হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা (১৯৫১)/চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়/৩১
৩১
রাগ পটমঞ্জরী
আর্য্যদেবপাদাঃ। জহি মণ ইন্দিঅ[প]বণ হো ণ ঠা
ণ জানমি অপা কঁহি গই পইঠা॥ ধ্রু॥
অকট করুণা ডমরুলি বাজঅ
আজদেব ণিরাসে রাজই॥ ধ্রু॥
চান্দরে চান্দকান্তি জিম পতিভাসঅ
চিঅ বিকরণে তহি টলি পইসই॥ ধ্রু॥
ছাড়িঅ ভয় ঘিণ লোআচার
চাহন্তে চাহন্তে সুণ বিআর॥ ধ্রু॥
আজদেবেঁ সঅল বিহরিউ
ভয় ঘিণ দুর ণিবারিউ॥ ধ্রু॥
তমেবার্থং প্রমুদিতং আর্য্যদেবপাদাঃ। প্রতিপাদয়ন্তি—
জহি মণ ইত্যাদি। যস্মিন্ প্রভাস্বরে সংহারমণ্ডলাদিক্রমেণ বিষয়পবনেন্দ্রিয়াদিকং[৪৬ক] নিঃস্বভাবীকরণং। তত্র প্রবিষ্টে(ষে) সতি অপা ইতি। চিত্তরাজস্যোদ্দেশং ন জানামি ক্ব গতঃ।
ধ্রুবপদেন আনন্দং দৃঢ়য়তি—
অকটেতি—আশ্চর্য্যং। করুণেতি সংবৃতিবোধিচিত্তং গুরুসম্প্রদায়াৎ। ডমরুকেতি অ(ম)নাহতশব্দং করোতি। অনাহতং হতং জ্ঞানং বিবুধ্যতে। অতএব আর্য্যদেবপাদাঃ। নিরালম্বেন সর্ব্বধর্ম্মানুপলম্ভযোগেন রাজতে শোভতে।
দ্বিতীয়পদেন বিষয়স্বরূপমাহ—
চান্দেরিত্যাদি[১]। যথা অস্তং গতে চন্দ্রমসি তস্য চন্দ্রিকা তত্রৈব অন্তর্ভবতি। চিঅ ইতি। তথা চিত্তরাজোপি যদা অচিত্ততাং গচ্ছতি প্রভাস্বরং বিশতি তদা তস্য বিকল্পাবলী তত্রৈব লীনা ভবতীতি।
তথাচাগমঃ।
অস্তং গতে চন্দ্রমসীব নূনং
নীরেন্দবঃ সংহরণং প্রযান্তি।
চিত্তং হি তদ্বৎ সহজে [নি]লীনে[২]
নশ্যন্ত্যমী সর্ব্ববিকল্পদোষাঃ॥
তৃতীয়পদেন ভাবস্য নিরংশতামাহ—
ছাড়িল[৩] ইত্যাদি। অতএব ময়া সিদ্ধাচার্য্যেণ ভয়[৪৭]লজ্জাদিকং লোকস্য ব্যবহারঃ পরিত্যক্তঃ। গুরুবচনমার্গনিরীক্ষণেন শূন্যমিতি॥ ভাবং নৈরাত্ম্যরূ[পং] দৃষ্টং।
চতুর্থপদেনাত্মানুশংসামাহ—
আর্য্যদেবেত্যাদি। আর্য্যদেবপাদেন সদ্গুরুপ্রসা[দা]ৎ নৈরাত্ম্যধর্ম্মামুখীকরণে সর্ব্বং সংসারদূষণং বিফলীকৃতমিতি॥ ৩১॥
৩১
রাগ পটমঞ্জরী
আর্য্যদেবপাদানাম্— জহি মণ ইন্দিঅ পবণ হোই ণঠা।
ণ জানমি অপা কঁহি গই পইঠা॥ ধ্রু॥
অকট করুণাডমরুলি বাজঅ।
আজদেব নিরাসে রাজই॥ ধ্রু॥
চান্দরে চান্দকান্তি জিম পতিভাসঅ।
চিঅ বিকরণে তহিঁ টলি পইসই॥ ধ্রু॥
ছাড়িঅ ভয় ঘিণ লোআচার।
চাহন্তে চাহন্তে সুণ বিআর॥ ধ্রু॥
আজদেবেঁ সঅল বিহরিউ।
ভয় ঘিণ দুর নিবারিউ॥ ধ্রু॥
যাহাতে (যে প্রভাস্বর) [শূন্যতায়] (সংহারমণ্ডলাদি ক্রম দ্বারা) মন, ইন্দ্রিয় এবং পবন নষ্ট হইয়া যায়, (সেখানে) আত্মা (চিত্তরাজ) কোথায় গিয়া প্রবিষ্ট হইল, [তাহা] জানিতেছি না। করুণারূপ ডমরু আশ্চর্য্যভাবে বাজিতেছে (গুরুসংপ্রদায়গত সংবৃতিবোধিচিত্ত অনাহতধ্বনি করিতেছে)। [সেই বাদ্য শুনিতে শুনিতে] আর্য্যদেব (সর্ব্বধর্ম্মে) আসঙ্গরহিত হইয়া (নিরালম্বযোগে) বিরাজমান রহিয়াছেন। চন্দ্র (অস্তগত হইলে) চন্দ্রের কান্তি যেমন প্রতিভাসিত হয়, (অর্থাৎ চন্দ্রের সহিত যেমন চন্দ্রকান্তি চলিয়া যায়), চিত্ত বিকরণতা প্রাপ্ত হইলে (প্রভাস্বরে প্রবিষ্ট হইলে, তাহার বিকল্পজালও তখন) সেইখানে ঘুরিয়া প্রবেশ করে (অর্থাৎ লীন হইয়া যায়)। (অতএব আমি) ভয়, লজ্জা ও লোকাচার ছাড়িয়া (গুরুনির্দ্দিষ্ট পন্থা) দেখিতে দেখিতে, বিচার-(পূর্ব্বক জানিলাম যে, ভাবসকল) শূন্য (নৈরাত্মরূপ বটে)। [সবই যখন নৈরাত্মরূপ, তখন] আর্য্যদেব ভয় ও লজ্জা দূরে নিবারণ করিয়াছেন এবং সকল [বস্তুতেই] বিহার করিতেছেন। (যেহেতু নৈরাত্মধর্ম্মে সিদ্ধি লাভ করায় তাঁহার নিকট আর সংসার-দূষণ বলিয়া কিছু প্রতিভাত হয় না)।