মালা/আলেখ্য-দর্শনে

উইকিসংকলন থেকে

আলেখ্য দর্শনে।

নীরব নিস্পন্দ কেন পলকবিহীন,
নিশ্চল র’য়েছে কেন নয়ন তারকা।
আধ নিমীলিত আঁখি রহে লক্ষ্যহীন,
আঁকিয়াছে ল’য়ে কেবা মোহন তুলিকা

কি লাবণ্য সুললিত কিবা মনোরম,
মনোহর কিবা রূপ বিরাজিত রহে।
শান্ত স্নিগ্ধ সৌম্য ভাব মধুময় কম
হেরি ও মূরতি বুঝি ত্রিভুবন মোহে॥

সৌন্দর্য্যের স্রোত যেন পড়িছে উছলি,
জগতের যত শোভা ও মূরতি মাঝে।
আঁকিয়াছে শিল্পী বুঝি ল’য়ে মন-তুলি,
করিয়াছে প্রতিকৃতি অনুরূপ সাজে॥

অনিমিষে চাহি রহ কার মুখ পানে,
কি মোহ মদিরা-বশে অলস নয়ন।
লাবণ্যপূরিত ওই সুচারু বদনে,
সুধা বাণী নাহি শুনি বল কি কারণ?


প্রস্ফুটিত রহিয়াছে বদন নলিন,
সুধায় পূরিত যেন করে ঢল ঢল।
স্থির নেত্রে চাহি রহ দৃষ্টি সীমাহীন—
কোন্ ভাবে রহে আঁখি হইয়া বিভোল?

নয়ন উপরে ওই মেঘ ভেসে যায়,
সুমন্দ মলয় যায় নীরবে বহিয়া।
রবি শশী বিরাজিত আকাশের গায়,
নীলাকাশে তারামালা রহে উজলিয়া।৷

কাননে কুসুমরাজি সুষমা অতুল,
ফলভরে অবনত রহে তরুবর।
হেরিবারে নহে তব নয়ন ব্যাকুল,
উদাস দৃষ্টিতে চাহি রহ নিরন্তর।৷

বরষ চলিয়া যায় মাস যায় আসে,
কভু নাহি দৃক‍্পাত তাহাতে তোমার।
বসন্ত শরৎ ঋতু অভিনব বেশে,
পাশ দিয়া যায় তব আসি বার বার।৷

নাহি কি হেরিতে সাধ প্রকৃতির শোভা?
নহে আঁখি আকাঙ্ক্ষিত দিবসের জ্যোতি?

নহে কিগো ধরণীর কিছু মনোলোভা?
স্নিগ্ধ শান্ত সুবিমল শশধর-ভাতি॥

শ্রবণে কি নাহি পশে বিশ্বের কল্লোল?
অনুভূতি হয় না কি মুরলীর ধ্বনি?
স্থির ভারে রহে সদা শ্রবণ যুগল,
কাহার ধেয়ানে মগ্ন দিবস রজনী?

ব্যথিত না হয় হৃদি কোন বেদনায়?
উচ্ছ্বসি উল্লাস নাহি হয় প্রবাহিত।
সুষুপ্ত জাগ্রত কিবা নাহি জানা যায়,
কি মোহ-মদিরা-বশে র’য়েছ সতত।

শব্দ নাই গন্ধ নাই, নাই স্পর্শ-জ্ঞান,
নাহি নিদ্রা জাগরণ আহার বিহার।
নিশ্চল কামনাহীন হৃদয় মহান্,
বিচলিত নহে কভু হেরিয়া সংসার।

নাহিক বাসনা কোন নাহি অনুভূতি,
জীবনে নাহিক কোন মায়ার বন্ধন।
হে সংযমী দৃঢ়চিত্ত অসীম শকতি,
সতত নীরবে কেন করহ যাপন?


বীতরাগ হইয়াছ কেনবা সংসারে?
কেন বা রহ গো তুমি এক স্থানে স্থির?
সুরম্য এ হর্ম্ম্য তব প্রাসাদ আগারে,
ভ্রমিবারে সাধ তব নাহি হয় ধীর!

হে নির্লিপ্ত! হে উদাস! হে বিশ্বপ্রেমিক!
রহিয়াছ কার প্রেমে সদা হ’য়ে ভোর?
নয়ন তারকা মেলি চাহ হে ক্ষণিক,
অভাগিনী প্রতি চাও ওহে চিত্তচোর!

কোন অপরাধে দাসী দোষী তব পায়,
প্রকাশিয়া বিবরণ বল গুণমণি!
ক্ষমা ভিক্ষা দেহ মোরে ওহে প্রাণময়!
যদি কোন দোষে দোষী হয় এ দুঃখিনী।৷

হইয়াছে লয় কিগো পূর্ব্ব-স্মৃতি সব?
যে স্মৃতি হৃদয়ে মম দিবানিশী জাগে।
কেন বা ভুলিয়া হায় রয়েছ নীরব?
ভরা যে হৃদয় তব প্রেম-অনুরাগে।৷

নয়ন পল্লব কেন অনিমিষ রহে?
নাহি বহে কেন নাথ সুরভি-নিশ্বাস?

তোমার এ মৌনভাব প্রাণে নাহি সহে,
সহিতে না পারি তব এ ভাব উদাস।৷

কথা কও প্রাণনাথ! বদন বিকাশি,
পিপাসী হৃদয়ে ঢালি ধারা অমৃতের।
হৃদয়ের এ আঁধার নাশ গুণরাশি!
জাগিয়া উঠুক আশা সুপ্ত জীবনের।৷

সুমধুর সুধাবাণী করিয়া শ্রবণ,
মাতিয়া উঠুক প্রাণ চকোরীর মত।
গগনেতে শুনি যথা মৃদু গরজন,
উল্লাসে আকুল সে যে রহে অবিরত।৷

চাঁদের কিরণ সুধা মাখিয়া অধরে,
সুমধুর মৃদু হাসি হাস হে ক্ষণিক।
প্রতি অঙ্গ কাঁদে তব প্রতি অঙ্গ তরে,
ক্ষণমাত্র হেরি সাধ চাহি না অধিক।৷

আকুলিত এ হৃদয় ওহে প্রাণেশ্বর!
ললিত সুঠাম ওই হেরি প্রতিকৃতি।
হৃদয়ে রাখিতে সাধ হয় নিরন্তর,
ওই যে পাগল করা মোহন মূরতি।৷


হৃদয়ে সতত রহে উদ্দাম বাসনা,
ব্যাকুলিত এ অন্তর চাহে অনুক্ষণ।
হেরিব ও রূপে সদা করিব সাধনা,
হৃদয়ে রাখিব আমি করিয়া যতন।৷

উদ‍্ভ্রন্ত উন্মত্ত হ’য়ে কভু যাই ছুটি,
বাঁধিবারে বাহুপাশে আকুল উচ্ছ্বাসে।
কাঁদিয়া তখনি তব চরণেতে লুটি,
নিরাশার অশ্রুজলে এ হৃদয় ভাসে।৷

জানিনাক কতদিনে এ ভগ্ন হৃদয়,
সুগঠিত হবে তব মিলন-পরশে॥
জীবনের পরপারে মিলিব উভয়,
সুখে রব চিরদিন মনের হরষে।৷