রাজা সাহেব/প্রথম পরিচ্ছেদ
রাজা সাহেব।[১]
প্রথম পরিচ্ছেদ।
অঙ্কুরোদ্ভেদ।
যে প্রদেশের প্রসঙ্গ লইয়া আজ এই পুস্তক লিখিত হইতেছে, তাহা এই ভারতবর্ষের মধ্যে একটা নিতান্ত ক্ষুদ্র স্বাধীন রাজ্য। এরূপ কিম্বদন্তী আছে যে, এই রাজত্ব নিতান্ত ক্ষুদ্র, এবং এখন নিতান্ত অধিক না থাকিলেও, পুরাকালে ইহার প্রতাপ অতিশয় প্রবলই ছিল। কিন্তু এখন আর সে দিন নাই, কাল পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ইহার সেই প্রবল প্রতাপ অন্তর্হিত হইয়া গিয়াছে। নামে স্বাধীন রাজ্য হইলেও, কাজে এখন পরাধীন হইয়া পড়িয়াছে। ইংরাজ রাজত্বের সঙ্গে পূর্ব্বে ইহার কোনরূপ সংস্রব না থাকিলেও, এখন সম্পূর্ণরূপে ইংরাজ রাজত্বের অধীন হইয়া পড়িয়াছে। এখন এই ক্ষুদ্র স্বাধীন রাজত্বের ভিতর একজন ইংরাজ রেসিডেণ্ট প্রবেশাধিকার পাইয়াছেন। রাজা স্বাধীন হইলেও সেই ইংরাজ রেসিডেণ্টের অনুমতি ব্যতিরেকে আর কোনরূপে রাজকার্য নির্বাহিত হইবার উপায় নাই।
একজন যুবক পূর্ব্বোক্ত রাজত্বের এখন বর্ত্তমান রাজা। ইনি যশের সহিতই এ পর্যন্ত আপন প্রজাদিগকে প্রতিপালন করিয়া আসিতেছেন। রাজ কার্য্য পর্যালোচনা এবং প্রজাদিগকে প্রতিপালন করিতে হইলে, রাজাগণের যে সকল গুণের আবশ্যক হয়, জগদীশ্বর ইহাকে সেই সকল গুণ হইতে বঞ্চিত করেন নাই।
এদেশীয় বর্ত্তমান রাজা ও প্রধান প্রধান জমীদারগণ যে প্রকার সংক্রামক রোগে আজকাল আক্রান্ত হইতেছেন, যে সংক্রামক রোগের ভয়ানক প্রকোপে কেহ রাজ্যচ্যুত হইতেছেন, কেহ তাহার পৈতৃক জমীদারী নষ্ট করিয়া পরিশেষে পথের ভিখারী হইতেছেন, আমাদিগের পুস্তকোক্লিখিত রাজা রাজকার্য্য পর্যালোচনায়, এবং প্রজা প্রতি পালনে পরাঙ্মুখ না হইলেও, সেই সংক্রামক রোগ তাঁহাকে পরিত্যাগ করিতে পারে নাই।
পাঠকগণ! এই সংক্রামক রোগ যে কি, তাহা বুঝিতে পারিয়াছেন কি? ইহা আয়ুর্বেদান্তর্গত কোন প্রকার রোগ নহে, এ রোগের নাম “ঋণ” রোগ। আজ তাঁহার রাজত্বের ভিতর লাটসাহেবের শুভাগমন হইয়াছে, তাহাকে সম্মানিত করিবার নিমিত্ত-তাহার অনুচরবর্গের সেবার নিমিত্ত দশ সহস্র মুদ্রার আবশ্যক; রাজকোষে অর্থ নাই, কাজেই ঋণ করিতে হইবে। আজ গবর্ণমেণ্ট রাজার উপর সন্তুষ্ট হইয়া তাহাকে মহারাজা উপাধি প্রদান করিয়াছেন। সুতরাং কিছু অর্থের প্রয়োজন—একটী দরবারের আবশ্যক। কিন্তু রাজকোষ শূন্য, কাজেই ঋণের আবশ্যক। এইরূপ নানাকারণে আজকাল রাজা ও জমীদারগণের যেরূপ দুর্দশা ঘটিয়া আসিতেছে, বর্তমান মহারাজেরও আজ সেই দুর্দশা। তিনি সেই সংক্রামক রোগের ভয়ানক যন্ত্রণায় অস্থির হইয়া নিতান্ত কষ্টভোগ করিতেছেন।
সমস্ত দিবস রাজকার্য পর্য্যালোচনা করিয়া, একদিবস সন্ধ্যার পর তাহার প্রধান মন্ত্রীর সহিত নির্জনে বসিয়া মহারাজ বৈষয়িক গুপ্ত পরামর্শে নিযুক্ত হইলেন। তাহারা যে যে বিষয় সম্বন্ধে পরামর্শ করিলেন, তাহার সমস্ত কথার উল্লেখ করা এই পুস্তকের উদ্দেশ্য নহে। এই নিমিত্ত সে সমস্ত বিষয় পরিত্যাগ করিয়া, কেবলমাত্র যে সূত্র অবলম্বনে একটা ভয়ানক জুয়াচুরির দ্বার উদঘাটিত হইয়াছিল, তাহারই দুই চারিটা কথা এইস্থানে বর্ণিত হইল মাত্র।
মহারাজ। মন্ত্রী মহাশয়! আপনি বুঝিতে পারিতেছেন কি যে, আমার এই রাজত্বে যে পরিমাণ আয় হইয়া থাকে, তাহা অপেক্ষা ব্যয় দিন দিন ক্রমেই বর্ধিত হইতেছে, এবং তজ্জন্য সঙ্গে সঙ্গে ঋণও বর্ধিত হইতেছে? আপনি বলুন দেখি, এখন কি উপায় আছে, যাহা অবলম্বন করিলে উহা দিন দিন বর্দ্ধিত না হইয়া, ক্রমে উহার লাঘব হইতে পারে; বিশেষতঃ কিরূপেই বা উহা হইতে পরিত্রাণ পাইয়া মনের সুখে রাজকার্য্য করিতে সমর্থ হই? আমি অনেক সময়ে অনেকরূপ ভাবিয়া চিন্তিয়া দেখিয়াছি, কিন্তু এরূপ কোন উপায় স্থির করিতে পারি নাই যে, যাহাতে এই ঋণজাল হইতে ক্রমে পরিত্রাণ পাইতে পারি।
মন্ত্রী। মহারাজ! অনেক দিবস হইতে আমি এই বিষয় আপনাকে বলিব মনে করিয়াছিলাম; কিন্তু উপযুক্তরূপ সুযোগ না ঘটায় এতদিবস তাহা আমি আপনাকে বলিতে সমর্থ হই নাই। ঋণের নিমিত্ত আপনি ভাবিবেন না। কারণ, এই জগতে এরূপ মনুষ্যই নাই যে, যাঁহার কোন না কোন প্রকারে কিছু না কিছু ঋণ আছে। অপরের কথার প্রয়োজন কি, যাহার রাজত্ব হইতে সূর্য্যদেব একবারে অস্তমিত হন না, সেই মহারাণী ভারতেশ্বরীরই দেখুন না কেন, কত টাকা দেন। মহারাজ! আপনি যদি সেই প্রকার দেনা করিতেন, তাহা হইলে আমাদিগের চিন্তিত হইবার কোন কারণই থাকিত না। আপনার ঋণ অপরাপর রাজাগণের ঋণ অপেক্ষা সম্পূর্ণরূপে বিভিন্ন। এই নিমিত্তই আমরা অতিশয় ভীত ও চিন্তিত হইয়াছি, এবং এই নিমিত্তই আমি মহারাজকে কিছু বলিতে ও সৎপরামর্শ দিতে পূর্ব্ব হইতেই ইচ্ছা করিয়াছিলাম।
মহারাজ। আপনি কহিলেন যে, আমার ঋণের সহিত অপরের ঋণের প্রভেদ আছে, ইহার নিমিত্তই ভয় ও চিন্তা। কিন্তু আমি আপনার এই কথার তাৎপর্য্য কিছুই বুঝিয়া উঠিতে পারিলাম না। ঋণমাত্রই ভয় ও চিন্তার কারণ, ইহা সর্ব্বসম্মত। কিন্তু আমার ঋণ ও অপরের ঋণের প্রভেদ কি? যে প্রকারের ঋণই হউক, আমি সকল ঋণকে সমান দেখিয়া থাকি।
মন্ত্রী। অপরের ঋণের সহিত মহারাজের ঋণের বিশিষ্ট প্রভেদ আছে। আমি হিসাব করিয়া দেখিয়াছি, আপনার ঋণ প্রায় তিন লক্ষ টাকা হইবেক, এবং সেই তিন লক্ষ টাকা প্রায় শতাধিক লোকের নিকট হইতে অধিক সুদে ক্রমে ক্রমে লওয়া হইয়াছে; এমন কি, শতকরা মাসিক বার আনা সুদ হইতে আরম্ভ করিয়া দেড় টাকা পর্য্যন্ত সুদ দিতে হয়। ইহাতে শতকরা গড় এক টাকা হিসাবে সুদ ধরিলেও তিন লক্ষ টাকার বৎসরে ছত্রিশ হাজার টাকা সুদ লাগে। বিশেষতঃ এই রাজত্বের অনেক প্রজার নিকট হইতে ঋণ গ্রহণ করাতে অনেকেই রাজত্বের দেনার বিষয় অবগত হইয়াছে; সুতরাং ইহাতে মহারাজের অনিষ্ট ভিন্ন কোনক্রমেই ইষ্ট হইতে পারে না। অপরপর রাজাগণ ঋণ করিতে হইলে এক স্থান ভিন্ন অনেক স্থানে গমন করেন না, তাহাও কম সুদে ও আপন আপন রাজত্বের বহির্ভাগে। এই নিমিত্ত তাহাদিগের ঋণের কথা কেহ জানিতে পারে না; সুতরাং তাঁহাদিগের রাজত্বের অনিষ্ট ঘটিকার সম্ভাবনাও নিতান্ত কম।
মহারাজ। আমি এ সমস্তই যে একবারে জানি না ও বুঝি না, তাহা নহে। কিন্তু আমি এখন যেরূপ অবস্থায় পতিত হইয়াছি, তাহাতে কিছুতেই বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন করিতে সমর্থ হইতেছি না। আপনিও একটু বিশেষ বিবেচনা করিয়া দেখুন দেখি, অতঃপর কি উপায় অবলম্বন করিলে আমার ও রাজত্বের বিশেষ মঙ্গল হইতে পারে।
মন্ত্রী। মহারাজ! এ বিষয়ে অনেক ভাবিয়া চিন্তিয়া দেখিয়াছি, কিন্তু আমি ইহার উক্ত একমাত্র উপায় ভিন্ন আর কিছুই স্থির করিয়া উঠিতে পারি নাই; বিশেষতঃ এই উপায় কিছু নূতনও নহে। এই উপায় অবলম্বন করিয়াই রাজামাত্রেই রাজ্য চালাইয়া থাকেন। আমার বিবেচনায় আপনিও সেই উপায় অবলম্বন করুন। তাহা হইলে রাজ্যের মঙ্গল হইবে, এবং ক্রমে ক্রমে এই রক্তবীজ সদৃশ ঋণজাল হইতে পরিত্রাণ পাইতে পারিবেন।
মহারাজ। এমন কি প্রকার বন্দোবস্ত করা কর্ত্তব্য?
মন্ত্রী। বন্দোবস্ত আর কিছুই নহে। এখন একজন ধনী লোকের নিকট হইতে অল্প সুদে সমস্ত টাকা কর্জ করিয়া, এখানকার সমস্ত ব্যক্তির দেনা পরিশোধ করিয়া দিউন। বর্তমান ঋণ পরিশোধ করিতে যতই কেন ঋণের প্রয়োজন হউক না, তৎসমস্তই এক ব্যক্তির নিকট হইতে লইতে হইবে। রাজত্বের উপস্বত্ব হইতে সম্বৎসরের খরচ বাদে যাহা কিছু উদ্বৃত্ত হইবেক, তাহা ক্রমে বৎসর বৎসর দেনা দেওয়া যাইবেক। তদ্ব্যতীত অল্প সুদে এমন কি শতকরা বাৎসরিক ছয় টাকা সুদেও যদি টাকা পাওয়া যায়, তাহা হইলেও এখন বৎসর বৎসর যে সুদ দিয়া আসিতেছি, তাহা অপেক্ষা বাৎসরিক প্রায় আঠার হাজার টাকা কম দিতে হইবেক। সুতরাং বৎসর বৎসর সেই অবশিষ্ট আঠার হাজার টাকা, নিশ্চয়ই আসল দেনা হইতে কমিবেক।
মহারাজ। এ উপায় যে সর্ব্বাপেক্ষা উত্তম, তাহার আর কিছুমাত্র সন্দেহ নাই। কিন্তু অল্প সুদে এত টাকা এক ব্যক্তির নিকট হইতে কোথায় পাইব? কাহার এত টাকা আছে যে, সে আমাকে এত অল্প সুদে ধার দিবে?
মন্ত্রী। মহারাজ! এ প্রদেশে সে প্রকার লোক নাই। বিশেষতঃ থাকিলেও সে এত টাকা এত অল্প সুদে যে ধার দিবে, তাহার আশা করা যায় না; ইহাও আমি উত্তমরূপে অবগত আছি। তথাপি আমার বিশ্বাস যে, একটু চেষ্টা করিলেই সেইরূপ ধনী মহাজন পাওয়া যাইবেক, তাহার আর কিছুমাত্র সন্দেহ নাই।
মহারাজ। চেষ্টা করিলেই বা সেই প্রকার ধনী মহাজন কোথায় পাইবেন, এবং কাহার দ্বারাই বা সেইরূপ চেষ্টা হইতে পারিবে?
মন্ত্রী। কলিকাতায় উক্তরূপ ধনী মহাজনের অভাব নাই। সেইস্থানে একটু চেষ্টা করিলেই অক্লেশে কার্য শেষ হইতে পারিবে। কিন্তু একটা কথায় আমার সন্দেহ আছে,— বিনাবন্ধকে বোধ হয়, কলিকাতায় কেহই অল্প সুদে টাকা দিতে সম্মত হইবেন না। মহারাজ। তাহার নিমিত্ত কোন ভাবনা নাই। আবশ্যক হইলে আমার এই রাজত্বই বন্ধক দিতে পারি। কারণ, কলিকাতা বা অন্য কোন দূরবর্তী প্রদেশে আমার রাজত্ব বন্ধক দিতে আমি অসম্মত নহি। যে কথা আমার রাজত্বের কোন প্রজার ঘুণাক্ষরেও জানিবার সম্ভাবনা নাই, তাহাতে আমার কোনরূপ অনিষ্ট হইতে পারে না; তথাপি এ প্রদেশীয় কোন ব্যক্তির নিকট আমি আমার রাজত্ব বন্ধক রাখিতে পারি না। কারণ, ইহা অতিশয় লজ্জার, অবমাননা ও অনিষ্টের বিষয়।
মন্ত্রী। এ প্রদেশীয় কোন ব্যক্তির নিকট মহারাজের রাজত্ব কিছুতেই বন্ধক দেওয়া যাইতে পারে না। চেষ্টা করিলে কলিকাতা ভিন্ন অপর কোন স্থানে মহারাজকে গমন করিতে হইবে না।
মহারাজ। আমার কর্মচারীবর্গের মধ্যে এরূপ বিশ্বাসী ও উপযুক্ত কর্মচারী কে আছেন, যাঁহাকে কলিকাতায় প্রেরণ করিলে, তিনি অনায়াসেই এই কার্য্য সমাধা করিয়া, আগমন করিতে পারিবেন।
মন্ত্রী। মহারাজের বোধ হয়, স্মরণ থাকিতে পারে যে, গুটিকতক ভাল মুক্তা খরিদ করিবার নিমিত্ত মহারাজের এসিষ্টেণ্ট সেক্রেটারীর উপর আদেশ প্রদান করিয়াছেন। তিনি বোধ হয়, দুই এক দিবসের মধ্যে কলিকাতায় গমন করিবেন। মহারাজের এসিষ্টেণ্ট সেক্রেটারী অনুপযুক্ত, কর্মচারী নহেন, তিনি একজন সুচতুর, বিশ্বস্ত, বুদ্ধিমান, এবং কার্যাধ্যক্ষ কর্মচারী। আমার বোধ হয় যে, এ বিষয়ের ভার তাঁহার উপর অর্পণ করা যাইতে পারে। বিশেষত এক কার্যের নিমিত্ত যখন কলিকাতায় গমন করিতেছেন, তখন অপর কার্যও তিনি তথায় অনায়াসেই সম্পন্ন করিয়া পুনরাবৃত্ত হইতে পারিবেন।
মহারাজ। এ অতি সৎপরামর্শ। আপনি এসিষ্টেণ্ট সেক্রেটারীকে এখনই আমার নিকট ডাকাইয়া আনুন। আমি সমস্ত কথা তাহাকে তন্ন তন্ন করিয়া বুঝাইয়া দিব। মহারাজের আদেশ পাইয়া মন্ত্রী মহাশয় তখনই একজন চাপরাশীকে এসিষ্টেণ্ট সেক্রেটারী মহাশয়ের উদ্দেশে প্রেরণ করিলেন, এবং অর্ধঘণ্টা উত্তীর্ণ হইতে না হইতেই এসিষ্টেণ্ট সেক্রেটারী মহাশয় আগমন করিয়া তথায় উপস্থিত হইলেন।
মহারাজ। মুক্তা খরিদ করিবার নিমিত্ত আপনি কোন তারিখে কলিকাতায় গমন করিবেন?
এসিষ্টেণ্ট সেক্রেটারী। ধর্ম্মাবতার! মুক্তা খরিদ করিবার নিমিত্ত অধ্যই আমি কলিকাতায় গমন করিতাম। কিন্তু অদ্য প্রাতঃকালে আমার শরীর একটু অসুস্থ বোধ হওয়ায় আজ যাইতে পারি নাই, কল্য প্রত্যুষে নিশ্চয়ই গমন করিব।
মহারাজ। কলিকাতায় কোন ধনবান লোকের সহিত আপনার পরিচয় আছে কি?
এঃ সেঃ। দুই একজন ধনী ব্যক্তির সহিত জানা শুনা আছে, কিন্তু বিশেষ বন্ধুত্ব নাই।
মহারাজ। কলিকাতায় কোন ধনাঢ্য ব্যক্তির নিকট হইতে অল্প সুদে কিছু টাকা ধার করিবার যোগাড় করিতে পারিবেন কি? . এঃ সেঃ। টাকা ধার দিয়া থাকে, কলিকাতায় এরূপ ব্যক্তি বিস্তর আছে। চেষ্টা করিলে যে না হইতে পারিবে, এমন নহে।
মহারাজ। আমি নিজে তিন লক্ষ টাকা ঋণ করিব। কিন্তু সুদ নিতান্ত অল্প হওয়া আবশ্যক; ইহাতে যদি কোন বিষয় বন্ধক দিবার প্রয়োজন হয়, তাহা হইলে আমি আমার রাজত্ব পর্যন্তও বন্ধক দিতে প্রস্তুত আছি। আপনি কলিকাতায় গমন করিতেছেন, সেইস্থানে এই ঋণের যোগাড় করিয়া যত শীঘ্র পারেন, আমাকে সংবাদ দিবেন।
এঃ সেঃ। যে আজ্ঞ মহারাজ। আমি সবিশেষরূপে চেষ্টা করিয়া যাহাতে শীঘ্র এই কার্য্য সম্পন্ন করিতে পারি, তাহাতে কিছুমাত্র ত্রুটী করিব না। অগ্রে মুক্ত কয়েকটা খরিদ করিয়া মহারাজের নিকট পাঠাইয়া দিব, ও পরিশেষে আমি সেইস্থানে অবস্থিতি করিয়া যত শীঘ্র পারি, টাকার যোগাড় করিব। ইহাতে যে কৃতকার্য্য হইতে পারি, তাহার আর কিছুমাত্র সন্দেহ নাই।
এসিষ্টেণ্ট সেক্রেটারীর কথায় মহারাজ অতিশয় সন্তুষ্ট হইয়া তাহাকে আবশ্যকীয় অপরাপর উপদেশ প্রদান পূর্বক বিদায় দিলাম।
মহারাজের আদেশ মত এসিষ্টেণ্ট সেক্রেটারী বাবু সেই স্থান হইতে, আপন বাসায় গমন করিলেন, এবং পরদিবস অতি প্রত্যুষে ক্ষুদ্র স্বাধীনরাজ্য পরিত্যাগ পূর্বক কলিকাতা অভিমুখে প্রস্থান করিলেন।
- ↑ “The late swindling case - We are glad to hear that the suggestion thrown out by us other day has been acted upon, at the Commissioner and the Deputy Commissioner of Police have taken active steps in the case in which Babu * * * * Assistant Secretary of H. H. the Maharaja of * * was swindled out of a large sum of money. Owing to the indisfatigable exertions of the Detective Superintendent Mr. Johnstone and the Sub-Inspector Babu Priyanauth Mookerjee, the majority of the gang and the principal parties concerned in the swindling were arrested within a few hours of the receipt of warrants from the Presidency Magistrate's Court.”
The Statesman and Friend of India.
Dated 28th September, 1886.