হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা (১৯৫১)/চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়/৯

উইকিসংকলন থেকে

রাগ পটমঞ্জরী

কাহ্নুপাদানাম্।  এবংকার দৃঢ় বাখোড় মোড্ডিউ
বিবিহ বিআপক বান্ধণ তোড়িউ॥ ধ্রু ॥
কাহ্নু বিলসঅ আসবমাতা
সহজ নলিনীবন পইসি নিবিতা॥ ধ্রু ॥

জিম জিম করিণা করিণিরেঁ রিসঅ
তিম তিম তথতা মঅ গল বরিসঅ॥ ধ্রু ॥
ছড়গই সঅ[১৫ক]ল সহাবে সূধ
ভাবাভাব বলাগ ন ছুধ॥ ধ্রু ॥
দশবলরঅণ হরিঅ দশ দিসেঁ
বিদ্যাকরি দমকুঁ অকিলেসেঁ॥ ধ্রু ॥

 ঘনানন্দোৎকীর্ণতয়া কৃষ্ণাচার্য্যপাদাশ্চিত্তগজেন্দ্রশব্দ[১] সন্ধ্যাভাষয়া তমেবার্থং উৎপ্রেক্ষয়ন্ত[২] আহুঃ।

 এবংকার ইত্যাদি। একারশ্চন্দ্রা[৩]ভাসং বংকারঃ সূর্য্যঃ উভয়ং দিবারাত্রিজ্ঞানং বাখোড় স্তম্ভদ্বয়ং মর্দ্দয়িত্বা নিরাভাসীকৃত্য বজ্রজাপক্রমেণ। অপরং বিবিধপ্রকারানবধূতীব্যাপকবন্ধন[ং] তোড়িঅ তোড়য়িত্বা এষাং ত্রয়াণাম[৪]নুপলম্ভাসবপানেন প্রমত্ত[ঃ] সন্‌ জ্ঞানগজেন্দ্রকৃষ্ণাচার্য্যচরণাঃ। নলিনীবনং মহাসুখকমলং কৃত্বা নির্ব্বিকল্পাকারে ক্রীড়ন্তীতি।

 তথাচার্য্য নাগার্জ্জুনপাদাঃ

বাহ্যং যত্তদসৎ স্বভাববিরহাৎ জ্ঞানঞ্চ বীক্ষ্য চ্যবৎ
শূন্যং যৎ[৫] পরিকল্পিতং তদপি চাশূন্যং মতং কেবলম্।
ইত্যেবং পরিভাব্য ভাববিভবং নির্ব্বিন্নতত্ত্বৈকধী-
র্মায়ানাটক[নাট]নৈকনিপুণো যোগীশ্বরঃ ক্রীড়তি॥

 পদান্তরে[১৬]ণ তমেবমাহুঃ। জিম জিমেত্যাদি।

যথা বাহ্যকরী করিণ্যামীর্ষ্যামদং বহতি। তদ্বদ্ভগবতীনৈরাত্মাসঙ্গতয়া চিত্তগজেন্দ্রকৃষ্ণাচার্য্যপাদাঃ তথতামদং প্রবর্ষন্তি।

 অতএব তৃতীয়পদেন ভাবানাং স্বরূপোপলব্ধিমাহুঃ।

 ছড়িগই[৬] ইত্যাদি। অণ্ডজা জরায়ুজা উপপাদুকা[ঃ] সংস্বেদজা দেবাসুরাদিপ্রকৃতিকাঃ। সর্ব্বে ভাবাঃ স্বভাবেন পরিশুদ্ধা যোগীন্দ্রস্য। বালাগ্রমপ্যপরিশুদ্ধং কিঞ্চিন্ন বিদ্যতে।

 তথাচ মধ্যমকশাস্ত্রঃ

নাপনেয়মতঃ কিঞ্চিৎ প্রক্ষেপ্তব্যং ন কিঞ্চন।
দ্রষ্টব্যং ভূততো ভূতং ভূতদর্শী বিমুচ্যতে॥

 চতুর্থপদেন পরিপক্বকুশল[৭]লক্ষণমাহুঃ—

 দশবলেত্যাদি দশবলবৈশারদ্যাদিগুণযুক্তং তথতারত্নং দশদিগ্‌ব্যাপকতয়া অনুভবাভ্যাসবলেন হারিতমস্মাকং। অতএব তথতারত্নপ্রভাবেণাবিদ্যাকরীন্দ্রস্যানাসঙ্গেন(ণ) দমনং (মদনং) কুরু॥ ৯॥

  1. শব্দ শব্দের পর একটি অনুস্বার বাড়তি আছে।
  2. পুথি, উৎপ্রেক্ষায়ন্ত।
  3. পুথি, চন্দ্রাসভাসং।
  4. পুথি, ত্রয়ানাং মনু।
  5. যৎ শব্দের পর একটি বৃথা তৎ শব্দ আছে।
  6. গানে ছড়গই; টীকায় ছড়িগই।
  7. পুথি, কশলং।

রাগ পটমঞ্জরী

কাহ্নুপাদানাম্— এবংকার দৃঢ় বাখোড় মোড্ডিউ।
বিবিহ বিআপক বান্ধণ তোড়িউ॥ ধ্রু ॥
কাহ্নু বিলসঅ আসবমাতা।
সহজনলিনীবন পইসি নিবিতা॥ ধ্রু ॥
জিম জিম করিণা করিণিরেঁ রিসঅ।
তিম তিম তথতামঅগল বরিসঅ॥ ধ্রু ॥
ছড়গই সঅল সহাবে সূধ।
ভাবাভাব বলাগ ন[া]ছুধ॥ ধ্রু ॥
দশবলরঅণ হরিঅ দশদিসেঁ।
[অ]বিদ্যাকরিকুঁ দম অকিলেসেঁ॥ ধ্রু ॥

 একার (চন্দ্রনাড়ী) ও বংকার[ব্যাখ্যা ১] (সূর্য্যনাড়ীরূপ দুইটি) দৃঢ় স্তম্ভ (বজ্রজপক্রমদ্বারা) মর্দ্দিত করিয়া এবং (অনবধূতিকারূপ) বিবিধপ্রকার ব্যাপক বন্ধন ছিন্ন করিয়া, (এই তিনের অনুপলম্ভরূপ) আসবপানে প্রমত্ত (জ্ঞানগজেন্দ্র) কৃষ্ণাচার্য্য ক্রীড়া করিতে লাগিলেন এবং [ক্রমে] সহজরূপ পদ্মবনে (মহাসুখকমলে) প্রবেশপূর্ব্বক নির্বৃতি লাভ করিলেন (নির্ব্বিকল্পাকারে ক্রীড়াপরায়ণ হইলেন)। (বাহ্য জগতের করী) যেমন যেমন করিণীকে দেখিয়া ঈর্ষামদ বহন করে, (ভগবতী নৈরাত্মার সঙ্গ লাভ করিয়া চিত্তগজেন্দ্র কৃষ্ণাচার্য্য) সেইরূপ তথতামদধারা (তথাগতের ঐশ্বর্য্য) বর্ষণ করিতে লাগিলেন। (দেব, অসুর, মনুষ্য প্রভৃতি) ষড়্গতিশীল ভাবসকল (তখন যোগীন্দ্রের নিকট) স্বভাবতই পরিশুদ্ধ বলিয়া উপলব্ধ হইল। ভাব এবং অভাব, (উভয়ের) কেশাগ্র (মাত্রও) অশুদ্ধ উপলব্ধ হইল না। দশ দিকে [বিস্তৃত] দশবলরত্ন (তথতারত্ন) (আমাদের অবিদ্যাজনিত অনুভবের অভ্যাসবলে) হারাইয়া গিয়াছে। (অতএব তথতারত্নের প্রভাবে) অবিদ্যারূপ করীকে অক্লেশে দমন কর।

  1. একার বকার, চন্দ্র সূর্য্য, দিবা রাত্রি, এই সব শব্দ দ্বারা দ্বন্দ্বাত্মক বিপরীত জ্ঞানকে লক্ষ্য করা হইয়াছে। দ্বন্দ্বাত্মক জ্ঞানই সংসারবন্ধনের প্রধান কারণ, এই জন্য উহাকে ‘দৃঢ় স্তম্ভ’ বলা সঙ্গতই হইয়াছে। পরম তত্ত্বকে এই জন্য ‘দ্বন্দ্বাতীত’ বলা হয়। নাড়ী অর্থে জ্ঞানপ্রবাহ।