সিতিমা/প্রথম দৃশ্য

উইকিসংকলন থেকে
সিতিমা ~

প্রথম দৃশ্য।

রাজন্তঃপুর-মহারাণীর সঙ্গীত সভা।

মহারাজ ও মহারাণী সিংহাসনে উপবিষ্ট। সিংহাসনের উভয় পার্শ্বে এবং
নিম্নতর আসনে মন্ত্রী, প্রধান সেনাপতি দুর্জ্জয়সিংহ, দ্বিতীয় সেনাপতি
উজ্জ্বলসিংহ অন্যান্য পুরুষ ও রমণী দর্শকরূপে উপস্থিত। রঙ্গমঞ্চে
চন্দ্র, পুষ্পিতা, সিতিমা এবং অল্পবয়স্ক বাদক বাদিকাগণ।
চন্দ্র ও পুস্পিতা নৃত্য করিতেছে সকলে মুগ্ধনেত্রে
দেখিতেছেন।

সকলে। বাঃ বাঃ
মন্ত্রী। এ যেন ইন্দ্রসভায় অপ্সরার নৃত্য!
দুর্জ্জয়। [বিহ্বল ভাবে ] কি সুন্দর। চন্দ্রা যেন উর্ব্বশী!
মহারাজ। [কিঞ্চিত অসহিষ্ণুভাবে ] আজি এই পর্য্যন্তই থাক্‌। উত্তর পশ্চিম হতে অসভ্য শত্রুসৈন্য আমাদের দেশ আক্রমণ করতে প্রস্তুত হয়েছে, তাদের গুপ্তচর প্রতিদিন গিরিপথে ধৃত হচ্চে, এ সংবাদ শুনে আমরা অভিযানের জন্য প্রস্তুত না হয়ে পারিনা। এখন আমোদ আর বিলাসের অবসর নাই। তবু আমাদের মহারাণীর অনুরোধ অগ্রাহ্য ক’রতে না পেরে আমরা তাঁর তালিমের গান বাজনা ও নৃত্যকলা দেখ্‌তে এলাম। কিন্তু তাতে আমাদের লাভ বই ক্ষতি হয় নাই। মহারাণি, যুদ্ধে যাবার পূর্ব্বদিনের এই দৃশ্য গিরিপথের নানা কষ্টের মধ্যে ও আমাদের শ্রান্তি ভুলিয়ে রাখ্‌বে- নিঃশেষে শত্রু বিদায় করে' আবার এই বিশ্রাম সুখভোগ ক’রবার জন্য আমাদের তরবারিগুলিকে ত্বরান্বিত কর্‌বে। কি বল সেনাপতি?

দুর্জ্জয়। মহারাজ ঠিক বলেছেন।
মহারাজ। মহারাণীর তালিম সম্বন্ধে তোমার কি মত মন্ত্রী?
মন্ত্রী। অতি সুন্দর শিক্ষা হয়েছে।
মহারাজ। তাহলে দেবীর অনুমতি নিয়ে আমরা উত্থান করি?
মহারাণী। কুমার উজ্জ্বলসিংহের বোধ হয় কিছুই ভাল লাগেনি?
উজ্জ্বল। মহারাণী আমার নীরবতা থেকে যদি এই অনুমান করে থাকেন, তবে আমায় স্বীকার করতেই হ’ল যে আমার ভাষা অসমর্থ বলেই আমি চুপ করে আছি। যদি মহারাজের এবং মহারাণীর আদেশ হয়, তবে সভাভঙ্গের পূর্ব্বে সখী সিতিমার রচিত নূতন মৃত্যু-সঙ্গীতটি শুনে যাই।
মহারাজ। ঠিক কথা—ঠিক কথা। গাও সিতিমা, তোমার মৃত্যু-সঙ্গীত গেয়ে শুনাও। তুমি গান গাইবার জন্য অনেক কাল বেঁচে থাক, আর আমাদের মৃত্যুর জন্য উদ্ধুদ্ধ কর।
সেনাপতি। সময়োপযোগী সঙ্গীত বটে।
সিতিমা। [করজোড়ে] মহারাজ একটী কণ্ঠ এ গানের পক্ষে যথেষ্ট নয়।বহু কণ্ঠে গাইলেই এ গান আপনার রূপ প্রকাশ করে।
মহারাজ। আচ্ছা তুমি আরম্ভ কর, উজ্জ্বল যোগ দাও, আমরাও সঙ্গে থাক্‌ব।
[ সিতিমার সহিত সকলের গান ]

আমরা মৃত্যু করিনা ভয়
জয় রাজাধিরাজের জয়, জয় জন্মভূমির জয়।

জীবন রক্ষা দেশের লাগি,
দেশ রক্ষায় মরণ মাগি,
লজ্জা হরণ মরণ মাগি–
মৃত্যু অমর কীর্ত্তিময়।
জয় রাজাধিরাজের জয় জয় জন্মভূমির জয়।

দারা ও পুত্র ভগিনী ভাই,
তোমরা রহিলে আমরা যাই,
ফিরি কিনা ফিরি বেদনা নাই
যদি স্বদেশ মুক্ত রয়।
জয় রাজাধিরাজের জয়,  জয় জন্মভূমির জয়।

হর্ষ নিনাদে গগন ভরি
রক্তের বীজ বপন করি,
বৃথাই রক্তক্ষরণ নয়—
মরণ রক্তক্ষরণ নয়।
জয় রাজাধিরাজের জয়,  জয় জন্মভূমির জয়।