ব্রজাঙ্গনা কাব্য (১৮৬৪)/২
জলধর।
১চেয়ে দেখ, প্রিয়সখি, কি শোভা গগনে!
দুগন্ধ-বহ-বাহন, সৌদামিনী সহ ঘন
ভ্রমিতেছে মন্দগতি প্রেমানন্দ মনে!
ইন্দ্রচাপ রূপ ধরি, মেঘরাজ ধ্বজোপরি,
শোভিতেছে কামকেতু—খচিত রতনে
২
লাজে বুঝি গ্রহরাজ মুদিছে নয়ন!
মদন উৎসবে এবে, মাতি ঘনপতি সেবে
রতিপতি সহ রতি ভুবনমোহন!
চপলা চঞ্চলা হয়ে, হাসি প্রাণনাথে লয়ে
তুষিছে তাহায় দিয়ে ঘন আলিঙ্গন!
৩
নাচিছে শিখিনী সুখে কেকা রব করি,
হেরি ব্রজকুঞ্জ বনে, রাধা রাধাপ্রাণধনে,
নাচিত যেমতি যত গোকুল সুন্দরী!
উড়িতেছে চাতকিনী শূন্যপথে বিহারিণী
জয়ধ্বনি করি ধনী—জলদ কিঙ্করী!
৪
হায়রে কোথায় আজি শ্যাম জলধর।
তব প্রিয় সৌদামিনী, কাঁদে নাথ একাকিনী
রাধারে ভুলিলে কি হে রাধামনোহর?
রত্নচুড়া শিরে পরি, এস বিশ্ব আলো করি,
কনক উদয়াচলে যথা দিনকর!
৫
তব অপরূপ রূপ হেরি, গুণমণি,
অভিমানে ঘনেশ্বর যাবে কাঁদি দেশান্তর,
আখণ্ডল ধনু লাজে পালাবে অমনি;
দিনমণি পুনঃ আসি উদিবে আকাশে হাসি;
রাধিকার সুখে সুখী হইবে ধরণী;
৬
নাচিবে গোকুল নারী, যথা কমলিনী।
নাচে মলয়-হিল্লোলে সরসী-রূপসী-কোলে,
রুণু রুণু মধু বোলে বাজায়ে কিঙ্কিণী!
বসাইও ফুলাসনে এ দাসীরে তব সনে
তুমি নব জলধর এ তব অধিনী!
৭
অরে আশা আর কিরে হবি ফলবতী?
আর কি পাইব তারে সদা প্রাণ চাহে যারে
পতি-হারা রতি কিলো পাবে রতি-পতি?
মধু কহে হে কামিনি, আশা মহা মায়াবিনী!
মরীচিকা কার তৃষা কবে তোষে সতি?