সঞ্চয়িতা/বিদায় (২)
বিদায়
তবে আমি যাই গো তবে যাই।
ভোরের বেলা শূন্য কোলে ডাকবি যখন খোকা ব’লে
বলব আমি, ‘নাই সে খোকা নাই।’
মা গো, যাই।
হাওয়ার সঙ্গে হাওয়া হয়ে যাব মা, তোর বুকে বয়ে,
ধরতে আমায় পারবি নে তো হাতে।
জলের মধ্যে হব মা ঢেউ, জানতে আমায় পারবে না কেউ,
স্নানের বেলা খেলব তোমার সাথে।
বাদলা যখন পড়বে ঝরে রাতে শুয়ে ভাববি মোরে,
ঝর্ঝরানি গান গাব ওই বনে।
জানলা দিয়ে মেঘের থেকে চমক মেরে যাব দেখে,
আমার হাসি পড়বে কি তোর মনে?
খোকার লাগি তুমি মা গো, অনেক রাতে যদি জাগ
তারা হয়ে বলব তোমায় ‘ঘুমো’।
তুই ঘুমিয়ে পড়লে পরে জ্যোৎস্না হয়ে ঢুকব ঘরে,
চোখে তোমার খেয়ে যাব চুমো।
স্বপন হয়ে আঁখির ফাঁকে দেখতে আমি আসব মাকে,
যাব তোমার ঘুমের মধ্যিখানে।
জেগে তুমি মিথ্যে আশে হাত বুলিয়ে দেখবে পাশে,
মিলিয়ে যাব কোথায় কে তা জানে।
পুজোর সময় যত ছেলে আঙিনায় বেড়াবে খেলে,
বলবে ‘খোকা নেই রে ঘরের মাঝে’।
আমি তখন বাঁশির সুরে আকাশ বেয়ে ঘুরে ঘুরে
তোমার সাথে ফিরব সকল কাজে।
পুজোর কাপড় হাতে ক’রে মাসি যদি শুধায় তোরে
‘খোকা তোমার কোথায় গেল চলে’
বলিস, ‘খোকা সে কি হারায়— আছে আমার চোখের তারায়,
মিলিয়ে আছে আমার বুকে কোলে।’