন। ছয় মাস কি এক বৎসর অধিক হইতে পারে যে, আমার সহিত সারদা বাবুর মৃত্যুর পূর্ব্বে তাঁহার শেষ সাক্ষাৎ হয়। আমি উইলের খসড়াটী প্রত্যর্পণ করিবার পর অন্য কোন খসড়া পুনশ্চ দেখি নাই।

 জেরা করাতে সাক্ষী বলেন,—আমার বোধ হয়, উইলের ঐ খসড়া সারদা বাবু আমাকে স্বহস্তে দিয়াছিলেন। আমি খসড়ার কোন অংশের পরিবর্ত্তন করি নাই; কিন্তু আমি খসড়ার ঐ আপত্তিজনক অংশগুলি তাঁহাকে বাছিয়া দিয়াছিলাম। তবুও আমার মনে নাই যে, উহার কিছু পরিবর্ত্তন করিয়াছিলাম কি না। আমি এই বলিয়া আপত্তি করিয়াছিলাম যে, ভাগিনেয়কে সম বিষয় দেওয়া এবং অপরকে একবারে বঞ্চিত করা নিতান্ত অন্যায়। আমি বলিয়াছিলাম, অপর ভাগিনেয়ের কিছু পাওয়া উচিত। ঐ ভাগিনেয়ের নাম প্রিয়ম্বু। ভাগিনারা অপেক্ষাকৃত অল্প অংশ প্রাপ্ত হন। আমি তাদের আরও কিছু বেশী করিয়া দিতে বলি। আমি আরও তাঁহার স্ত্রীকে কিছু বেশী দিতে বলিয়াছিলাম। তাহাতে তিনি উত্তর দেন,আচ্ছা আমি এ বিষয়ে বিবেচনা করিব। আমার বোধ হয় উইলের সেই খসড়াতে তাঁহার স্ত্রীকে মাসিক একশত টাকার মাসহারা দেওয়া ছিল। যখন আমি এ উইলের খসড়াটী পাই, তখন আমি ইহা কলিকাতায় কাহাকেও দেখাই নাই। ললিতমোহন কোন্ স্থানে জন্মগ্রহণ করেন, তাহা আমি জানি না। কিন্তু বাল্যকাল হইতে তিনি সারদা বাবুর বাটীতে মানুষ হইতেছিলেন। সারদা বাবু তাঁহাকে অত্যন্ত ভালবাসিতেন এবং তাঁহাকে অত্যন্ত যত্ন করিতেন। রাজেশ্বরী তাঁহাকে যত্ন করিতেন কি না তাহা আমি জানি না। কারণ তখন আমি তাঁহাদের অন্দর মহলে যাইতাম না। আমি ঐ সময় রাজেশ্বরীকে দেখি নাই। আমার সহিত সারদা বাবুর যে কয়েকবার দেখা হয়, তাহাতে তিনি যে এ সম্বন্ধে মত পরিবর্ত্তন করিয়াছিলেন, এমন কথা কখনও শুনি নাই। কিন্তু এক সময়ে তিনি বলিয়াছিলেন, কিন্তু কবে তাহা আমার মনে নাই, ললিতমোহন দ্বারা তিনি বড় জ্বালাতন হইতেছেন। তিনি বলিয়াছিলেন যে, ললিতমোহন বহিয়া গেছে। কিন্তু কবে তিনি বলিয়াছিলেন, তাহা আমার মনে নাই। সারদা বাবু যখন পশ্চিমে যান, তখন আমি কলিকতায়। পশ্চিমে যাইবার পূর্ব্বে তিনি আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করিবার মনস্থ করিয়াছিলেন কিনা, তাহা আমি বলিতে পারি না। ১২৭২ সালের ভাদ্রমাসের শেষে, তিনি আমাকে চকদিঘী যাইবার নিমন্ত্রণ করিয়াছিলেন কিনা তাহা আমার মনে নাই। সারদা প্রসাদ রায়ের সহি আমি চিনি। আমি অনেকবার তাঁহার সহি দেখিয়াছি। আমার বিবেচনায় আমাকে তাঁহার সহি দেখাইলে তাহা আমি চিনিতে পারি। আমার মনে নাই, পশ্চিমে যাইবার কতদিন পুর্ব্বাবধি তাঁহার সহিত আমার সাক্ষাৎ হয় নাই। ইহা ছয়মাস কিম্বা একবৎসর হইতে পারে। পশ্চিম হইতে ফিরিয়া আসিবার কত দিন পরে তাঁহার সহিত আমার সাক্ষাৎ হয়, তাহা আমার মনে নাই। তাঁহার প্রত্যাগমনের পর, আমার বোধ হয়, তাঁহার সহিত দুইবার দেখা হয়। যখন ললিতমোহনকে পোষ্যপুত্র লইবার কথা হয়, তখন আর কেহ উপস্থিত ছিল কিনা, তাহা আমার মনে নাই। সারদা বাবু পশ্চিম যাইবার পর তাহার মৃত্যুর পূর্ব্ব পর্যন্ত আমি চক্‌দিঘী যাই নাই। সারদা বাবুর জীবিতাবস্থায় আমি রাজেশ্বরীকে কখন দেখি নাই। ললিতের জন্মাইবার পূর্ব্ব হইতে আমি সারদা বাবুকে জানি। সারদা বাবু যখন মৃত্যুমুখে পতিত হন, তখন আমি কলিকাতায়। সারদা বাবুর মৃত্যুর পর দিবস শ্রীরাম চাটুর্য্যে আমার নিকট আসিয়াছিলেন এবং বলিয়াছিলেন, বৃন্দাবনচন্দ্র রায় অত্যন্ত শোকসন্তপ্তহৃদয়ে বাটী চলিয়া গিয়াছেন এবং আমাকে আপনার নিকট—সারদা বাবু তাঁহার উইল লিখিয়া গিয়াছেন—ইহা বলিয়া পাঠাইয়াছেন এবং আপনি তাঁহার সমস্ত কীর্ত্তি বজায় রাখিতে যত্নবান হইবেন, আপনি উইলের বিষয় সমস্তই অবগত আছেন। এই কথা শুনিবার পর আমি ভাবিয়াছিলাম যে, তিনি মুখে যে উইলের কথা তাঁহার জীবদ্দশায় বলিয়াছিলেন, সেইরূপই উইল করিয়া গিয়াছেন। উইলের ক্রোড়পত্রের বিষয় আমি শ্রীরাম বাবুর নিকট হইতে কিছুই শুনি নাই। আমি শ্রীরাম বাবুকে উইলের একটী নকল পাঠাইয়া দিতে বলিয়াছিলাম। আমি ঐ নকল পাঠ করিয়া যদি কোন আপত্তিজনক বিষয় না দেখিতে পাই, তাহা হইলে আমি আমার সাধ্যমত সাহায্য করিব বলিয়াছিলাম। অল্পদিন পরেই ঐ উইল এবং উহার একটা ক্রোড়পত্রের নকল আমাকে পাঠাইয়া দেওয়া হইয়াছিল। আমার বোধ হয়, বৃন্দাবনচন্দ্র রায়ই ইহা পাঠাইয়া দেন। ঐ উইল এবং উহার ক্রোড়পত্র পাঠে আমি কতকটা বিস্মিত হই। কারণ আমি ভাবিয়াছিলাম, ঐ উইল যথাসময়ে সম্পন্ন হইয়াছে। আমার বোধ হয়, আমি শ্রীরাম বাবুর নিকট হইতে শুনিয়াছিলাম যে, এই উইলের বিষয় তিনি বলিয়াছিলেন। আমি তখন বুঝিতে পারি নাই যে, প্রথমে কেন উইল এবং তাহার পরে ক্রোড়পত্র লিখিত হয়। শ্রীরাম চাটুর্য্যে যাহা বলিয়াছিলেন, তাহাতে আমি বুঝিলাম যে, সারদাবাবু মৃত্যুর সময় উইল করেন। রাম চাটুর্য্যের সহিত কথা হইবার আনুমানিক এক সপ্তাহ মধ্যে আমি উইল এবং ক্রোড়পত্রের নকল প্রাপ্ত হই। আমি ঐ নকল পাঠ করি। দুই একটা কথা ছাড়া পূর্ব্বোল্লিখিত খসড়ার সহিত উইলের মিল ছিল। আমি ঐ খসড়ার কতকগুলি বিষয় সম্বন্ধে পরিবর্ত্তন করিবার পরামর্শ দিয়াছিলাম;—যথা তাঁহার পরিবার, ভগিনী এবং ভাগিনেয়ের মাসহারা বৃদ্ধি। আমি ইহাতে বর্দ্ধিত মাসহারা উল্লেখ দেখিয়াছিলাম। খসড়ার সহিত ইহার এই কেবল মাত্র প্রভেদ। খসড়ার প্রথম অংশেই ইহা লিখিত ছিল, আমি উইলের সমস্ত বন্দোবস্ত করিয়াছি। আমি আসল উইল কিম্বা তাহার ক্রোড়পত্র দেখি নাই। সারদা বাবুর মৃত্যুর পর ছক্কনলাল রায়কে কখন কলিকাতায় দেখি নাই। আমার বোধ হয়, তাঁহার সঙ্গে আমার একবার চন্দননগরে দেখা হয় এবং আমার বোধ হয়, সেই সময় তাঁহার সহিত আমার কথাবার্ত্তা হয়। ছক্কনলালের নিবাস চক্‌দিঘী। তিনি স্বয়ং আমাকে উইলের বিষয় কিছু বলেন নাই। কিন্তু আমার জিজ্ঞাসা করিবার পর তিনি বলিলেন। রাম চাটুর্য্যে সে সময় তথায় উপস্থিত ছিলেন না। (প্রশ্ন,—আপনি কি ছক্কনলাল রায়কে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন যে, শেষ উইল যখন স্বাক্ষরিত হয়, তখন তিনি কোথায় ছিলেন? বাদিনীর কৌন্সিল এই প্রশ্ন উত্থাপন করিতে আপত্তি করেন।) উত্তর—আমি তাঁহাকে এ রকম প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করি নাই। কারণ আমি পূর্ব্বে শুনিয়াছিলাম যে, তিনি সেই সময় হীরালাল বাবুর বাগানে ছিলেন। সারদার মৃত্যুর পর বাদিনী আমাকে একখানি পত্র লিখেন। সেই চিঠি আমার নিকট নাই, তাহা আমি ছিঁড়িয়া ফেলিয়াছি। তিনি আমাকে চক্‌দিঘীতে যাইবার কথা লিখেন। আমি চক্‌দিঘীতে যাই। কিন্তু আষাঢ় মাসে কি অন্য কোন মাসে এবং কোন্ তারিখে গিয়াছিলাম, তাহা আমার স্মরণ নাই। আমি ঠাকুর প্রসাদ নামধারী কোন লোককে জানি না। একটা লোক আমাকে চক্‌দিঘী লইয়া যাইবার জন্য এক খানি চিঠি লইয়া আসে। ঐ চিঠি দিবার দুই তিন দিবস পরে আমি চক্‌দিঘী যাই।

 ইহার পরেও ৩ এ নং কাগজে দেখিয়া সাক্ষী বলেন,—আমি জানি না, এই কাগজের উপর লেখা কাহার হস্তের। আমি সারদা বাবুর বাঙ্গালা হস্তাক্ষর দেখি নাই। যখন আমি চক্‌দিঘী গিয়াছিলাম, তখন ১৮৬০ খৃষ্টাব্দের ২৭ ধারা মতে এবং ১৮৫৮ খ্রীষ্টাব্দের ৪০ ধারামতে সাটফিকেট লওয়া হয় নাই। যখন আমি চক্‌দিঘীতে গিয়াছিলাম, তখন আমি রাজেশ্বরীকে প্রথমে কিছু বলি নাই। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন যে, আপনি উইলের খসড়া দেখিয়াছিলেন, এবং এক্ষণে উইলের নকল দেখিয়াছেন। প্রথমে এই এই হাল উইল আমার স্বামীর ইচ্ছামত হইয়াছে কি না? তাহাতে আমি উত্তর দিয়াছিলাম, দুটা একটা বিষয়ে একটু তফাৎ আছে। তদ্‌ভিন্ন আর সমস্ত বিষয় তাঁহার ইচ্ছামত হইয়াছে। ইহার পরে তিনি পুনর্ব্বার আমাকে জিজ্ঞাসা করেন যে, নানালোক এ বিষয়ে নানাকথা কহিতেছে, এখন আমার কি করা উচিত? তাহাতে আমি উত্তর দিয়াছিলাম, আপনার স্বামী যেরূপ বলিয়া গিয়াছেন, সেইরূপ করাই উচিত। লোকে যাহা বলে, সেইরূপ করা উচিত নয়।

 উপরে যাহা বলা হইল, ইহা তাঁহার সহিত কথা কহিবার ফল। আমার ঠিক স্মরণ নাই, আমি চক্‌দিঘীতে কত দিন ছিলাম, আমার বোধ হয়, দুই তিন দিবস। সাক্ষীকে একখানি পত্র দেখান হইয়াছিল। তিনি ইহার প্রতি দৃষ্টি করিয়া বলিয়াছিলেন—আমি বলিতে পারি না, ইহা কাহার হস্তাক্ষর। ইহা রাজেশ্বরীর হস্তাক্ষর হইতে পারে। ইহার সহির প্রতি লক্ষ্য করিয়া সাক্ষী বলেন,—আমি রাম চাটুর্য্যের হস্তাক্ষর যতদূর চিনি, তাহাতে বলিতে পারি, ইহা শ্রীরাম চাটুর্য্যের হস্তাক্ষর নহে। এই চিঠি কাহার হস্তাক্ষর, তাহা আমি বলিতে পারি না। ইহার পর সাক্ষী ৪নং কাগজ দৃষ্টি করিয়া বলেন,—ইহা আমার হস্তাক্ষর। ইহা আমি রাজেশ্বরী এবং যোগেন্দ্র বাবুকে লিখিয়াছিলাম। সারদা বাবুর ভগিনী কুলদা দেবীর কোন বন্দোবস্ত না হইবার দরুণ তিনি আমাকে ইহা জানাইলে, আমি এই পত্র লিখি। সারদা বাবুর বাঙ্গালা সহি আমি জানি না।

 প্রশ্ন। আপনি কি বলিতে পারেন, আপনি কি বিশ্বাস করিয়াছিলেন, আপনি যখন ৪নং চিঠি লেখেন, তখন সারদা বাবু তাঁহাব উইল করিয়াছেন?

 উত্তর। আমি তাহা বিশ্বাস করি নাই।

 প্রঃ। আপনি কি সেই সময় বিশ্বাস করছিলেন যে, সারদা বাবু তাঁহার উইল করেন নাই?

 উঃ। আমার তাহাতে সন্দেহ ছিল।

 প্রঃ। আপনার কি বিশ্বাস হইয়াছিল?

 উঃ। অমি বিশ্বাস করি নাই যে, তিনি কখন উইল করিয়াছিলেন।

 প্রঃ। আপনি পত্র লিখিয়াছিলেন, তাঁহার ইচ্ছা কার্য্যে পরিণত করিতে তোমরা সকলে চেষ্টা করিবে। এই বিশ্বাসে এবং এই বিবেচনাতে মৃত সারদা প্রসাদ বাবু আপনাদের দুই জনের হস্তে কার্য্যভার অর্পণ করিয়া যান। আপনি যখন ঐ পত্র লিখিয়াছিলেন, তখন আপনার কি সন্দেহ হইয়াছিল যে, সারদা বাবু আপনাদের দুই জনের হস্তে কার্য্যের ভার দিয়া গিয়াছেন? যখন আপনি ঐ পত্র লিখেন, তখন আপনার কি সন্দেহ হইয়াছিল যে, সারদা বাবু রাজেশ্বরী এবং যোগেন্দ্রের হস্তে সমস্ত বিষয়ের তত্ত্বাবধারণের ভার দিয়াছেন?

 উঃ। আমি এই প্রশ্ন সম্পূর্ণরূপে বুঝিতে পারিলাম না। (এই প্রশ্নটী পুনরায় আদালত দ্বারায় বাঙ্গালায় বলা হয়।) সারদা বাবুর উইলের বিষয়ে আমার সন্দেহ ছিল। আদালতে যে উইল ফাইল করা হয়, তাহাতেই দুই জনের দ্বারা বিষয়ের রক্ষণাবেক্ষণের কথা উল্লেখ আছে ও তজ্জন্য আদালতে যে উইল ফাইল হয়, তাহার আনুযায়িক রাজেশ্বরী এবং যোগেন্দ্র বিষয়ের তত্বাবধারণের জন্য আদালত “হইতে” অনুমতি পাইয়াছিলেন এবং এরূপ অবস্থাতে কোন বিষয়ের বন্দোবস্ত জন্য তাহাদিগকে পত্র লিখিতে হইলে, তাহারা উইল দ্বারা যে ক্ষমতাসম্পন্ন, তাহ উল্লেখ করিতে হয়। সেই কারণেই আমি তাঁহাদিগকে ঐ ভাবে পত্র লিখি। সে যাহা হউক, উইল যথার্থ, তাই আমার বিশ্বাস ছিল না এবং সারদা বাবু যে উইল দ্বারা কার্য্য করিতে তাহাদিগকে ক্ষমতা দিয়া গিয়াছেন, তাহা বিশ্বাস করি নাই।

নবীনচন্দ্র গাঙ্গুলি সব্ জজ।
২রা আগষ্ট, ১৮৭৬ খৃষ্টাব্দ।

 তিন খানি পত্র আমি পাইয়াছি, তাহার মধ্যে একখানি বৃন্দাবনচন্দ্র রায়, একখানি ছক্কনলাল এবং এক খানি রাজেশ্বরী দেবী লিখিয়াছেন। ঐ তিন খানি পত্র উইল সম্বন্ধীয়। আমার স্মরণ নাই, আমি কাহার নিকট হইতে শুনিয়াছিলাম যে, সারদা বাবুর যখন মৃত্যু হয়, তখন ছক্কনলাল রায় হীরালাল বাবুর বাগানে ছিলেন কি না। আমি পত্র খানি ছক্কনলাল বাবুর নিকট হইতে পাইয়াছিলাম। তাঁহার সহিত আমার চন্দননগরে সাক্ষাৎ হয়। আমার বোধ হয়, ইহা সারদা বাবুর মৃত্যুর একমাস দেড় মাস পরে। সারদা বাবুর মৃত্যুর পূর্ব্বে কি পরে ছক্কনলাল বাবুর সহিত আমার আর সাক্ষাৎ হয় নাই। সারদা বাবুর মৃত্যুর পরেই চক্‌দিঘীতে যোগেন্দ্র বাবুর সহিত আমার সাক্ষাৎ হয়। যোগেন্দ্র বাবু সারদা বাবুর মৃত্যুর পর আমার সহিত দেখা করিবার জন্য কলিকাতায় আসিয়াছিলেন। আমার মনে হয়, সারদা বাবুর মৃত্যুর পর যখন আমি চক্‌দিঘীতে যাই, তখন রাজেশ্বরী এবং বৃন্দাবন রায়ের সহিত আমার কথাবার্ত্তা হয়; কিন্তু যোগেন্দ্রের সহিত আমার কোন কথাবার্ত্তা হয় নাই। বৃন্দাবনচন্দ্র রায়ের সহিত যখন আমার কথাবার্ত্তা হয়, তখন যোগেন্দ্র বাবু, কোথায় ছিলেন, আমি তাহা জানি নাই। আমি তাঁহাকে মণিরাম বাবুর বাটীতে দেখি নাই। তাঁহাকে চক্‌দিঘীতে দেখিয়া থাকিতে পারি। আমি বৃন্দাবনচন্দ্রের সহিত চক্‌দিঘীতে যাই। আমি তাঁহার সহিত কথা কহিয়াছিলাম। তিনি বলিয়াছিলেন,—এখানে বহু প্রকার গোলযোগ উপস্থিত হইয়াছে; সারদা বাবুর কীর্ত্তি বজায় রাখিবার জন্য আপনাকে এখানে আনাইবার উদ্দেশ্য। তাহাতে আমি বলিয়াছিলাম,—আমাকে কি করিতে হইবে? তাহাতে তিনি বলিয়াছিলেন,—আপনাকে এমন করিতে হইবে, যাহাতে রাজেশ্বরী বিপক্ষতাচরণ না করেন। তাহার মানে, উইলের বিপক্ষতাচরণ না করেন। এই খানে তাঁহার সহিত কথাবার্ত্তার শেষ হয়। তৎপরে আমি বাটীব ভিতরে যাই এবং রাজেশ্বরীর সহিত সাক্ষাৎ করি। তাহাতে তিনি সর্ব্ব-প্রথমে আমাকে জিজ্ঞাসা করেন যে, আপনি উইলের খসড়াটী খুলিয়া দেখেন এবং আপনি উইল দেখিয়াছেন, এই দুইটী উইলের বিষয় এক রকম কি না। তাহাতে আমি উত্তর দিয়াছিলাম যে, উহাতে আপনার স্বামীর অভিপ্রায় ব্যক্ত আছে। তাহাতে তিনি বলেন,—আমার এক্ষণে কি করা উচিত। আমি বলিয়াছিলাম,—আপনার মৃত স্বামীর ইচ্ছামত কার্য্য করা উচিত। আমার এই কথাবার্ত্তার বিষয় মনে আছে। আর কোন কথাবার্ত্তা হইয়াছিল। কি না, মনে নাই। ললিতমোহনের লেখা-পড়ার সম্বন্ধে কথা কহিয়াও থাকিতে পারি; কিন্তু আমার ঠিক স্মরণ নাই। আমার আরও মনে নাই, আমি বলিয়াছিলাম কি না যে, ললিতমোহনকে যদি রীতিমত লেখা-পড়া শিখান, তাহা হইলে কোন্ বিষয়ে আর গোলযোগ হইবে না। আমি তখন উইলের মর্ম্মে জানিতাম যে, ললিতমোহনকে সারদা বাবু উইলের দ্বারা উত্তরাধিকারী করিয়া গিয়াছেন। আমার স্মরণ নাই, আমি ললিতমোহনের রীতিমত লেখা-পড়া সম্বন্ধে বাজেশ্বরীকে কিছু বলিয়াছিলাম কি না; কিন্তু আমি বৃন্দাবনচন্দ্র রায়কে বলিয়াছিলাম যে, যাহাতে এই না-বালক ভালরূপ শিক্ষা পায়, আপনার তাহা করা উচিত। আমার স্মরণ নাই,—রাজেশ্বরীকে আমি বলিয়াছিলাম কিনা যে, ললিতমোহন উহার পর তাঁহার কাছে কোন প্রকার কৃতজ্ঞতাপাশে বদ্ধ থাকিবে না। যোগেন্দ্র বাবুর সেই সময় কত বয়স ছিল, তাহা আমি বলিতে পারি না। তাঁহার চেহারা দেখিয়া এক জন অনুমান করিতে পারে, তাঁহার বয়স ১৬।১৭ কি ১৮।১৯ বৎসর। আমার বোধ হয়, যোগেন্দ্র বাবু সেই সময় আমাকে বলিয়াছিলেন যে, তাঁহার বয়স অতি কম এবং এরূপ বৃহৎ বিষয়ের তত্ত্বাবধারণ করা তাঁহার পক্ষে দুঃসাধ্য। আমি তাহাকে কি বলিয়াছিলাম, তাহা আমার স্মরণ নাই। কালীপ্রসন্ন সিংহ মহাশয়ের সম্বন্ধে কিছু বলিয়াছিলাম কি না, আমার স্মরণ নাই। কোন বিষয়ের তত্ত্বাবধারণের জন্য আমি কোন স্ত্রীলোকের সহিত কখন তত্ত্বাবধায়ক ছিলাম না। আমি কখন কাহার বিষয়ের তত্ত্বাবধায়ক ছিলাম না। যখন যোগেন্দ্র অল্প বয়স হেতু এত বড় বিষয়ের তত্ত্বাবধারণ বিষয়ে অপারগতা জানাইয়াছিলেন, তখন আমি তাঁহাকে সারদা বাবুর ইচ্ছানুষায়িক কার্য্য করিতে বলিয়াছিলাম কি না, তাহা আমার স্মরণ নাই। হয়ত এরূপ বলিয়া থাকিতে পারি, তাহা আমি এখন ভুলিয়া গিয়াছি। যখন রাজেশ্বরীর সহিত আমার সাক্ষাৎ হয়, তখন আমি তাঁহাকে বলি নাই যে, উইলের নকল আমি দেখিয়াছি। তিনি উইল সম্বন্ধে যেরূপ বলেন, তাহা আমি পূর্ব্বে বলিয়াছি। আমি প্রথম উইলের কথা উত্থাপন করি নাই। তিনি প্রথমে আমাকে উইলের কথা বলেন। উহার পর রাজেশ্বরীর সহিত দুইবার চক্‌দিঘীতে আমার সাক্ষাৎ হয়। এই সাক্ষাতের পর আমি চক্‌দিঘী হইতে চলিয়া আসিলে, রাজেশ্বরী আমাকে আর পত্র লেখেন নাই। বৃন্দাবনচন্দ্র আমাকে পত্র লিখিয়াছিলেন কি না আমার স্মরণ নাই। বৃন্দাবনচন্দ্রকে স্কুল সম্বন্ধে কোন পত্র লিখিয়াছিলাম কি না, তাহা আমায় স্মরণ নাই। আমি বিষয় সম্বন্ধে তাঁহাকে পত্র লিখিয়াছিলাম কি না, তাহাও আমার মনে নাই। আমি চক্‌দিঘীতে রাজেশ্বরীর পিতাকে দেখিয়াছি। আমি আরও চক্‌দিঘীতে তাঁহার ভ্রাতা ব্রজকৃষ্ণকে দেখিয়াছি। গুরুদয়াল রাজেশ্বরীর পিতা ওরফে বিরজা আমাকে পত্র লিখেন নাই। গুরুদয়াল একবার কলিকাতায় আমার সহিত সাক্ষাৎ করিবার জন্য আসিয়াছিলেন; কিন্তু আমার মনে নাই, চক্‌দিঘী হইতে ফিরিয়া আসিবার কত দিন পরে আসিয়াছিলেন। সম্ভবতঃ ২।৩ বৎসরের পরে হইতে পারে। তিনি আমায় বলিয়াছিলেন যে, তিনি তাঁহার কন্যার বিষয় সম্বন্ধে কথা কহিতে আসিয়াছেন। তাহাতে অমি বলিয়াছিলাম, আমি ওকথা শুনিব না। আমি শুনিয়াছিলাম যে, বিষয়তত্ত্বাবধায়কদিগের মধ্যে গোলবোগ চলিতেছে এবং বিষয়ের ভাল রকম ব্যবস্থা হইতেছে না; তজ্জন্য আমি তাড়াতাড়ি বলিয়াছিলাম যে, আমি ওকথা শুনিব না। সারদা বাবুর মৃত্যুর অল্প দিন পরে কোন ব্যক্তি তাঁহার বিষয়ে বিশৃঙ্খলা ঘটাইয়াছে কি না, তাহা আমি শুনি নাই। কিন্তু আমার বোধ হয়, দুই মাস পরে যখন আমি বাটীতে ছিলাম, তখন আমি বৃন্দাবন রায়ের নিকট হইতে একখানি পত্র পাইয়াছিলাম, তাহাতে ঐ গোলমালের কথা লেখা ছিল। তাহা হইতে বুঝিলাম যে, রাজেশ্বরী অন্য লোকের পরামর্শ লইয়াছে এবং উইল সম্বন্ধে গোলযোগ করিতেছে। ৬নং কাগজে সাক্ষী দৃষ্টি করিয়া বলিয়াছিলেন—আমি এই পত্র লিখি। আমার বোধ হয়, বৃন্দাবনচন্দ্র যে পত্র লেখেন এবং যাহার কথা পূর্ব্বে বলিয়াছি, এই পত্রে তাহার জবাব লেখা হইয়াছিল। এই পত্রের শিরোনামা আমার হস্তের লেখা। চিঠি দেখিয়া বলিতে পারি না, বৃন্দাবনচন্দ্রের পত্রের উত্তৱে এইরূপ লিখিয়াছিলাম কি না। (চিঠিখানি সাক্ষীকে শুনাইয়া পড়া হইলে সাক্ষী বলেন আমি খবর জানিবার জন্য পত্র লিখিয়াছিলাম। আমি ঐ খবর প্রাপ্ত হইয়াছিলাম কি না, আমার স্মরণ নাই। আমার স্মরণ নাই, ঐ চিঠি লিখিবার আগে কি পরে ছক্কনলালের সহিত চন্দননগরে সাক্ষাৎ হয়। আমি ছক্কনলাল বাবুর দিকট হইতে উইল সম্বন্ধে খবর পাই। আমি কলিকাতা হইতে ঐ পত্র লিখি। আমি কলিকাতা হইতে চন্দননগরে গিয়াছিলাম; কিন্তু কোন্ মাসে, তাহা আমার স্মরণ নাই। আমার বোধ হয়, জ্যৈষ্ঠ মাসে হইবে। ছক্কনলালের সহিত আমার চন্দননগরে সাক্ষাৎ হয়। আমি আমার ঐ পত্রে লিখি, তাঁহার উপকারের জন্যই তাঁহাকে আমি পরামর্শ দিব; কিন্তু সেই উপকার করিয়াছিলাম কি না, তা আমার স্মরণ নাই। ঐ চিঠি লিখিবার এবং চক্‌দিঘীতে আসিবার পর আমি কিছু করিয়াছিলাম কি না, তাহা আমার স্মরণ নাই। আমি বলিয়াছিলাম যে, আমি ছক্কনলালের নিকট হইতে শুনিয়াছি যে, তিনি উইল লিখিবার সময়ে উপস্থিত ছিলেন; কিন্তু আমার স্মরণ নাই, আমি এই কথা চক্‌দিঘীতে বলিয়াছিলাম কি না। ইহার পর সাক্ষী বলেন,—ছক্কনলাল বলিয়াছিলেন যে, তিনি হীরালাল বাবুর বাগানে ছিলেন। (ইহার পর সাক্ষী ৭ এবং ৭ এ নং কাগজে দৃষ্টি করিয়া বলেন) এই চিঠি এবং খাম আমার হাতের লেখা। সারদা বাবুর মৃত্যুর পূর্ব্বে চক্‌দিঘীর স্কুল গবর্নমেণ্টের সাহায্য প্রাপ্ত হইয়াছিল। সারদা বাবুর মৃত্যুর পর হইতে উহা ফ্রি স্কুল হয়। উইলের ক্রোড়পত্রের আনুযায়িক স্কুল কি প্রকারে চলিবে,তাহার বন্দোবস্ত আমি করি। সাক্ষী চিঠিখানি পড়িয়াছিলেন। যে নূতন ব্যবস্থার কথা পত্রে উল্লিখিত আছে, তাহা উইলের উল্লিখিত নিয়ম সকলের অনুমত। আমি ঠিক করিয়া বলিতে পারি না, উইলের দ্বারা উইল বুঝাইতেছে কি উইলের ক্রোড়পত্র বুঝাইতেছে। ঐ পত্রেতে দ্বিতীয় শিক্ষকের কথা উল্লিখিত আছে। কিন্তু তাহার নাম জানি না। আমি প্রথম শিক্ষকের নামও জানি না। ঐ পত্র আনুবাষিক আমি চক্‌দিঘীতে আসি এবং স্কুলের বন্দোবস্ত করিয়া যাই। (সাক্ষী ৮নং কাগজে দৃষ্টি করিয়া বলেন যে) আমি এই পত্র লিখিয়াছি। প্রশ্ন,—“এ কি রকম, আপনি চক্‌দিঘীতে যান নাই বলিয়া, গোলযোগ উপস্থিত হইল।” উঃ,—আমি তখন ইহা জানিতাম না। আমি ইহা বিশদরূপে বলিতে চাহি। আমার বোধ হয়, বৃন্দাবনচন্দ্র রায় আমাকে একখানি পত্র লিখেন। তাহাতে তিনি উল্লেখ করেন যে, আপনার এখানে না আসাতে বড় গোলযোগ হইতেছে। আমি ঐ পত্র ইহার প্রত্যুত্তরে লিখি। ঐ পত্রে যাহা লেখা আছে, আমি তাহা লিখি। আমি এই ভাবিয়া পত্র লিখিয়াছিলাম যে, তাঁহারা আমার পরামর্শ গ্রহণ করিবেন এবং এরূপ ভাবে কার্য্য করিবেন যে তাহাতে গোলযোগ কমিয়া যাইবে। (৯ চিহ্নিত কাগজ দেখিয়া সাক্ষী বলেন) এই পত্র রাজেশ্বরীর লেখা। গবর্নমেণ্টের উকিল মতিলাল চৌধুরীকে আমি চিনি। কুলদাসুন্দরীর দাবীর বিষয় বলিয়াছিলাম কি না, তাহা আমার স্মরণ নাই। আমি যথার্থই বলিতেছি, আমার স্মরণ নাই। আমি বেণীমাধব রায়কে চিনি। তিনি তাঁহার ছেলের পক্ষে এবং রাজেশ্বরী ও যোগেন্দ্রের বিপক্ষে এক মোকদ্দমা করেন। আমার স্মরণ আছে, আমি মতিলাল চৌধুরীকে ঐ মোকদ্দমার কথা বলি। আমার বোধ হয়, আমি বলিয়াছিলাম, আপনি বেণীমাধব রায়ের পুত্র প্রিয়ম্বুর উইল আনুযায়িক মাসহারা পাইবার চেষ্টা করিবেন। (সাক্ষী ১০ এবং ১০ এ নং কাগজে সহির প্রতি লক্ষ্য করিয়া বলেন।) কাগজের তলায় রাজেশ্বরীর যে স্বাক্ষর আছে, রাজেশ্বরীর স্বাক্ষর বলিয়া আমার বোধ হয়। আমি যোগেন্দ্রের বাঙ্গালা হস্তাক্ষর দেখি নাই (প্রমাণের সহি)। (একটা কাগজের প্রতি লক্ষ্য করিয়া সাক্ষী বলেন) কাগজের শেষ রাজেশ্বরীর যে সহি আছে, তাহা রাজেশ্বরীর বলিয়া আমার বোধ হয়। সাক্ষী এক খানি চিঠি লক্ষ্য করিয়া বলেন—ইহা কাহার হস্তের লেখা, আমি বলিতে পারি না। রাজেশ্বরী আমার বাটিতে আসিয়াছিলেন। তিনি ১৪।১৫ দিন পূর্ব্বে আমার বাটীতে আসেন এবং প্রায় এক সপ্তাহ আমার বাটীতে থাকেন। সুবিধামত বাটী না পাওয়া যাওয়াতে আমি তাঁহাকে আমার বাটীতে রাখি। না-বালক ললিতমোহন এবং রাজেশ্বরীর যাহাতে মঙ্গল হয়, আমি তাহার চেষ্টা করিয়াছি। এই সম্বন্ধে আমি ককরেল সাহেবের সহিত দেখা করি। তিনি বর্দ্ধমাম বিভাগের কমিশনর। আমি আরও উমেশচন্দ্র মিত্রের পরামর্শ লই। মধ্যস্থদ্বারা মোকদ্দমার মীমাংসা হয়, ইহাই আমার ইচ্ছা ছিল। আমি শপথপূর্ব্বক বলিতেছি যে, সর্ব্বপ্রথমে মধ্যস্থ দ্বারা মিটাইবার কথা আমি উল্লেখ করি নাই। আমাকে এক জন মধ্যস্থ বলিয়া নির্দ্ধারিত করা হয়। আরও অন্যান্য যাঁহারা মধ্যস্থ হইবেন, তাঁহাদিগের নাম আমি উল্লেখ করি। ঐ মধ্যস্থদিগের নাম প্রসন্নকুমার সর্ব্বাধিকারী এবং রাজকৃষ্ণ বন্দ্যোপধ্যায়। প্রসন্ন বাবু সংস্কৃত কলেজের প্রিন্সিপাল এবং অপর ব্যক্তি প্রেসিডেন্সি কলেজের এক জন অধ্যাপক। উভয়ই আমার বন্ধু। ককরেল সাহেবের সহিত সাক্ষাৎ হইবার পর তিনি

  1. এই উইল অনুসারে নারায়ণ বাবু প্রকৃতপক্ষে বিষয় বর্জ্জিত হইতে পারেন কি না, বিদ্যাসাগর মহাশয়ের মৃত্যুর পর, তন্মীমাংসার্থ হাইকোর্টে মোকদ্দমা উপস্থিত হইয়াছিল। বিচারে সিদ্ধান্ত হয়, নারায়ণ বাবু বিষয়ে বঞ্চিত হইতে পারেন না। তিনি এখন বিষয়াধিকারী।