বিষয়বস্তুতে চলুন

ভানুসিংহের পত্রাবলী/১৪

উইকিসংকলন থেকে

১৪

শান্তিনিকেতন

 আমাদের এখানে প্রায়ই খুব বৃষ্টি হ’চ্চে। এক একদিন বিষম জোরে বাতাস দেয় আর বৃষ্টির ধারাগুলো বেঁকে একেবারে তীরের মতো সিধে ঘরের মধ্যে চ’লে আসে। এখানে গরম নেই ব’ল্লেই হয়—আর চারিদিকের মাঠ একেবারে ঘন সবুজ হ’য়ে উঠেচে। বোলপুরকে এত সবুজ আমি আর কখনোই দেখিনি। গাছগুলো নিবিড় পাতার ভারে থাকে-থাকে ফুলে উঠেচে—ঠিক যেন সবুজ মেঘের ঘটার মতো। আমাদের বিদ্যালয়ের কুয়োগুলো প্রায় কানায় কানায় ভরা। এবারে চারিদিকে অনেক গাছ পুঁতে দিয়েচি। সেগুলো যখন বড়ো হ’য়ে উঠ্‌বে, তখন আমাদের আশ্রম আরও সুন্দর হ’য়ে উঠ্‌বে। কিন্তু এখানকার শুক্‌নো বেলেমাটিতে গাছপালা ভারি দেরিতে বেড়ে ওঠে— আমি আটাশ বছরে পড়বার আগে এ সব গাছে ফুলধরা দেখ্‌তে পাবো না। তুমি যদি নবেম্বরে আমাদের আশ্রমে আসো, তা হ’লে ততদিনে এখানে অনেক বদল দেখ্‌তে পাবে। এ বৎসরটা আমাদের আশ্রমের পক্ষে খুব তেজের বৎসর;—যেমন ঘন ঘন বৃষ্টিতে গাছপালা দেখ্‌তে দেখ্‌তে পূর্ণ হয়ে উঠ্‌চে, তেমনি এখানকার কাজের দিকেও খুব একটা উৎসাহ প’ড়ে গেচে। পড়াশুনো কাজকর্ম্ম যেন নতুন জোর পেয়েচে; সেই জন্যে ছেলেদের মধ্যেও খুব একটা আনন্দ জেগে উঠেচে। আমি-যে আমেরিকায় যাবার টিকিট কিনেও গেলুম না, এখানে থেকে গেলুম, তা’র পুরস্কার পেয়েচি। আমাদের আশ্রম-লক্ষ্মী বোধ হয় আমার অদৃষ্টের সঙ্গে ষড়যন্ত্র ক’রে আমার বিদেশে-যাওয়া কাটিয়ে দিয়েচেন। খুব ভালোই হ’য়েচে। আমি “লক্ষ্মীর পরীক্ষা” ইংরেজিতে তর্জ্জমা ক’রেচি, তা জানো; এণ্ড্‌রুজ্ সে-টা প’ড়ে খুব হেসেচেন, আর খুব লাফালাফি ক’রেচেন। ইতি ১৬ই ভাদ্র, ১৩২৫।