মানসিংহ/অন্নপূর্ণার মায়া প্রপঞ্চ
অন্নপূর্ণার মায়া প্রপঞ্চ।
কে তোমা চিনিতে পারে গো মা। বেদে
সীমা দিতে নারে গো মা॥ ধ্রু॥
রক্ত শতদল তক্তে পাতশা অভয়া। উজির হইলা জয়া নাজির বিজয়া॥ মহাবিদ্যাগণ যত হৈলা পরিবার। আমীর উমরা হৈল যত অবতার॥ বিশ্ব বাড়ী মূরুচা বুরুজ বার রাশি। গোলন্দাজ নবগ্রহ নক্ষত্র সাতাশি॥ বিষ্ণু বক্সী ব্রহ্মা কাজী মুনসী মহেশ সেনাপতি শাহজাদা কার্ত্তিক গণেশ॥ ব্রহ্মানী বৈষ্ণবী মাহেশ্বরী শিবদূতী। নারসিংহী বারাহী কৌমারী পৌর হুতী॥ আট দিকে আনন্দে নায়িকা আট জন। শিরে ছত্র ধরে করে চামর ব্যজন॥ সক্কা হৈল বরুণ পবন ঝাঁড়ুকশ। চন্দ্র সূর্য্য মশালচী মশাল ওজস॥ মজুন্দারে রাজা করি রাখিলা সম্মুখে।দেবরাজ রাজছত্র ধরিয়াছে সুখে। জাহাঁগীর যেমন এমন কত আর। চারিদিকে মজুন্দারে করে পরিহার॥ কোনখানে মধু কৈটভের মহারণ। কোনখানে মহিষাসুরের নিপাতন॥ কোনখানে সুগ্রীব দূতের রায়বার। কোনখানে ধম্রলোচনের তিরস্কার॥ কোনখানে উগ্রচণ্ডা চণ্ডমুণ্ড কাটি। কোনখানে রক্তবীজ যুদ্ধ পরিপাটী॥ কোনখানে শুম্ভ নিশুম্ভের বিনাশন। কোনখানে সুরথ সমাধি দরশন॥ কোনখানে রাম রাবণের মহারণ। কোনখানে কংসবধ আদি বিবরণ॥ কোনখানে মনসা শীতলা ষষ্ঠী গণ। পুঁড়াশূর ঘাঁটু মহাকাল পঞ্চানন॥ দেবতা তেত্রিশ কোটি রত আছে আর। আশে পাশে অদ্ভুত ভূতের বাজার॥ যোগিনী যোগান দেয় পাশরী ডাকিনী। কাঙ্গালি হইয়া মাগে শাখিনী পেতিনী॥ রক্ষক রাক্ষসগণ যক্ষগণ বেণে। সহরের দ্রব্য যত ভূতে দেয় এনে॥ কিনে লয় ব্রহ্মদৈত্য দানা লয় কেড়ে। ভৈরব হৈহৈ রবে লয় ফিরে তেড়ে॥ সিদ্ধগণ দোকানী চারণগণ চোর। প্রেতগণ প্রহরী হাঁকিনী হাকে ঘোর॥ নৃত্য করে গীত গায় বাদ্য বাজায় বাজন। বিদ্যাধর কিন্নর গন্ধর্ব্ব আদি গণ॥ খবিষ গণেরে ধরি আনে যত চণ্ড। যমদূতগণে তারে করে যমদণ্ড॥ শূন্যেতে হইল এক মায়া জল নিধি। হর নৌকা হরি মাঝী পার হন বিবি। তাহাতে কমলদহ অতি সুশোভন। শীতল সুগন্ধ মন্দহ পবন॥ ছয় ঋতু ছয় রাগ ছত্রিশ রাগিণী। মধুকর কোকিল শিখণ্ডী শিখণ্ডিনী॥ এক দল দ্বিদল সহস্র লক্ষ দল। অধোমুখে নানাজাতি ফুটিছে কমল॥ একআদি লক্ষ অন্তদন্ত কর্ণ পায়। উর্দ্ধৃপদে হেটপিঠে হাতী নাচে তায়। তার পিঠে অধঃশিখে অনল জ্বলিছে। মোমের পুতলি তাহে সুরতি খেলিছে॥ উর্দ্ধৃপদে হেটমাথে তাহে নাচে নারী। মৃদঙ্গ মন্দিরা বাজে বিনা বাদ্যকারি॥ সেই রামা চন্দ্রসূর্য্য অঞ্জলি করিয়া। অন্নদার পদে দেই অজপা জপিয়া॥ মৃদুহাসে জল হৈতে অনল তুলিয়া। গিলিয়া উগারে পুনঃ অঞ্জলি করিয়া॥ হাসি হাসি হাই ছাড়ে কি কব যে কাণ্ড। একেবারে খেতে পারে অনন্ত ব্রহ্মাণ্ড॥ তার পাশে আর এক কমলে কামিনী। গিলিয়া উগারে গজ গজেন্দ্র গামিনী॥ আর দিকে আর পদ্মে এক মধুকর। ছয় পদে ধরিয়াছে ছয় করিবর॥ আর দিকে আর পদ্মে এক মধুকরী। নর সঙ্গে রতিরঙ্গে প্রসবে কেশরী॥ আরদিকে এক পদ্মে নাগিনী কুমারী। অর্দ্ধ অঙ্গ নাগ তার অর্দ্ধঅঙ্গ নারী॥ একবারে এক জন পাতশারে চায়। সবে দেখে সর্ব্বসুদ্ধ ধরি যেন খায়॥ এক বার বিষদৃষ্টে প্রাণ লয় হরি। আর দৃষ্টে প্রাণ দেয় সুধাবৃষ্টি করি॥ ক্ষণে অচেতন হয় ক্ষণে সচেতন। হাসে কাঁদে উঠেপড়ে নমাজে যেমন॥ প্রেমে ভয়ে মোহস্তব করিবারে চায়। মুখে না নিঃসরে বাণী ভূমে গড়ি যায়॥ ভক্ত হৈলা জাহাঁগীর অন্তরে জানিয়া। যত মায়া মহামায়া হরিলা হাসিয়া॥ জ্ঞান পেয়ে জাহাঁগীর প্রাণ পাইল হেন। মজুন্দারে স্তুতি করে দাসু বাসু যেন॥ আজ্ঞা দিলা কৃষ্ণচন্দ্র রাজরাজেশ্বর। রচিলা ভারতচন্দ্র রায় গুণাকর।