বিষয়বস্তুতে চলুন

ষষ্ঠীতৎপুরুষনামা/১৮

উইকিসংকলন থেকে

১৮

দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার অধিবেশন কক্ষ সকাল দশটাতেই জনাকীর্ণ। একদিকে প্রবন্ধ পাঠ, সাহিত্য আলোচনার সঙ্গে আরেক দিকে বিষয়-নির্বাচনী সভা ও শুরু হয়ে গেল। অম্বিকাচরণ দেব, মফিজুর রহমান, বিপিনচন্দ্র, নন্দলাল বর্মনও ধীরে ধীরে ওই ঘরে গিয়ে আসন নিলেন। ইতিমধ্যে এদিকে সাংগঠনিক প্রস্তাবের পালা শেষ হতেই শুরু হল অন্যান্য বিষয়ের প্রস্তাব কাছাড়ের প্রতিনিধি হিসেবে বিপিনচন্দ্রকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হল। তিনি শ্রোতাদের ধৈর্যচ্যুতি না ঘটিয়েই বিদ্যাবিনোদের অভিভাষণে কাছাড়ের ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলোর উল্লেখের জন্য সভাপতির প্রতি কাছাড়বাসীর হয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ইতিমধ্যে সরকার কর্তৃক খাসপুর রাজবাড়ি, সোনাইয়ের শিবমন্দির, মাইবঙের একপাথরের মন্দির সহ সিলেটে শ্রীচৈতন্যদেবের শাহজালালের দরগা, ভাটেরা পুরাকীর্তির ধ্বংসাবশেষ, পিতৃপুরুষের ঢাকাদক্ষিণ ঠাকুরবাড়ি প্রভৃতি স্থানকে পুরাকীর্তি সংরক্ষণী ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত করায় একটি ধন্যবাদসূচক প্রস্তাব আনেন। মৌলবি মফিজুর রহমান এবং অম্বিকাচরণ দেবের সমর্থনে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়ে গেল।

 নর্মাল স্কুলের অধ্যাপক জগন্নাথ দেব উত্থাপিত এবং কীর্তিচন্দ্র মজুমদার ও মণিচরণ বর্মন সমর্থিত দ্বিতীয় প্রস্তাবটি ছিল কাছাড়ের সর্বশেষ হেড়ম্ব নৃপতি গোবিন্দচন্দ্রের মৃত্যুস্থান হরিটিকরে একটি যথাযোগ্য স্মৃতি-স্মারক স্থাপন বিষয়ক। এ মর্মে কামিনীকুমার চন্দ, নন্দলাল বর্মন, দীননাথ দেব সহ নয়জন সদস্যের মধ্যে বিপিনচন্দ্রকে অন্যতম সদস্য করে একটি কমিটি গঠন করা হল। পঞ্চম প্রস্তাব অনুযায়ী শ্রীহট্ট-কাছাড় অঞ্চলের পুরাতত্ত্ব অনুসন্ধান নিমিত্ত শ্রীহট্ট-কাছাড় অনুসন্ধান সমিতি'র প্রস্তাবিত তালিকায় তাঁর নাম এনে তাঁর উপর আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হল। পদ্মনাথ ভট্টাচার্য, কামিনী চন্দ, ভুবনমোহন বিদ্যার্ণব, মণিচরণ বর্মন, মৌলবি আব্দুল করিম, অচ্যুতচরণ তত্ত্বনিধি, অম্বিকাচরণ দেব, নন্দলাল বর্মন, দীননাথ দাস, অঘোরনাথ অধিকারী, জগন্নাথ দেব সহ ২৬ জন সদস্যের এ সমিতি। বিপিনচন্দ্র বুঝে গেছেন বিদ্যাবিনোদ তাঁকে ভিন্নতর একটি জগতের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে নিতে চাইছেন। মনের মধ্যে নানা শঙ্কা, দ্বিধা নিয়ে তিনি নীরবে সব কিছুতেই সম্মতি দিয়ে চলেছেন। অনুষ্ঠান সমাপনী অধিবেশনে পদ্মনাথ উচ্চকণ্ঠে স্বীকার করলেন,

 —হেড়ম্ব রাজমন্ত্রীবংশ সাহিত্যোৎসাহী শ্রীযুক্ত বিপিনচন্দ্র মহাশয় অদম্য উৎসাহে কর্ম করিয়াছেন দেখিয়া ধন্য হইয়াছি।

 রায়বাহাদুরের এবার আর পিছনে তাকানোর অবকাশ বুঝি আর রইল না।