সুকুমার রায় সমগ্র রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড)/জীবজন্তর কথা/রাক্ষুসে মাছ

উইকিসংকলন থেকে
পুণ্যলতা চক্রবর্তী, কল্যাণী কার্লেকর সম্পাদিত
(পৃ. ৩০১-৩০২)
রাক্ষুসে মাছ

  বড়ো-বড়ো কুমির হাঙর, তারাই জ্যান্ত মানুষ খায় আমরা তো এই জানি! এক হাত লম্বা নদীর মাছ, তারা যে আবার জানোয়ার দেখলে কামড়ে ধরে এমন কথা তো শুনি নি। আমাদের দেশের নদীতে তো এমন রাক্ষুসে মাছ দেখা যায় না। কিন্তু দক্ষিণ আমেরিকার এমাজন নদীর আশেপাশে এরকম মাছ দেখতে পাওয়া যায়। সে জায়গায় মানুষ যদি জলে, তবে তাকে আধ মিনিট ও জলে থাকতে হয় না, তার মধ্যেই মাছেরা তাকে কামড়িয়ে এমন রক্তারক্তি করে দেয় যে তাকে প্রাণের দায়ে জল ছেড়ে উঠে আসতে হয়। সেদেশের লোকে একে ‘পিরাই’ বলে।

 বুলডগের মতো মুখ মাছটার, তার মধ্যে ছোটো-ছোটো ছুঁচলো দাঁত। একেবারে ক্ষুরের মতো ধারালো। তার উপর মেজাজখানাও চেহারারই উপযুক্ত জলের মধ্যে থেকে এক হাত লাফিয়ে ভাঙার মানুষকে কামড়ে দেওয়া তার পক্ষে কিছুই আশ্চর্য নয়। আর যেখানে কামড়ে ধরে, সেখানের খানিকটা ছিড়ে না আসা পর্যন্ত সে কামড় ছাড়ে না। তার উপর এরা। সব সময় দল বেঁধে ফেরে। হাঙর কুমির যেখানে থাকে সেখানেও নাকি মাছ থাকে, নানারকম জলজ থাকে। কিন্তু ‘পিরাই’-এর আড্ডা যেখানে তার ত্রিসীমানার মধ্যে কোনো প্রাণীর থাকবার জো নেই। সেখানকার জলে যদি গোরু ঘোড়া নামে তবে তারা আর আন্ত ফেরে না। একবার একটা ষাঁড় কুড়ি-পঁচিশ হাত চওড়া একটা নদী পার হতে গিয়েছিল কিন্তু বেচারার আর পার হওয়া হল না। তার আগেই রাক্ষুসে মাছেরা তাকে খেয়ে শেষ করে দিল। এরকম দুর্ঘটনা অনেক জানোয়ারের ভাগ্যেই ঘটে থাকে—তার মধ্যে মানুষও বাদ পড়ে নি। হাজার মাছে একসঙ্গে কামড় দেয় আর এক-এক কামড়ে এক-এক খাবল মাংস উঠিয়ে আনে। দু-চার মিনিটের মধ্যে এক-একটা জানোয়ারকে খেয়ে শেষ করে দেয়।

 কত সময় এমন হয় যে, লোকে নদীতে জল আনতে গেছে হঠাৎ কে তার হাত কেটে নিল। জানোয়ারেরা জল খেতে এসেছে—কট করে তার নাক কেটে গেল। সেদেশের লোকে জানে এ পিরাই মাছের কাণ্ড!

সন্দেশ—আষাঢ়, ১৩২২