বিষয়বস্তুতে চলুন

মালা/পরাণ উঠিছে কাঁদিয়া

উইকিসংকলন থেকে

পরাণ উঠিছে কাঁদিয়া।

কোথা গেলে নাথ! আমারে ছাড়িয়া পরাণ উঠিছে কাঁদিয়া
গভীর আঁধার নীরব জীবন আকুল হ’তেছে এ হিয়া॥
কাঁদিতেছে সবে হইয়া আকুল,
শতধারে হায় তিতিছে দুকূল,
কাঁদে পরিজন তোমার বিরহে সতত ভবনে আসিয়া।
এস এস নাথ! ডাকিতেছে সবে কাতর পরাণ হইয়া॥

হাসি হাসি নাথ! এস একবার হৃদয় রেখেছি পাতিয়া।
তোমার দরশে নীরস পরাণ সোহগে যাইবে গলিয়া॥
মরুভূমি সম এ পোড়া পরাণ,
জ্বলিতেছে সদা যেন গো শ্মশান,
দরশন বারি করিয়া প্রদান এ জ্বালা জুড়াও আসিয়া।
তোমার বিরহে সতত যে হায় হৃদয় যেতেছে জ্বলিয়া॥

বারেকের তরে এস প্রাণাধিক! যাই সব দুঃখ ভুলিয়া।
বহিতেছি হায় যে দুঃখ হৃদয়ে সতত গোপন করিয়া॥
সব দুঃখ ভুলি সুখে হব ভোর,
তিরপিত হবে নয়ন চকোর,
এ বিরহ-জ্বালা দূরে যাবে মোর তোমার বদন হেরিয়া
হৃদয়ে রাখিব হৃদয়-রতনে কতই যতন করিয়া।৷


এস এস নাথ! ক্ষণেকের তরে শারদ-কৌমুদী হাসিয়া।
উজলি উঠিবে আঁধার জীবন সব দুঃখ যাবে চলিয়া॥
চাঁদের কিরণ মাখিয়া পরাণে,
আবরি রাখিব হৃদয়-গগনে,
বাসনা-কুসুম মানস-কাননে উঠিবে তখন ফুটিয়া।
প্রমত্ত মধুপ মন-কুঞ্জে তুমি পরিমল লও লুটিয়া॥

প্রাণ পাখী সদা ব্যাকুল অন্তরে ধাইছে তোমারে খুঁজিয়া।
আকুল উচ্ছ্বাসে সাধ তব পাশে যাইতে এখনি ছুটিয়া॥
সাধনা সঙ্গীত শুনাবে যে হায়,
মম প্রাণ পাখী প্রেমের ভাষায়,
উন্মত্ত এ মন হেরিয়া তোমায় নাচিবে প্রণয়ে মাতিয়া।
ও কর পরশে আবেশ অলসে পড়িবে তখন ঢলিয়া॥

আসার আশায় রয়েছি যে নাথ! এখন তোমারে ছাড়িয়া।
আদরেতে তুমি হে হৃদয়স্বামী লইবে আমারে ডাকিয়া॥
সংসারেতে তুমি ওহে প্রাণাধার,
জীবনসর্বস্ব সংসারের সার,
কি কাজ জীবনে বিহনে তোমার কিছু নাহি পাই ভাবিয়া।
জীবনের বাতি ওহে প্রাণপতি গিয়াছে জ্যোতির নিভিয়া।৷


এ জীবন যপি আমরণ ব্যাপি তোমারে হে ভালবাসিয়া।
তিরপিত মন আমার এখন তোমার মূরতি ভাবিয়া॥
তুমিই শরীর তুমিই জীবন,
তুমিই দেবতা তুমিই সাধন,
হৃদয়েতে তুমি পাতিয়া আসন গোপনে রয়েছ বসিয়া।
সম্মুখে তোমারে না পাই দেখিতে রয়েছ হৃদয় ভরিয়া॥

মানসে এ’কেছি মূরতি তোমার হৃদয়-শোণিতে লিখিয়া।
বিরাজিত তুমি রহ নিশিদিন এ পোড় পরাণে মিশিয়া॥
স্তরে স্তরে মম হৃদয় মাঝারে,
তব রূপে ভরি রহে এ অন্তরে,
অশনে বসনে শয়নে স্বপনে জীবনে মরণে বঁধুয়া।
তোমারি চরণে এ ছার জীবন চির তরে দিছি ডারিয়া॥

এস প্রাণাধার এ শূন্য আগার দেখ একবার চাহিয়া।
সদা হাহাকার বিহনে তোমার আকুলতা রহে ঘেরিয়া॥
হইয়াছে শূন্য সুবর্ণ পিঞ্জর,
কোথা গেছ চলি ওহে পিকবর!
গিয়াছ হেমন্তে কোন দূরান্তর বসন্তে আসিবে ফিরিয়া।
মম জীবনান্তে সে সুখ বসন্তে রহিব একান্তে মিলিয়া।৷