স্রোতের গতি/একাদশ পরিচ্ছেদ
একাদশ পরিচ্ছেদ
অমিয়ার সঙ্কোচ
সেদিন বিকাল বেলায় বাহিরে বেড়াইতে যাইবার জন্য অমিয়া একটু সকাল সকাল প্রস্তুত হইয়াছিল। আজ সে একখানি ফুল্দার খয়ের-রঙের ঢাকাই-শাড়ী ও ঐ রঙেরই একটি ব্লাউজ্ পরিয়াছিল। কাণে দুটি মুক্তার দুল ও দু’একটি সৌখীন চুণীপান্নার সেফ্টিপিনও যথা স্থানে বিন্যস্ত হইয়াছিল। এখানে অপ্রয়োজনবোধে কোন সৌখীন জিনিষেরই আবশ্যক হয় না। আজই যে কি এমন প্রয়োজন বোধ হইয়াছিল—তাহা সে নিজেই বলিতে পারে। তাহার মনে যে একটা রঙিন নেশা—ধরিয়াছিল, তাহা কেবল পরিচ্ছদ পরিবর্ত্তনে নহে—কেশ-রচনাতেও অভিজ্ঞ চক্ষের প্রথম দৃষ্টিতেই ধরা পড়িয়াছিল।
বাগানের পথে বাহির হইতেই মীনার সহিত ‘চোখাচোখী’ হইয়া গেল। দালানে মাদুর বিছাইয়া একরাশি বিচিত্র উপকরণ ছড়াইয়া মীনা তখন অভিনিবেশসহকারে চুল বাঁধিতেছিল। সিন্দুর-কৌটা, জলের ঘটি, চুলের দড়ি, চিরুণী, আয়না প্রভৃতি লইয়া—দৌরাত্ম্য করিবার জন্য খোকাবাবু সেখানে উপস্থিত না থাকায়—কেশবন্ধনকারিণী পরম নিশ্চিন্ত মনে চুলে চিরুণী চালাইতে চালাইতে, উঠানে হামান্দিস্তায় গরম-মশলা কুটিতে নিযুক্ত দাসীর সহিত গল্প করিতেছিল। অমিয়াকে প্রস্থানোদ্যতা দেখিয়া মীনা একটুখানি দুষ্ট হাসি হাসিয়া কহিল—“আজ কার মন ভোলাতে এমন মোহিনী বেশ গো রাণী?”
অমিয়ার এ কথায় লজ্জা পাইবার বিশেষ হেতু না থাকিলেও, সে কিন্তু আকণ্ঠ লজ্জার রঙে রাঙিয়া বিজড়িত স্বরে কহিল—“মন-ভোলাবার মানুষ ত ভাই তোমায় ছাড়া আর কাকেও পেলাম না। সাধনা যদি সার্থক হয়ে থাকে, তা’হলে পরিশ্রম মিথ্যে হ’ল না তবু!”
“তাই নাকি! ভাগ্যবানের তপস্যার ফল—অভাগী আমি—বিনা তপস্যাতেই পেয়ে গেলাম তা’হলে?” বলিয়া আঁচলে চাবির গোছা হইতে একটি বিশেষ গঠনের চাবি বাছিয়া লইয়া সিন্দুরে ডুবাইয়া অমিয়ার শুভ্র ললাটতলে ক্ষুদ্র একটি বালারুণের ফোঁটা দিয়া, অকৃত্রিম মুগ্ধ দৃষ্টিতে চাহিয়া মীনা কহিল—“এমন কপালে উঠ্তে না পাওয়া যে সিদুরের অভাগ্য—ভাই! দেখ দেখি, এবার কেমন চমৎকার মানালো?”
অমিয়া তাহার মুগ্ধ দৃষ্টি হইতে মুখ ফিরাইয়া হাসিয়া কহিল—“কোনো কোনো জানোয়ার আছে, যাদের আস্কারা দিলে মাথায় ওঠে। ছোঁয়াচে রোগের কাছ থেকে দূরে থাকাই ভাল—তাতে আর সংক্রমণের ভয় থাকে না। বুঝ্লে?”
“ভয়? বিবাহ-বিদ্বেষিণী নারী-সমিতির সহকারীসম্পাদিকা, এবং পৃষ্ঠপোষিকা—‘নারী-বিদ্রোহ’ প্রণেত্রীর ভয়? তুমি যে আমায় একেবারে অবাক করে দিলে ভাই অমিয়া! সংক্রামক বীজের শক্তি ত তবে দেখ্চি অসাধারণ” বলিয়া কৃত্রিম বিস্ময়ে বিস্ফারিত-চক্ষে চাহিয়া চিন্তান্বিতভাবে পুনরায় কহিল—“ঐ জন্যেই ত ডাক্তারেরা বিধান দেন—টিকে নেবে। তাতে আর ছোঁয়াচের ভয় থাকে না।” কথাশেষে গাম্ভীর্য্য ছাড়িয়া সে এবার প্রাণ খুলিয়া হাসিতে লাগিল।
অমিয়া মুখ ফিরাইয়া কি একটা কথা বলিতে গিয়া বলিল না। আত্মসম্বরণ করিয়া মীনার সহাস্য অনুরোধে আর একটি কথা শুনিয়া যাইবার আহ্বান উপেক্ষা করিয়াই সে কেবল বিলম্ব হইয়া যাইবার হেতু দেখাইয়া তাড়াতাড়ি বাগানের পথে বাহির হইয়া পড়িল।
মীনার তীক্ষ দৃষ্টির তলে দাঁড়াইয়া নিজেকে তাহার আজ যেন বড় দুর্ব্বল—বড় অসহায় মনে হইতেছিল। সে যেন নিজের মধ্যে অপরাধীর কুণ্ঠা অনুভব করিতেছিল। বাগানে শীতের শেষে তখনও অজস্র শীত-ফুলের আমদানী চলিতেছিল। চন্দ্রমল্লিকার গাছগুলি পর্য্যাপ্ত পুষ্পালঙ্কারে ভূষিত হইয়া বর্ণে ও গন্ধে অমিয়ার পুষ্পলুব্ধ চিত্তকে মুগ্ধ ও আবিষ্ট করিয়া তুলিল। নিজের অজ্ঞাতে ধীরে ধীরে সে বাগানের ভিতরেই আসিয়া দাঁড়াইল। এখানকার অনেক গাছই রণেন্দ্রেরে নিজ-হাতের যত্ন ও চেষ্টায় জন্মিয়াছে। ঐ যে ফুলভারনতাঙ্গী লতাটি সহকার অবলম্বনে দুলিয়া দুলিয়া নিজ সৌভাগ্য-গর্ব্ব প্রচার করিতেছে, উহার জন্ম-ইতিহাস নীনার মুখে অমিয়া শুনিয়া লইয়াছে। দেওর-ভাজে বাজি রাখিয়া তাহারা দুইটি লতাগাছ পুঁতিয়াছিল। মীনার গাছটি কোন্ সত্যযুগে মহাপ্রস্থান করিয়াছে, তাহার সাল তারিখ সে নিজেও স্মরণ রাখিতে পারে নাই। কিন্তু বাজি-হারার দণ্ডস্বরূপ প্রতিদ্বন্দ্বীর গাছটিতে জলসেচন করিয়া আসিতেছে যে কতদিন, তাহার হিসাব হয়ত তাহার ডায়েরীর পাতা খুঁজিলে এখনও মিলিতে পারে।
রণেন্দ্রেরে কক্ষের বাতায়ন রুদ্ধ। তাঁহার বা খোকার কথার শব্দ বা হাসির সুর বাতাসে ভাসিয়া আসিতেছিল না। রুদ্ধদ্বার জানালাটির পানে চাহিয়া চাহিয়া অমিয়ার ইচ্ছা হইতেছিল, সেখানকার অধিবাসীদের কোন একটু খবর জানিয়া লয়। খোকাটি এমন অসময়ে ঘুমাইয়া পড়িল নাকি? নহিলে এমন নিঃশব্দ অবস্থা ঘটিতে দেওয়া ত তাহার দ্বারা অকারণে সম্ভব নয়। রণেন্দ্র এখন কি করিতেছেন কে জানে? এ সময় ঘরের জানালাগুলি আঁটিয়া দিয়া চুপচাপ শুইয়া আছেন না কি? না—নিশ্চয়ই বেড়াইতে গিয়াছেন। আচ্ছা, এই অবসরে অমিয়া যদি একবার উহার ঘরখানায় ঘুরিয়া আসে, তাহাতে দোষ হয় কি? কেহই ত এখন এদিকে আসিবে না। অমিয়া কোথা—সে সম্বন্ধে কোন সংবাদ ও ত লইবে না। সকলেই জানে— সে এ সময় বেড়াইতে যায়। অমিয়ার মনে সুমতি ও কুমতির দ্বন্দ্ব বাঁধিল। সুমতি কহিল—“মালিকের অনুপস্থিতিকালে তাঁহার বিনানুমতিতে অনধিকার-প্রবেশে তোমার আবশ্যকই বা কি?”
কুমতি জবাব দিল—“প্রয়োজন এমন গভীর কিছু নয়, কেবল ঘরখানি একবার দেখিয়া শুনিয়া ঘুরিয়া আশা মাত্র।”
সুমতি কহিল—“চুরি করিবে নাকি? প্রয়োজন যদি নাই, তবে পরের ঘরেই বা ঘুরিতে যাওয়া কেন?”
কুমতি কহিল—“চুরির মতলবেই কি ভদ্রলোকে ভদ্রলোকের ঘরে যায়? পড়িবার মত কোন বই টই যদি থাকে—দুই একখানা দেখিয়া শুনিয়া নির্ব্বাচন করিয়া রাখিয়া আসাও ত চলিতে পারে?”
সুমতি কহিল—“বেশ ত! তাহা সাম্না-সাম্নি চাহিয়া লইলেও ত পার—এজন্য অপরাধীর মত এত গোপনতার আশ্রয় গ্রহণ করা কেন?”
কুমতি রাগ করিয়া কহিল—“সে আমার খুসী! এত শত কথার জবাব দিতে আমি কাহারও বাধ্য নহি।”
সুমতি তাহার পথানুসরণে কহিল—“তবে মর!”
যতক্ষণ মনের মধ্যে সুমতি ও কুমতির দ্বন্দ্ব চলিতেছিল, সে সময় অমিয়া বাগানে ঘুরিয়া বাছা বাছা—ফুল দিয়া একটি সুন্দর তোড়া তৈয়ারি করিতে নিযুক্ত ছিল। সাদা ও হলুদ রঙের চন্দ্রমল্লিকার মাঝখানে একটি সবুজ পাতার বেষ্টনীয় মাঝে বৃহৎ মণ্টিকৃষ্টো গোলাপ দিয়া সে তোড়াটিকে সাজাইয়াছিল। গোলাপটি উজ্জ্বল ও মসৃণ। উহার রক্তবর্ণ তাহার দৃষ্টিকে শুধু আকৃষ্ট নহে, মুগ্ধও করিতে ছিল। পুষ্পগুচ্ছটি হাতে করিয়া অমিয়া নিজে তৃপ্ত হইতেছিল না। ভাল জিনিষটি নিজে ভোগ করিয়া তৃপ্ত হয় না—তাহা ভালবাসার পাত্রকে দিতেই সাধ যায়। অমিয়া স্থির করিল, বাড়ী ফিরিয়া এটি সে মীনাকেই উপহার দিবে। মীনা আজকাল যেন কেমন হেঁয়ালীয় ভাসায় কথা কহিতে শুরু করিয়াছে। সে কি অমিয়ার সম্বন্ধে মনে মনে কোন মিথ্যা ধারণা পোষণ করিতেছে নাকি? এটা ত ভাল নয়! অনেক সময় চুপ করিয়া থাকিয়া তাহার তামাসা সহ্য করায় হয়ত সেই উহাকে এ ভাবের প্রশ্রয় দিয়াছে। এখন হইতে একটু সতর্কভাবে চলিতে হইবে ত! ছিঃ—হাসি তামাসার কথা কোন্ দিন সত্যের ছদ্মবেশে কোন অনীপ্সিত স্থলে গিয়া হাজির হইবে বলা ত যায় না কিছু— লোকে শুনিলে ভাবিবে কি? অমিয়ার যে তাহা অপেক্ষা মরণও ভাল ছিল। নাঃ—মীনাকে আর প্রশ্রয় দেওয়া কিছুতেই চলিতেছে না।
মালী কহিল—ছোটবাবু বাড়ী নাই, তিনি ষ্টেশনের দিকে গিয়েছেন। খোকাকে সে এইমাত্র বাড়ীর ভিতর দিয়া আসিল। অমিয়া এ অনুকুল উত্তর আনন্দের সহিতই গ্রহণ করিল।
বাগানের দিকের জানালাগুলি বন্ধ থাকিলেও, ঘরের সাম্নের দরজাটি খোলাই ছিল। রণেন্দ্র বেড়াইতে বাহির হইয়া গিয়াছেন এ সংবাদও সে পাইয়াছে। তবু ঘরে ঢুকিতে সঙ্কোচ যেন কাটিতেছিল না। রণেন্দ্র আসিবার পর এ ঘরগুলিতে সে একদিনও আসে নাই। আজও মনে হইতেছিল—ফিরিয়া যায়। তাহার বুকের ভিতর ঢিপ্ ঢিপ্ করিতেছিল। ঠোঁট শুকাইয়া উঠিতেছিল। চোর যেন চুরি করিতে আসিয়াছে। এই বিচলিত ভাবে সে নিজেই নিজের মনে বিস্ময় বোধ করিল। সংসারকে উপেক্ষার দৃষ্টিতে দেখিয়া দর্পভরে অবলীলায় যে চিরদিন চলিয়াছে, আজ তাহার সারা অঙ্গ জুড়িয়া এ কি দুর্ব্বহ জড়তার আবির্ভাব? সে ত কোন অসদভিপ্রায়ে এখানে আসে নাই! অন্যায় কার্য্যও ত করে নাই কিছু। তবে কেন এ লজ্জা? কিসের জন্যই বা এত সঙ্কোচ?
ঘরে কেহ ছিল না। বিছানায় ছেঁড়া কাগজের স্তূপ— ঘরের মেঝেয় ফুলের পাপড়ি ছড়ান। জুতার একটি পাটি, সাবানের কেস্, কাঠের বল, চুল আঁচড়ান ব্রাস্ এখানে সেখানে ছড়ান থাকিয়া খোকাবাবুর অনতিপূর্ব্বের অবস্থানের সাক্ষ্য প্রদান করিতেছিল। টেবিলের উপর বহিগুলির অবস্থা এতখানি শোচনীয় না হইলেও, সেখানেও তাহার অল্পস্বল্প বিপ্লব সংবাদ প্রচার করিতেছিল। অমিয়া খালি ফুলদানীতে ফুলের তোড়াটি রাখিয়া দিয়া, প্রথমেই মনে করিল ফিরিয়া যাইবার পূর্ব্বে ঘরখানির একটু সংস্কার করিয়া দিয়া যাইবে। বেচারী নারীদ্বেষীর সৌন্দর্য্যবোধ বড় অল্প—খাটের উপর কোট, টেবিলের একাংশে উড়ানী? এ সব গুছাইয়া রাখা যাহার সাধ্য নাই—সে আবার”—যাক্।
ঘরে দিনের আলাে ম্লান হইয়া আসিয়াছিল। অমিয়া বাগানের দিকের জানালা দুটি খুলিয়া দিতেই প্রচুর ফুলের গন্ধ বহন করিয়া এক ঝাপ্টা আলাে ও বাতাস তাহার উপর ঝাঁপাইয়া পড়িল; এবং মুহূর্ত্তে তাহার দ্বিধাক্ষিণ্ণ মনটিকে তৃপ্তির প্রসন্নতায় ভরাইয়া দিল। টেবিলের উপর পাতা-খােলা যে বইখানি উল্টান অবস্থায় পড়িয়াছিল, সেইখানি তুলিয়া লইয়া সে প্রথমে খােলা-অংশে চোক বুলাইয়া রণেন্দ্রেরে পাঠ্য স্থানটুকু দেখিয়া লইল। ঘরে ঢুকিবার সময় তাহার ইচ্ছা ছিল, ঘরখানি একটু দেখিয়া শুনিয়া এটা সেটা নাড়িয়া একটু বা গুছাইয়া দিয়া এমনি সন্তর্পণেই সে ফিরিয়া যাইবে। কিন্তু কার্য্যতঃ তাহা ঘটিল না। কোন্ সময় সেই খােলা বইখানির প্রতি তাহার চিত্ত আকৃষ্ট হইয়া পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা অতিক্রম করিয়া চলিতেছিল, তা যতক্ষণ পর্য্যন্ত আলাের অভাব না ঘটিয়াছিল—সেও বুঝিতে পারে নাই। ছাপার অক্ষর ক্রমে অস্পষ্ট হইয়া যখন আলাের অভাব অনুভূত হইল—পুস্তক পৃষ্ঠা হইতে আগ্রহ-ব্যাকুল চোখের দৃষ্টি উঠাইয়া ঘাড় ফিরাইতে গিয়াই সে দেখিল, দুই হাতে খানকয়েক পুস্তক লইয়া রণেন্দ্র খুসী-মনে ঘরে ঢুকিতে গিয়া, সহসা বাধাপ্রাপ্তের ন্যায় থমকিয়া বাহিরেই দাড়াইয়া পড়িল। তাহার চোখের তারায় বিপুল বিস্ময়ের চিহ্ন ঘন হইয়া ফুটিয়া উঠিল। অন্যমনস্কতায় তাহার জুতার শব্দ পর্য্যন্ত অনুভব করিতে না পারায়, লজ্জা ও সঙ্কোচে বিপন্ন বিব্রত ভাবে অমিয়া চেয়ার ছাড়িয়া উঠিয়া দাঁড়াইয়াছিল। কৈফিয়ৎস্বরূপ সে কেবল একটুখানি ম্লানহাসি হাসিল। রণেন্দ্র কিন্তু তাহার আকস্মিক আগমনের কোন কৈফিয়ৎ চাহিল না। সঙ্কোচ কাটাইয়া অত্যন্ত সহজভাবেই সে ঘরে ঢুকিল। হাতের বই ক’খানি টেবিলের উপর রাখিয়া হাসিমুখে কহিল—“বইগুলো আজকের ডাকে এসে পৌঁছেছে। একটি বন্ধু উপহার পাঠিয়েছেন। ডাকঘরে বসেই প্যাক্ ট্যাক্ খুলে এদের উদ্ধার করে নিয়ে এলাম!”
অমিয়া বই ক’খানির পানে একবার চাহিয়া দেখিল—তখনও সে আত্মস্থা হইতে না পারায়, কোন উত্তর দিল না। রণেন্দ্র তাহার সঙ্কোচ দেখিয়া নিজেই কথা কহিল— “অন্ধকারেই বুঝি পড়্ছিলেন? কি আশ্চর্য্য! বাতিটা জ্বেলে নেন্ নি কেন?” বলিয়া টেবিলস্থিত বাতি ও দেশালাই লইয়া সে আলো জ্বালিয়া দিয়া কহিল—“বোম্বাই থেকে এখনি টেলিগ্রাফ এল, শীঘ্রই আমায় যেতে হবে সেখানে। আপনি এখনো কিছুদিন এখানে থাক্চেন বোধ হয়?”
আর চুপ করিয়া থাকা ভাল দেখায় না। তা ছাড়া— রণেন্দ্রেরে ঐ একটি মাত্র সংবাদে অমিয়ার মনের মধ্যে অনেক ভাবের তরঙ্গ বহিয়া গেল। সে হাসিমুখে তাহার সৌভাগ্য আনন্দ জানাইতে গিয়া—উদ্গত দীর্ঘশ্বাসটাকে চাপিয়া ফেলিল।